মাস্টারদা সূর্য সেনের বিপ্লীবী জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো। পাঞ্জাবেরসশন্র বিপ্লবী আন্দোলনের বিবরণ দাও।

মাস্টারদা সূর্য সেনের বিপ্লীবী জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো। পাঞ্জাবের সশন্র বিপ্লবী আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উত্তর : ভূমিকা : মাস্টারদা সূর্যসেন ছিলেন এমনই একজন ব্যস্তি যিনি সংসারের মায়াজালে নিজেকে বন্দি না রেখে দেশমাতার উদ্দেশ্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করন। বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন চট্টোগ্রাম বিদ্রোহের মুখ্য নায়ক “মাস্টারদা’ সূর্য সেন। আইন অমান্য আন্দোলনের সময় সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিদ্রোহের ঘটনা সমগ্র ভারতবর্ষে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। মাস্টারদা বহরমপুর কৃয়নাথ কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করার পর চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে বিপ্লবী দল গঠনের উদ্যোগ নেন। এই সময় তার সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অস্বিকা চক্রবর্তী, নগেন্দ্রনাথ সেন, চার্বিকাশ দত্ত, অনুরূপ ঘোষ, অনস্ত সিংহ প্রমুখ তাদের নিয়ে সূর্য সেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি নামে সশস্ত্র বিপ্লবী দল গড়ে তোলেন।

পরিকল্পনা : সূর্য সেন-এর পরিকল্পনা ছিল–চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার  টেলিফোন এবং টেলিগ্রামের অফিস ধ্বংস করা, চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীর খাঁটি দখল করা এবং ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে ইংরেজদের বন্দি করা।

সূর্যসেনের বিপ্লবী জীবনের কার্যকলাপ : সূর্য সেনের গুণ্ড সমিতির সদস্যরা ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে রেলকর্মীদের বেতন নিয়ে যাবার সময় ইংরেজদের কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকা ছিনতাই করে। সূর্য সেনের নেতৃত্বে তার অনুগামীরা পুলিশ কমিশনার টেগার্ট সাহেবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা ফীস হয়ে যায় এবং সূর্য সেনের বেশ কয়েকজন সহযোগী ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে ধরা পড়ে যান কিন্তু সূর্যসেন সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন। দেশমাতার মুস্তির উদ্দেশ্যে বাংলার প্রতিভাবান যুবকরা যেভাবে নিজদের জীবন উৎসর্গ করেছিল তা স্বাধীন ভারতবর্ষকে মহিমান্বিত করেছে। সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুষ্ঠনের ঘটনা ছিল চমকপ্রদ ও প্রশংসনীয়।

পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন :
ভূমিকা : বিংশ শতকে পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দেলনের ব্যাপক প্রসার ঘটে যা ব্রিটিশ সরকারের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। লালা হরদয়াল অজিত সিং, সুফি অন্বাপ্রসাদ, রাসবিহারী বসু প্রমুখ বিপ্লবীর উদ্যোগে পাঞ্জাব শহর বিপ্লবের অগ্নিকৃণ্ডে পরিণত হয়। এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল মহারাষ্টে কিন্তু ধীরে ধীরে তা পাঞ্জাবের ব্যাপক আকার ধারণ করে।

সাহারানপুর গুপ্ত সমিতি : প্রবাসী বাঙালি জে এম চট্টোপাধ্যায় ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে পাঞ্জাবের সাহারানপুরে একটি বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি গড়ে তোলেন। পাঞ্জাবে বিপ্লবী আন্দোলন শুরু করেন। এইভাবে পাঞ্জাবে বিপ্লববাদ ভূমিষ্ঠ হয়। এই আন্দোলনে যে সব বিপ্লবীরা যোগদান করেন তারা হলেন লালা হরদয়াল, সর্দার অজিত সিং, সুফি অস্বাপ্রসাদ প্রমুখ ব্যস্তিবর্গরা। অজিত সিং ও অন্বাপ্রসাদ কয়েকটি বিপ্লবী পত্রিকা প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল “স্বরাজ” “ঝিঙের-শিয়াল’ প্রভৃতি

লালা হরদয়ালের ভূমিকা : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের বৈপ্লবীক আন্দোলনের এক বিশিষ্ট নেতা ছিলেন লালা হরদয়াল। তিনি পাঞ্জাবে এটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বৈপ্লবিক কার্যকলাপ শিক্ষা ভারতীয় বিপ্লবীদের সহায়তায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার সানফ্রান্সিকো শহরে “গদর পার্টি” প্রতিষ্ঠা করেন।

রাসবিহারী বসুর ভূমিকা : পাঞ্জাবসহ সারা উত্তর ভারতে বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনা করেন প্রখ্যাত বিপ্লবী রাসবিহারী বসু । রাসবিহারীর পরিচালনা অনুযায়ী পাঞ্জাবের সহকারি পুলিশ কমিশনার গর্ডনকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাহোরের লরেন্স গার্ডেনে বিপ্লবীরা বোমা রাখে। তিনি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপক এক সিপাহী বিদ্রোহের পরিকল্পনা করেন। তার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় এবং তিনি জাপানে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি প্রবাসি ভারতীয়দের নিয়ে আজাদ্‌-হিন্দ বাহিনী গঠন করেন।

উপসংহার : পরিশেষে উল্লেখযোগ্য পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের দেশপ্রেম আত্মত্যাগ ও কার্যকলাপের দেশবাসির মনে ব্রিটিশ বিরোধী উদ্দীপনার সঞার করে। পাঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ভরেত ব্রিটিশ শাসনের ভীত কীপিয়ে দেয়। এই বিপ্লবী চেতনা থেকে পরবর্তঁকালে জন্ম নেয় বামপন্থী আন্দোলন যা ভারতকে পরাধীনতার শৃঙ্খলা থেকে মুস্ত করে স্বাধীনতার সিংহদ্বারে টেনে এনেছিল।