বিদ্যাসাগর ও ডিরােজিও বা ইয়ংবেঙ্গল-এর অবদান আলােচনা করাে।

বিদ্যাসাগর ও ডিরােজিও বা ইয়ংবেঙ্গল-এর অবদান আলােচনা করাে।
উত্তর : ভূমিকা : শুরুতেই এই বলা যায় যে বিদ্যাসাগর সারাজীবন ধরেই সমাজের বহুমুখী সংস্কারে ব্রতী ছিলেন। নারীদের উন্নতির জন্য তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি বিভিন্ন কুপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন।
বিদ্যাসাগরের অবদান :
সমাজসংস্কার : সমাজ সংস্কার আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের অবদান বিশেষ স্মরণীয়। বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিধবা বিবাহ, জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা প্রভৃতি রােধ করেন।
১. বিধবা বিবাহ : ১৮৫৬ খ্রি. ২৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন নিষিদ্ধ হয়। দরিদ্র বিধবাদের সাহায্য করার জন্য বিদ্যাসাগর ‘হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড গঠন করেন এবং তিনি নিজের পুত্রের সঙ্গে একজন বিধবা কন্যার বিবাহ দেন।
২. বহু বিবাহ : বহু বিবাহ বন্ধ করার জন্য বিদ্যাসাগর সচেষ্ট হন। এইজন্য তিনি ১৮৭১ খ্রি. দুটি পুস্তক প্রকাশ করেন।
৩. বাল্য বিবাহের প্রতিবাদ : বাল্য বিবাহ শাস্ত্রসম্মত হলেও তা কোনমতে যুক্তিযুক্ত নয়। বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে ১৮৬০ খ্রি. ব্রিটিশ সরকার একটি আইন পাস করে মেয়েদের বিবাহের বয়স কম পক্ষে ১০ বছর করেন।
৪. সংস্কার কলেজে ভর্তির বৈষম্য দূর করা : সংস্কৃত কলেজে কেবল ব্রাম্মণ ও বৈদ্য পরিবারে সন্তানরা শিক্ষা গ্রহণের সুযােগ পেত। বিদ্যাসাগর এই প্রথার অবসান ঘটায়।
৫. শিক্ষকদের জন্য নিয়ম : কলেজে শিক্ষকদের যাওয়া আসার নির্দিষ্ট নিয়ম
প্রচলন করেন।
৬. ছুটির তালিকা : হিন্দু ধর্মে তিনিও শুভদিন পরিবর্তনে প্রতি রবিবার ছুটি দেওয়ার প্রথা প্রচলন করেন।
শিক্ষা প্রসার : বিদ্যাসাগর শিক্ষা বিস্তারের জন্য বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন।
১. মডেল স্কুল : তিনি নিজ ব্যয়ে বাংলার বিভিন্ন জেলায় ২০টি মডেল স্কুল স্থাপন করেন।
২. স্ত্রী শিক্ষার বিস্তার : ১৮৪৯ খ্রি. কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। নারীশিক্ষা বিস্তার করার জন্য তিনি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেন। বাংলার বিভিন্ন স্থানে ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
৩. পুস্তক রচনা : শিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি কিছু পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। উনিশ শতকে বঙ্গদেশে একদল জ্ঞানী মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরােজিও ও তার ছাত্র গােষ্ঠী।
নব্যবঙ্গ দল তৈরি : ডিরােজিও ছিলেন হিন্দু কলেজের শিক্ষক। হিন্দু কলেজে থাকাকালিন তিনি ওই কলেজের ছাত্রদের নিয়ে দল গঠন করেন যার নাম নব্যবঙ্গ গােষ্ঠী।
ইয়ংবেঙ্গলের সদস্য : তিনি যে ইয়ংবেঙ্গল দল গঠন করেছিলেন তার সদস্যরা হলেন—শিবচন্দ্র দেব, রামতনু লাহিড়ি, রামগােপাল ঘােষ, প্যারিচঁাদ মিত্র প্রমুখ। অ্যাকাডেমিক অ্যাসােসিয়েশন গঠন : ডিরােজিও তার অনুগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরি করেন যা অ্যাকাডেমিক অ্যাসােসিয়েশন নামে খ্যাত। এটি মানিকতলার শ্রীরামকৃয়ের বাগান বাড়িতে এই পাঠচক্রটি গঠন করেন (১৮২৮ খ্রি.)।
পত্রিকা প্রকাশ : ডিরােজিও নিজে ‘হসপেরাস’ ও ‘ক্যালকাটা লিটেরারি গেজেট নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং নানান কুসংস্কারের লক্ষে তার অনুগামিরা পার্থেনন’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থন ও রক্ষণশীল :
হিন্দু সমাজকে আক্রমণ : ডিরােজিও মনে করেন একমাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তনই ভারতবর্ষকে প্রগতির পথ দেখাতে পারবে। তাই তিনি তার অনুগামীদের সঙ্গে চিন্তাবাদিদের মিল ঘটান। ডিরােজিও নগ্নভাবে হিন্দু সমাজকে আক্রমণ করেন এবং রক্ষণশীলদের চাপে ডিরােজিওকে হিন্দু কলেজ থেকে বহিস্কার করেন।
শিক্ষা সংস্কার : ১৮৫১ খ্রি. সংস্কৃত কলেজ অধ্যক্ষ নিযুক্ত হওয়ার পর বিদ্যাসাগর শিক্ষা সংস্কার কাজে হাত দেন।