জাতীয় চেতনার প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা কী ছিল ?

 জাতীয় চেতনার প্রসারে হিন্দুমেলার ভূমিকা কী ছিল ?
উত্তর : ভূমিকা : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর যে সমস্ত গৌরবোজ্জ্বল দিক ভারতবাসীকে বিশেষভাবে উদ্দীপিত করেছিল, তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের “হিন্দুমেলা’ নামক একটি সংগঠন স্থাপন।
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকাল : ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে রাজনারায়ণ বসু এবং নবগোপাল মিত্রেরা কলকাতা হিন্দুমেলা স্থাপন করেন।
নামকরণের কারণ : প্রধানত হিন্দুদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল বলে এই সম্মেলনে নাম হয়েছিল হিন্দুমেলা।
উদ্ভব : হিন্দুমেলা সংগঠনে কলকাতার ঠাকুর বাড়ির প্রত্যক্ষ অবদান ছিল। এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে নবগোপাল মিত্র “ন্যাশনাল পেপার” নামে  একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকায় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে রাজনারায়ণ বসু একটি প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবটির শিরোনাম ছিল (বাংলার শিক্ষিত দেশীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষের জন্য একটি সমিতি গঠনের প্রস্তাব প্রেসপেক্টাস অব এ সোসাইটি ফর প্রমোশান অব ন্যাশনাল ফিলিং আ্যামোঙ্া দ্য এডুকেটেড নেটিভস অব বেঙ্গল |) মূলত এই প্রস্তাব থেকেই হিন্দুমেলার উদ্তব।
হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল : (১) দেশবাসীকে স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করা। (২) দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধের স্টার করা। (৩) হিন্দু জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করা। (8) স্বদেশি আদর্শে সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করা।
কার্যক্রম : হিন্দুমেলার অন্যতম কাজ হিসাবে নবগোপাল মিত্র সদস্যদের ব্যায়াম, লাঠিখেলা, কুস্তি প্রভৃতি শিক্ষা দানের ওপর গুরুত্ব দেন। আর এই উদ্দেশ্যই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে নবগোপাল মিত্র ন্যাশনাল জিমনেশিয়াম’ নামক শারীরশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পাশাপাশি এই সংগঠনটিতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটানোর গোপন প্রয়াস চালানো হয়।

উপসংহার : উপরিলিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগরণ ও জাতীয়তাবাদী মনোভাবের জাগরণের পিছনে হিন্দুমেলার অবদান অপরিসীম।