বাংলার সশত্র বিপ্লবী আন্দোলনের বিবরণ দাও।

বাংলার সশত্র বিপ্লবী আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উত্তর : বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই সময় বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির প্রতিষ্ঠা, অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ শুরু হয়।
অনুশীলন সমিতি : বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের প্রসারের ক্ষেত্রে অনুশীলন সমিতি সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বিপ্লবী সতীশ বসু ও প্রমথনাথ এই দুই ব্যস্তির সহায়তায় কলকাতার মদন মিত্র লেনে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে কুস্তি, শরীর চর্চা, চরিত্রগঠন প্রভৃতির সঙ্ঞো গোপনে বিপ্লবী কার্যকুম চলত  বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহি, চট্টগ্রাম, রংপুর প্রভৃতি জেলায় এই সমিতির শাখা গড়ে ওঠে।
অন্যান্য সমিতি ও যুগান্তর দল : বিপ্লবী ভাবধারা প্রচারের উদ্দেশ্যে বারীন ঘোষ ও উপেন্দ্রনাথ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর” পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে যুগান্তর দল গঠিত হয়। এই দলের সদস্যরা পূর্ববঙ্জা ও আসামের অত্যাচারী ছোটোলাট র্যামফিন্ড কুলার ও বাংলার গভর্নর আ্যানডু ফ্রেজারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। যুগান্তর দল ছাড়াও এইসময় বাংলার আত্মান্নতি সমিতি, ব্রতী সমিতি, সুহৃদ সমিতি প্রভৃতি কার্যকলাপ চালিয়ে যায়।
বুড়িবালামের যুদ্ধ : সশস্ত্র অভ্যুথানের পরিকল্পনা করে বাঘা যতীন জার্মানি থেকে তিনটি অস্ত্র বোঝাই জাহাজ বাংলায় আনার ব্যবস্থা করেন। ওড়িশার বালেশ্বরে আগত মাভেরিক জাহাজের অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাঘাযতীন, চিত্তপ্রিয়, মনোরঞ্জন নীরেন প্রমুখ ব্যক্তিরা বালেশ্বরে পৌছান। গোপনে খবর পায় পুলিশ তারপর উভয়ের মধ্যে ব্যাপক গুলির লড়াই চলে। ওই লড়াইয়ের পর কয়েকজন ধরা পড়ে তাদের কারও ফীসি এবং কারও কারাদণ্ড হয়।

চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন : মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ১৮ এপ্রিল, চট্টগ্রামের সরকারি অস্ত্রাগার লুষ্ঠন করেন। এই অভিযানে সূর্য সেনের সহযোগী ব্যক্তিরা হলেন নির্মল সেন, অস্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, অনস্ত সিংহ ইত্যাদি ব্যস্তিবর্গরা। ওই লু্ঠিত অস্ত্র নিয়ে বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। এখানে পুলিশের সঙ্গে তুমুল গুলির লড়াইয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর ৭০-১০০ জন এবং বিপ্লবীদের ১২ জনের মৃত্যু হয়। পরে সূর্য সেন ধরা পড়ে এবং বিচারে তার ফীসি হয়।

ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ : প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে শাস্তি চক্রবর্তী কালিকিংকর দে প্রমুখ সশস্ত্র বিপ্লবীদের প্রকাশিত দল ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে। সঙ্গে সঙ্ঞো পুলিশ ও পালটা আক্রমণ চালালে গ্রেফতার
হবার আগেই প্রীতিলতা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। 
উপসংহার : পরিশেষে উল্লেখ্য সরকারি দমননীতি, অত্যাচার এবং বিপ্লবীদের মধ্যে মতপার্থক্য, বিশ্বাসঘাতকতা ও গোষ্ঠিদ্বন্দ্ের কারণে আন্দোলন শিথিল হয়ে পড়লেও বিপ্লবীদের দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ এবং কার্যকলাপে ব্রিটিশ সরকার সশস্ত্র হয়ে ওঠে এবং বিপ্লবীরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এবং পরবর্তীকালে ভারত ব্রিটিশের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।