মাধ্যমিক ইতিহাস উত্তর সহ সাজেশন ফ্রী | Madhyamik History suggestion 2021

সপ্তম অধ্যায়: বিংশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্রী, প্রান্তিক জনগােষ্ঠীর আন্দোলন – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালােচনা গঠন হল –

১. বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : প্রশ্নমান-১

১। প্রথম যিনি বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন।
ক) সতীশচন্দ্র মুখােপাধ্যায়
খ) কৃষ্ণ কুমার মিত্র
গ) শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু
ঘ) রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী
২। ভারত “স্ত্রী মহামণ্ডল” স্থাপিত হয়েছিল –
ক) ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে  খ) ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে   ঘ) ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে
৩। নারী সত্যাগ্রহ সমিতি গড়ে তুলেছিলেন –
ক) বাসন্তী দেবী   খ) লীলা নাগ
গ) কল্পনা দত্ত    ঘ) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
৪। গান্ধিজি যখন ডান্ডি অভিযান করেছিলেন তখন মােট স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল –
ক) ৭৫ জন
খ) ৭৮ জন
গ) ৮০ জন
ঘ) ৮২ জন
৫। ভারতের প্রথম ছাত্রী।
ক) মুক্তি সংঘ           খ) আনন্দ সংঘ
গ) দিপালী ছাত্রীসংঘ   ঘ) সেবা সংঘ
৬। ১৯৩০-৩১ খ্রিস্টাব্দে ডিনামাইট ষড়যন্ত্রে যিনি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন,
ক) লক্ষ্মী স্বামীনাথন
খ) কল্পনা দত্ত।
গ) লীলা নাগ
ঘ) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
৭। যিনি বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’ নামে খ্যাত ছিলেন
ক) মাতঙ্গিনী হাজরা খ) কল্পনা দত্ত।
গ) বীণা দাস          ঘ) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
৮। যাকে বিপ্লববাদের জননী বলা হয় –
ক) মাতঙ্গিনী হাজরা, খ) ভগিনী নিবেদিতা
গ) মাদাম কামা        ঘ) সরােজিনী নাইডু
৯। কোন প্রতিষ্ঠানকে ‘গােলদিঘির গােলামখানা’ বলা হত –
ক) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে
খ) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে
গ) ফোর্টউইলিয়াম কলেজকে
ঘ) এশিয়াটিক সােসাইটিকে
১০। লাবণ্যলতা চন্দ যে আন্দোলনের নেত্রী ছিলেন।
ক) বঙ্গভঙ্গবিরােধী আন্দোলন
খ) অসহযােগ আন্দোলন
গ) আইনঅমান্য আন্দোলন
ঘ) ভারতছাড়াে আন্দোলন
১১। ঢাকার মুক্তি সংঘ’-এর সংগঠক ছিলেন-
ক) দীনেশ গুপ্ত   খ) হেমচন্দ্র ঘোষ
গ) মৃগেন দত্ত    ঘ) মাস্টারদা সূর্যসেন
১২। স্ট্যানলি জ্যাকসনকে সমাবর্তন উৎসবে যিনি গুলি করেছিলেন –
ক) কল্পনা দত্ত              খ) বীণা দাস
গ) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার   ঘ) লীলা নাগ
১৩। রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানে বিনয়-বাদল-দীনেশ যাকে হত্যা করেছিলেন –
ক) হাডসনকে   খ) কিংসফোর্ডকে
গ) সিম্পসনকে  ঘ) লােম্যানকে
১৪। রশিদ আলি দিবস পালিত হয় –
ক) বােম্বাইতে
খ) কলকাতায়
গ) ঢাকায়
ঘ) দিল্লিতে
১৫। প্রাচীন ভারতে অস্পৃশ্যদের বলা হত –
ক) তৃতীয় বর্ণ   খ) চতুর্থ গােষ্ঠী
গ) পঞ্চম বর্ণ   ঘ) পঞ্চম জাতি
১৬। ‘গুলামগিরি’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন
ক) বি আর আম্বেদকর   খ) পি সি যােশী
গ) মহাত্মা গান্ধি           ঘ) জ্যোতিবা ফুলে
১৭। “ভাইকম সত্যাগ্রহ সংঘটিত হয়েছিল –
ক) কেরলে            খ) মালাবার উপকূলে
গ) তামিলনাড়ুতে     ঘ) অন্ধ্রপ্রদেশে
১৮। আম্বেদকর যে সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন –
ক) নমঃশুদ্র    খ) ইজাভা
গ) মাহার        ঘ) চামার।
১৯। নমঃশূদ্রদের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন হল –
ক) মতুয়া মহাসংঘ
খ) দলিত সংঘ
গ) দলিত সংগঠন
ঘ) নমঃশূদ্র সমিতি
২০। বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসােসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠিত হয় –
ক) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে    খ) ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে     ঘ) ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে
উ: ১(খ), ২(খ), ৩(ক), ৪(খ), ৫(গ), ৬(খ), ৭(খ), ৮(গ), ৯(ক), ১০(গ), ১১(খ), ১২(খ), ১৩(গ), ১৪(খ), ১৫(ঘ), ১৬(ঘ), ১৭(ক), ১৮(গ), ১৯(ক), ২০(ঘ)।

 


অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও : দুৈ এককথায়)

১। স্বদেশী আন্দোলনকালে স্বদেশভূমিকে কার সঙ্গে তুলনা করা হয়?
 উ: মায়ের সঙ্গে।
২। ভারতে প্রথম কবে আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়?
   উ: ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে।
৩। সরলা দেবী চৌধুরানী যে নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার নাম কী?
   উ: ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল।
৪। ওমেন্স ইন্ডিয়া অ্যাসােসিয়েশন’ কত খ্রিস্টাব্দে গড়ে উঠেছিল?
 উ: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে।
৫। বয়কট’ এর প্রস্তাব কোন পত্রিকায় প্রথম প্রচার করা হয়?
   উ: সঞ্জীবনী পত্রিকায়। .

৬। বাংলায় ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ কার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
 উ: সরলা দেবী চৌধুরানী।
৭। কবে বাংলার নারীসমাজ ‘অরন্ধন দিবস পালন করেছিলেন?
   উ: ১৬ অক্টোবর, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে।
৮। “রাখিবন্ধন’ প্রথম উদযাপিত হয় কবে?
   উ: ১৬ই অক্টোবর, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে।
৯। ভারতের রাজনীতিতে ‘গান্ধীযুগ’ কবে থেকে শুরু হয়?
 উ: ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে।
১০। কোন মিশন ভারতে এলে নারীরা ভােটাধিকার দাবী করেছিল?
উ: মন্টেগু-চেমসফোর্ড।

১১। ভারতের কোন আন্দোলনে প্রথম গান্ধিজির ডাকে নারীরা সাড়া দেয়?
   উ: রাওলাট সত্যাগ্রহে।
১২। রাওলাট সত্যাগ্রহ ভারতে কবে অনুষ্ঠিত হয়?
   উ: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে।
১৩। বাসন্তী দেবী ও সুনীতি দেবী কোন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
উ: অসহযােগ আন্দোলনে।
১৪। বাসন্তী দেবী কে ছিলেন?
 উ: চিত্তরঞ্জন দাসের পত্নী।
১৫। “বি আম্মা’ নামে কে পরিচিত ছিলেন?
   উ: আবিদা বানু।

১৬। গান্ধিজির ‘ডান্ডি’ অভিযান কবে শুরু হয়?
উ: ১২ মার্চ, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে।
১৭। ধরসনা লবণ সত্যাগ্রহ কে নেতৃত্ব দেন?
  উ: সরােজিনী নাইডু।
১৮। বােম্বাইতে লবণ উৎপাদন কেন্দ্র আক্রমণে কে নেতৃত্ব দেন?
 উ: কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়।
১৯। সত্য বালা দেবী ও আশালতা সেন কোন জাতীয় আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন?
   উ: আইন অমান্য আন্দোলন।
২০। “গান্ধি বুড়ি’ নামে কে পরিচিত ছিলেন?
 উ: মাতঙ্গিনী হাজরা।

২১। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কত খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়?
 উ: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে।
২২। ভগিনী সেনা’ কোথায় সংঘটিত করা হয়েছিল?
 উ: মেদিনীপুরের তমলুক।
২৩। ভারতছাড় আন্দোলনে ‘ভয়েস অব ফ্রিডম রেডিও’কে চালাতেন?
 উ: উষা মেহতা।
২৪। গান্ধিজির ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে এই আদর্শকে রেডিও ট্রান্সমিটার এর মাধ্যমে প্রচার করতেন কে?
   উ: উষা মেহতা।
২৫। অরুণা আসফ আলি ভারতের কোন অঞ্চলে ভারতছাড়াে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
 উ: মুম্বাইতে।

২৬। ভারতছাড়াে আন্দোলনে কোন নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন?
 উ: কনকলতা বড়ুয়া।
২৭। ভারতছাড়ড়া আন্দোলনে এক জন দলিত নেত্রীর নাম লেখাে?
উ: শান্তাবাঈ ভালেরাও।

২৮। কোন বিদেশিনি ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন?
উঃ ভগিনী নিবেদিতা।
২৯। কে ভগিনী নিবেদিতাকে ভারতের বিপ্লববাদের উদগাতা বলেছেন?
 উ: ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত।
৩০। কোন বিপ্লবী নারীর হাতে বাংার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসন আক্রান্ত হন?
 উ: বীণা দাস।

৩১। “জয়শ্রী’ পত্রিকা কে প্রকাশ করেন?
 উ: লীলা নাগ।
৩২। লীলা নাগ প্রতিষ্ঠিত ভারতের সর্বপ্রথম ছাত্রী সংগঠনের নাম কী?
উ: দিপালী ছাত্রী সংঘ।
৩৩। ভারতের প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহীদ কে ছিলেন?
 উ: তিলতা ওয়াদ্দেদার।
৩৪। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বিপ্লবী জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার নাম বল।
 উ: চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন।
৩৫। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ওপর কল্পনা দত্তের লেখা বই এর নাম বল।
 উ: চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান।

৩৬। “রানি ঝাঁসি রেজিমেন্ট কোন বাহিনীর অন্তর্গত ছিল?
   উ: আজাদ হিন্দ বাহিনী।
৩৭। “রানী ঝাঁসি রেজিমেন্ট এর প্রধান দায়িত্বে কে ছিলেন?
উ: ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন।
৩৮। ‘ডন সােসাইটি’ কবে, কে প্রতিষ্ঠা করেন?
 উ: ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে সতীশচন্দ্র মুখােপাধ্যায়।
৩৯। কত খ্রিস্টাব্দে ‘অ্যান্টি সার্কুলার সােসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়, এটি কে প্রতিষ্ঠা করেন?
 উ: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে, শচীন্দ্র প্রসাদ বসু।
৪০। কোন সার্কুলারের প্রতিক্রিয়ায় ‘অ্যান্টি সার্কুলার প্রতিষ্ঠিত হয়?
   উ: কার্লাইল সার্কুলার।

৪১। “স্বদেশ বান্ধব সমিতি’ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উ: ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে।
৪২। অনুশীলন সমিতি কবে, কে প্রতিষ্ঠা করেন?
 উ: ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে, সতীশ চন্দ্র বসু।
৪৩। ভারতের বিপ্লববাদের জনক কাকে বলা হয়?
উ: বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে।
৪৪। সত্যশােধক সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
 উ: জ্যোতিবা ফুলে।
৪৫। জাতীয় শিক্ষার প্রসারে তিনি এক লক্ষ টাকা দান করেছিলেন, তিনি কে?
 উ: সুবােধ চন্দ্র মল্লিক।

৪৬। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এর প্রধান পরিচালক কে ছিলেন?
   উ: মেজর সত্য গুপ্ত।
৪৭। বিনয়-বাদল-দীনেশ-এর মহাকরণ অভিযানের ঘটনা ইতিহাসে কী নামে পরিচিত?
   উ: অলিন্দ যুদ্ধ।
৪৮। রশিদ আলি কে ছিলেন?
   উ: আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন।
৪৯। কলকাতায় রশিদ আলি দিবস কবে পালিত হয়?
   উ: ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।
৫০। কোন ঘটনার প্রতিবাদে ‘আজাদ হিন্দ সপ্তাহ পালিত হয়?
  উ: আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনানীর বিচারের প্রতিবাদে।

৫১। “দলিত’ কথাটির উৎপত্তি কোন শব্দ থেকে এসেছে?
   উ: ‘দলন’ শব্দ থেকে।
৫২। গান্ধিজি দলিত সম্প্রদায়ের কী নামকরণ করেন?
   উঃ হরিজন।
৫৩। দলিত সম্প্রদায়ের একজন অন্যতম নেতা নাম করাে।
   উ: শ্রী নারায়ণ গুরু।
৫৪। নমঃশূদ্র আন্দোলন প্রথম কোথায় শুরু হয়?
 উ: ফরিদপুরে।
৫৫। নমঃশূদ্রদের সরকারি ক্ষেত্রে বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পেশের বিষয়ে কে নেতৃত্ব দেন?
   উ: গুরুচাঁদ ঠাকুর।

৫৬। দলিত অধিকার প্রশ্নে গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে মতবিরােধ কোন বৈঠকে দেখা দিয়েছিল?
উ: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় গােলটেবিল বৈঠকে।
৫৭। পুনা চুক্তি কবে স্বাক্ষরিত হয়?
 উ: ২৪শে সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে।
৫৮। মতুয়া মহাসংঘ’ কার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
   উ: শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর।

শূন্যস্থান পূরণ করাে:

১। দ্য হিন্দু পত্রিকার মাধ্যমে গান্ধিজি অসহযােগ আন্দোলনে নারীদের যােগদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
২। রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ এর সভাপতি ছিলেন সরোজিনী নাইডু।
৩। ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল গঠিত হয় ১৯১০  খ্রিস্টাব্দে।

৪। ছেড়ে দাও’রেশমি চুড়ি’ গানটির রচয়িতা হলেন কবি মুকুন্দ দাস।

৫। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে সরলা দেবী চৌধুরানী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার স্থাপন করেন।
৬। নারীদের ভােটাধিকার অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সরােজিনী নাইডু।
৭। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর ‘বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা ‘যিনি পাঠ করেছিলেন গিরিজা সুন্দরী।
৮। বাসন্তী দেবী বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে, খ্রিস্টাব্দে।

৯।  সবরমতী আশ্রম থেকে গান্ধিজির ডান্ডি অভিযান শুরু হয়।
১০। ভারতছাড়াে আন্দোলনের সময় মেদিনীপুর জেলায় গঠিত হয় ভগিনী সেনা
১১। ভারতছাড়াে আন্দোলনের একজন মুসলিম নেত্রী ছিলেন রাজিয়া খাতুন।
১২। স্বদেশ বান্ধব সমিতি গড়ে তুলেছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত।
১৩। সতীশচন্দ্র সামন্ত -এর নেতৃত্বে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে।
১৪। স্বরাজ্য তহবিল গড়ে ওঠে অসহযোগ, আন্দোলনের সময়।
১৫। নারী সত্যাগ্রহ সমিতি তৈরি হয়েছিল অসহযােগ আন্দোলনের সময় ।
১৬। নারী সত্যাগ্রহ সমিতি তৈরি হয়েছিল কলকাতা শহরে।
১৭। সত্য বালা দেবী বীরভূমে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
১৮। আইন-অমান্য আন্দোলনের একজন দলিত নেত্রী হলেন আইন অমান্য।
১৯। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সময় গান কটন’ তৈরিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন বিপ্লবী কল্পনা দত্ত।
২০। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্পনা দত্তকে অগ্নিকন্যা, নামে অভিহিত করেন।
২১। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সময় কল্পনা দত্তের সঙ্গী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ছিলেন।
২২। প্রতিক্রিয়াশীল বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়েছিল ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে।
২৩। প্রতিক্রিয়াশীল বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করেছিলেন লর্ড কার্জন।
২৪। জালালাবাদ পাহাড়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর বিপ্লবীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
২৫। আলি ভ্রাতৃদ্বয় নামে পরিচিত ছিলেন মােহাম্মদ আলিশওকত আলি,
২৬। সত্যশােধক সমাজ গড়ে ওঠে জ্যোতিবা ফুলের উদ্যোগে।
২৭। সত্যশােধক সমাজ গড়ে ওঠে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে।
২৮। ভারতের নির্বাচনে তপশিলি জাতির আসন সংরক্ষণ হয় পুনা চুক্তি চুক্তির দ্বারা।
২৯। মতুয়া মহাসংঘের সংগঠক ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর।
৩০। গুরুচাঁদ ঠাকুরের মৃত্যুর পর নমঃশূদ্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর।
৩১। মতুয়া মহাসংঘের বর্তমান প্রধান কার্যালয় উত্তর ২৪ পরগণার  ঠাকুরনগরে।

উ: ১। দ্য হিন্দু, ২। সরোজিনী নাইডু, ৩। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে, ৪। কবি মুকুন্দ দাস, ৫। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে, ৬। সরােজিনী নাইডু, ৭। গিরিজা সুন্দরী, ৮। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে, ৯। সবরমতী, ১০। ভগিনী সেনা, ১১। রাজিয়া খাতুন, ১২। অশ্বিনীকুমার দত্ত, ১৩। সতীশচন্দ্র সামন্ত, ১৪। অসহযোগ, ১৫। অসহযােগ, ১৬। কলকাতা, ১৭। আইন অমান্য, ১৮। সােনালী সােলাঙ্কি, ১৯। কল্পনা দত্ত, ২০। অগ্নিকন্যা, ২১। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ২২। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে, ২৩। লর্ড কার্জন, ২৪। জালালাবাদ, ২৫। মােহাম্মদ আলি, শওকত আলি, ২৬। জ্যোতিবা ফুলের, ২৭। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে, ২৮। পুনা চুক্তি, ২৯। হরিচাঁদ ঠাকুর, ৩০। প্রমথরঞ্জন ঠাকুর, ৩১। ঠাকুরনগরে।

 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : প্রশ্নমান-২

১। স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কয়কটি দমনমূলক সার্কুলারের নাম লেখাে।
উ: কার্লাইল সার্কুলার, পেডলার সার্কুলার, নিয়ন সার্কুলার ইত্যাদি।

২। কোন পরিস্থিতিতে প্রথম জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন শুরু হয়?
উ: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কার্জনের বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলন শুরু হলে ছাত্ররা সরকার পরিচালিত স্কুল কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের জন্য জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলে, যার ফলস্বরূপ জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন শুরু হয়।

৩। বঙ্গভঙ্গ বিরােধী জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন সাফল্য পায়নি কেন?

  উ: বঙ্গভঙ্গ বিরােধী জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন সফল না হওয়ার কারণ হল – প্রথমতঃ সরকার পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তােলা সম্ভব হয়নি দ্বিতীয়তঃ জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করার পর ছাত্র-ছাত্রীদের চাকরি পাওয়ার। ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

৪। অ্যান্টি-সার্কুলার সােসাইটি কী?
উ: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর মাসে কলকাতা রিপন কলেজের ছাত্র শচীন্দ্র প্রসাদ বসুর নেতৃত্বে অ্যান্টি সার্কুলার সােসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার সভাপতি ছিলেন কৃষ্ণ কুমার মিত্র এবং সম্পাদক ছিলেন শচীন্দ্র প্রসাদ নিজেই। এই সােসাইটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে ছাত্রদের শামিল আর ফলে যে সমস্ত ছাত্র স্কুল-কলেজ থেকে বহিষ্কার হয়েছিল তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

৫। বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনের সময় বাংলার দুটি গুপ্ত সমিতির নাম লেখাে।
উ: ঢাকার মুক্তি সংঘ, ফরিদপুরে ব্রতী সমিতি, কলকাতার যুগান্তর দল, কলকাতা ও ঢাকার অনুশীলন সমিতি ও ময়মনসিংহের সাধারণ সমিতি ইত্যাদি।

৬। পাঞ্জাবের দুজন বিপ্লবীর নাম লেখাে।
উ: শ্যামজী কৃষ্ণবর্মা, লালা হরদয়াল, অজিত সিং সুফি অম্বাপ্রসাদ প্রমুখ।

৭। কোমাগাতামারু ঘটনা কী?
উ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গদর পার্টির বেশ কিছু সদস্য কোমাগাতামারু জাহাজে কলকাতার বজবজের অবতরণ করলে পুলিশের গুলিতে ২২ জন নিহত হয়। এই ঘটনা ‘কোমাগাতামারু’ ঘটনা নামে পরিচিত।

৮। গােলদিঘির গােলামখানা কাকে কেন বলা হত?
  উ: ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে গােলদিঘির গােলামখানা বলে অভিহিত করেছিলেন।
তাঁর মতে এখানে ঔপনিবেশিক শিক্ষা গ্রহণের ফলে ছাত্ররা স্বাধীন চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলবে এবং কেরানী ছাড়া আর কিছু হতে পারবে না। তাই তিনি এটিকে গােলদিঘির গােলামখানা বলে অভিহিত করেছেন।

৯। “সত্যাগ্রহ’ কী?
উঃ সত্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা রাখা। ভারতের জাতীয় আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধি এই নীতি প্রয়ােগ করেছিলেন।

১০। “কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা” কী?
উ: ভগৎ সিং-এর নির্দেশে, রামপ্রসাদ বিসমিল সহ কয়েকজন বিপ্লবী উত্তরপ্রদেশের কাকোরি রেল স্টেশনে ট্রেন ডাকাতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে মামলা শুরু হয়েছিল তা কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।

১১। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স কবে কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়? এদের একজন সদস্যের নাম লেখাে।
উ: ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বরিশালের শ্রীযুক্ত হেমচন্দ্র ঘােষ বেঙ্গল  ভলান্টিয়ার্স গঠন করেন, যার সদর কার্যালয় ছিল ঢাকা। অন্যদিকে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু বাংলার স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স গঠন করেছিলেন, যার সদস্য ছিলেন বিনয়-বাদল-দীনেশ সহ সুপতি রায়, সত্য গুপ্ত, মীরা দাশগুপ্ত প্রমুখ।

১২। অলিন্দ যুদ্ধ কী?
উ: বিনয় বসু-বাদল গুপ্ত-দীনেশ গুপ্ত রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে কুখ্যাত কারা অধিকর্তা সিম্পসনকে হত্যা করলে বিশাল পুলিশবাহিনী তাদের ঘিরে ধরে এবং রাইটার্স বিল্ডিং-এর বারান্দায় উভয়পক্ষের গুলির লড়াই শুরু হয়। এই ঘটনা ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

১৩। বীণা দাস কে ছিলেন?
  উ: ভারতের মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন বীণা দাস, যিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতারত স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করেছিলেন এবং ৯ বছর জেল বন্দী হয়ে থেকেছিলেন।

১৪। রশিদ আলি কে ছিলেন?
উ: আজাদ হিন্দ বাহিনীর অন্যতম সেনাপতি ছিলেন রশিদ, আলি। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সেনার হাতে বন্দী হওয়ার পর ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বিচারে তাকে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় ১১-১৩ই ২ ফেব্রুয়ারি ব্যাপক গণআন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘রশিদ আলি দিবস’ হিসেবে ঘােষণা করা হয়।

১৫। ব্রিটিশ আমলে ভারতের দলিত সম্প্রদায় কীভাবে অমর্যাদার শিকার হয়েছিল?
উ: মূলত: উচ্চবর্ণের শশাষণ, অত্যাচার, বঞ্চনা এবং বৈষম্যের শিকার হয়েছিল এই দলিত সম্প্রদায় গুলি।
যেমন মন্দিরে প্রবেশ করতে না পারা, পুকুরের জল ব্যবহার করতে না পারা, বিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময়
সামাজিক মেলামেশা না করতে পারা ইত্যাদি। পরবর্তীকালে আকালী আন্দোলন, ভাইকম সত্যাগ্রহ, হরিজন আন্দোলন প্রভৃতি দলিতদের স্বপক্ষে পরিচালিত হয়েছিল।

১৬। সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি কী?
উঃ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডােনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘােষণা করেন। এই নীতিতে বলা হয় –
(ক) ভারতের মুসলিম, শিখ, ইউরােপীয় সম্প্রদায়গুলি পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
(খ) হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু ও দলিত হিন্দু এই দুই ভাগে ভাগ করে তাদেরকেও পৃথক নির্বাচনের সুযােগ দেওয়া হয়।

১৭। পিকেটিং কী?
উ: পিকেটিং একধনের অবরােধ, যার মাধ্যমে বিদেশি পণ্যসামগ্রীর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের
কোনাে কিছু না কিনতে অনুরােধ করা।

১৮। বর্ণবৈষম্যবাদ কী?
উ: সমাজে বর্ণ বা জাতিগত কারণে মানুষের মধ্যে উঁচু, নীচু ভেদাভেদ এবং তার ভিত্তিতে যে সামাজিক বঞ্চনা, বৈষম্য ইত্যাদি লালিত হয় তাকে বর্ণবৈষম্যবাদ বলে।

১৯। কালারাম সত্যাগ্রহ’ কে, কবে, কেন করেছিলেন?
উ: ১৯৩০-৩৪ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রের নাসিকে কালারাম মন্দিরে অস্পৃশ্যদের প্রবেশের দাবীতে ডঃ ভীমরাও
রামজী আম্বেদকর এই সত্যাগ্রহ করেছিলেন।

২০। “সত্যশােধক সমাজ’ কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উ: ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতিবা ফুলে সত্যশােধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।


[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”5″ tax_term=”555″ order=”desc”]

বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নোত্তর : প্রশ্নমান-৪

১। বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলােচনা করো।
উ: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘােষণা করলে বাংলা তথা ভারতে এর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল সেই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। লীলাবতী মিত্র, কুমুদিনী মিত্র, সরলাদেবী, নির্মলা সরকারসহ বাংলার নারীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তারা রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আহ্বানে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর অরন্ধন ও উপবাস পালন করেছিলেন। মূলত তারা –
(ক) বিলাতি পণ্য যেমন শাড়ি, কাচের চুড়ি, লবণ, ঔষধ পত্র ব্যবহার বন্ধ করেছিলেন। দেশের তৈরি মােটা কাপড় তারা পরিধান করতেন। এই প্রসঙ্গে মুকুন্দদাসের এ ছ‘ফেলে দাও রেশমি চুড়ি কভু নারী আর পােরাে না’ কিংবা রজনীকান্ত সেনের – মায়ের দেওয়া মােটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই’ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল।
(খ) বাংলার নারী সমাজ স্বদেশে তৈরি পণ্যদ্রব্যের প্রচারে এগিয়ে এসেছিলেন এবং এ প্রসঙ্গে সরলা দেবী
চৌধুরানীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল।
(গ) জাতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে বহু ছাত্রী সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে স্বদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়।
(ঘ) বাংলার নারী সমাজ এই বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন মিছিল ও পিকেটিং-এ অংশ নিয়েছিলেন।
মুর্শিদাবাদের গিরিজা সুন্দরী, ফরিদপুরের সৌদামিনী দেবী, ঢাকা-খুলনার লাবণ্যপ্রভা দত্ত, বরিশালের
সরােজিনী দেবী ও মনােরমা বসু এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

সমালােচনা: তবে এই আন্দোলনে যে সমস্ত নেতৃত্ব বা নারী যুক্ত হয়েছিলেন তারা মূলতঃ সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন। নিম্নবিত্ত হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়নি। তা হলেও ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নারী সমাজের এই “স্বল্পতম ভূমিকা চোখে পড়ার মতাে।

২। অহিংস-অসহযােগ আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা আলােচনা করাে।
  উ: মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস- সত্যাগ্রত্নে নীতির উপর ভিত্তি করে যে আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল তা অহিংস-অসহযােগ আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলনে বাংলা তথা ভারতবর্ষের নারীরা অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্দোলনকে সক্রিয় করে তুলেছিলেন। বিভিন্ন ধারায় নারী সমাজ
এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। যথা ।
(ক) বিলাতি পণ্য বর্জনের ক্ষেত্রে অসহযােগ আন্দোলনে নারীরা সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন এবং  মিছিল, মিটিং ও পিকেটিং-এ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই আন্দোলনে উল্লেখযােগ্য নারী নেতৃবৃন্দ হলেন সুনীতি দেবী; বাসন্তী দেবী, নেলী । সেনগুপ্ত, কমলা নেহেরু, জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলী প্রমুখ।
(খ) স্বদেশী প্রচারের ক্ষেত্রে নারী সমাজ চরকায় সুতাে কাটা, কাপড় বােনা এবং তিলক-স্বরাজ তহবিল’ এ
নিজেদের অর্থ, অলংকার দান করা কিংবা উর্মিলা দেবীর উদ্যোগে ‘নারী কর্ম মন্দিরের সদস্যদের কলকাতায় ! আইন অমান্য করা প্রভৃতি কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছিল।
(গ) প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারত সফরকালে বােম্বাইতে বহু নারী বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। ১লকাতাতেও অনুরূপ বিক্ষোভ দেখিয়ে বাসন্তী দেবী; নির্মলা দেবী, সুনীতি দেবী প্রমুখ কারাবরণ করেছিলেন এবং নেলী
সেনগুপ্ত ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে স্টিমার ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
(ঘ) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে, যেমন -সরলা দেবীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা সহ নিজের বাড়িতে বিপ্লববাদ প্রসারে আখড়া গড়ে তােলা, বীরাষ্টমী ব্রত’, ‘প্রতাপাদিত্য উৎসব পালন করা ইত্যাদি ছাড়াও
বিদেশি পণ্য দ্রব্য বয়কটে মেয়েদের উদবুদ্ধ করা এবং পিকেটিং-এ অংশগ্রহণ করা প্রভৃতি সম্পন্ন হয়েছিল। এর মাধ্যমে নারী সমাজ তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পেরেছিল।
সমালােচনা : এই আন্দোলনের নেতিবাচক দিক হল সমাজের নিম্ন শ্রেণির মহিলা কিংবা মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের তেমন একটা অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে শহরের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মহিলারা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। আসলে নারী সমাজ নারী আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন অবগত  ”ছিলেন না। তবে সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এই আন্দোলনে নারী সমাজের এগিয়ে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করা যায়।

৩। ভারতছাড়াে আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা।
  উ: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারত ছাড়াে আন্দোলন শুরু হলে সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মতাে নারী সমাজও অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। মভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারী সমাজের এই অংশগ্রহণ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ৭ আগস্ট, ভারতছাড়াে প্রস্তাব, গৃহীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্তরের প্রায় সমস্ত নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলেও এই আন্দোলন সচল ছিল। সুচেতা কৃপালিনী, নন্দিতা কৃপালিনী, অরুণা আসফ আলি নারীদের সংগঠিত করে এই আন্দোলনকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিলেন। ভারতছাড়াে আন্দোলনে বাংলার নারীদের ভূমিকাও গৌরবজনক ছিল। মেদিনীপুরে ‘তাম্রলিপ্ত’ জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই সরকারের সঙ্গে যুক্ত নারীরা ভগিনী সেনা গঠন করেছিলেন। কৃষক পরিবারের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করে ‘গান্ধি বুড়ি’ নামে অভিহিত হয়েছিলেন। এছাড়া লাবণ্যপ্রভা দত্ত; এলা দত্ত, সুনিতা সেন, মায়া ঘােষ প্রমুখের অংশগ্রহণ ভারতছাড়ড়া আন্দোলনকে সুগঠিত করেছিল। চর আসাম ও পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে কিশােরী কনকলতা বড়ুয়া ভােগেশ্বরী ফুকোননী, উষা মেহতা প্রমুখ আন্দোলনকে সক্রিয় করে রেখেছিলেন। উষা মেহতা বেতার মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। উর্মিলা দেবী ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করে বিদেশি দ্রব্য বর্জন, পিকেটিং, স্বদেশী প্রচার, চরকা প্রচলন ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছিলেন। এছাড়া সন্তোষ কুমারী দেবী তৎকালীন চটকল ধর্মঘট শ্রমিক আন্দোলন চা-বাগানে ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভারতছাড়াে আন্দোলনে সমাজের নিম্ন শ্রেণির মহিলারা অংশ গ্রহণ করেছিলেন। মাতঙ্গিনী দেবী তার উজ্জ্বল উদাহরণ। এইভাবে সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মতাে নারীসমাজ ভারতছাড়াে আন্দোলনের মতাে গণআন্দোলনে তাদের স্বকীয়তা বজায় রেখে আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন এবং যার ফলে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল।

৪। টীকা লেখাে :অ্যান্টি পার্ক সােসাইটি।

  উ: ১৯০খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর কলকাতার রিপন কলেজের ছাত্র শচীন্দ্র প্রসাদ বসুর নেতৃত্বে ‘অ্যান্টি সার্কুলার সােসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার সভাপতি ছিলেন কৃষ্ণ কুমার মিত্র এবং সম্পাদক ছিলেন শচীন্দ্র
প্রসাদ বসু নিজেই। এই সােসাইটির মূল উদ্দেশ্য ছিল –
(ক) বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলন ‘পর্বে সৃষ্ট জাতীয়তাবাদের নতুন উদ্যমকে কাজে লাগাননা এবং জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা।
(খ) বিদেশি শিক্ষাকে বয়কট করে দেশীয় শিক্ষায় আগ্রহ বৃদ্ধি করা।
(গ) জাতীয় নেতাগণকে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা।
(ঘ) ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা।
(ঙ) বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনে ছাত্রদের শামিল হওয়ার ফলে যে সমস্ত ছাত্র স্কুল-কলেজ থেকে বহিষ্কৃত
হয়েছিল তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
চ) কার্লাইল সার্কুলারে ‘বন্দেমাতরম’ স্লোগান নিষিদ্ধ হলে তার প্রতিবাদ জানিয়ে অ্যান্টি সার্কুলার সােসাইটিতে ছাত্রদের যােগদানে উৎসাহিত করা। উপরিউক্ত বিষয়গুলিকে সামনে রেখে শচীন্দ্র প্রসাদ বসু
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে এই ‘অ্যান্টি সার্কুলার সােসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

৫। পুনা চুক্তি করে কোন পরিপ্রেক্ষিতে হয়েছিল?
  উ: ১৯৩২”. খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডােনাল্ড ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা? নীতি ঘােষণা করলে ভারতের মুসলিম, খ্রিস্টান, ইউরােপীয় প্রভৃতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু’ ও ‘দলিত – হিন্দু– এই দুটি ভাগে ভাগ করে পৃথক নির্বাচনের কথা বলা হয়। এর প্রতিবাদে গান্ধিজি আমরণ অনশন করলে গান্ধিজির প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ডঃ বি আর আম্বেদকর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে পুনা চুক্তি স্বাক্ষর করে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবী থেকে সরে এলে গান্ধিজি অনশন ভঙ্গ করেন। এই চুক্তিতে বলা হয়েছিল,
(১) আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবী থেকে সরে আসবে এবং হিন্দুদের সাথে যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেবে।
(২) অপরপক্ষে গান্ধিজি নির্বাচনে দলিতদের সংরক্ষিত আসন ৭৮ থেকে বাড়িয়ে ১৫১-তে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘােষণা করেন।

৬। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন।”
 উ: বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ছিলেন চট্টগ্রাম বিদ্রোহের মুখ্য নায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন। আইন অমান্য আন্দোলনের সময় সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনা সমগ্র ভারতবর্ষে আলােড়ন সৃষ্টি করেছিল।
(ক) বিপ্লবী সংগঠন স্থাপন: চট্টগ্রামের শিক্ষক সূর্য সেন তাঁর ছাত্র ও সহযােগীদের নিয়ে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’ নামক একটি বিপ্লবী সংগঠন স্থাপন করেন।
(খ) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন: ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ১৮ই এপ্রিল মধ্যরাতে অম্বিকা চক্রবর্তী, লােকনাথ বল, গণেশ ঘােষ, অনন্ত সিংহ, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা এ ওয়াদ্দেদার প্রমুখ সঙ্গীকে নিয়ে সূর্যসেন চট্টগ্রাম
অস্ত্রাগার আক্রমণ ও লুণ্ঠন করেন।
(গ) স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা: তারা টেলিফোন ও টেলিগ্রাফের তার বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামে একটি স্বাধীন
বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
(ঘ) বিচার ও ফাঁসি: নবপ্রতিষ্ঠিত এই সরকার সাময়িকভাবে চট্টগ্রামের ওপর নিজেদের আধিপত্য রাখলেও অবশেষে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে বিপ্লবীদের পরাজয় ঘটে এবং সূর্যসেন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। বিচারে সূর্যসেনের ফাঁসি হয় (৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪)। মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের এই ঘটনা সমগ্র ভারতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করে। সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনা ছিল চমকপ্রদ ও প্রশংসনীয়। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত জালালাবাদ ও চট্টগ্রামের যুদ্ধকে ইংরেজদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের প্রথম দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন।

৭। সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি কী?
  উ: ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডােনান্ড ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি ঘােষণা করেন। এই নীতিতে বলা হয় –
(১) ভারতের মুসলিম, শিখ, ইউরােপীয় সম্প্রদায়গুলি পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
(২) হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু ও দলিত হিন্দু এই দুই ভাগে ভাগ করে তাদেরকেও পৃথক নির্বাচনের সুযোেগ দেওয়া হয়।
গান্ধিজি এই পৃথক নির্বাচন নীতিতে অশনিসংকেত দেখেন। গান্ধিজি নীতিগতভাবে খ্রিস্টান মুসলমানদের পৃথক নির্বাচনের নীতিকে মেনে নিলেও হিন্দু সমাজকে বিভাজন করে ‘বর্ণ হিন্দু’ ও ‘দলিত হিন্দু’র তকমা দিয়ে পৃথক নির্বাচন নীতিকে তিনি সমর্থন করেননি। এর প্রতিবাদে তিনি যারবেদা জেলে অনশন শুরু করলে তাঁর প্রাণসংশয় দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আম্বেদকর পুনা চুক্তির (১৯৩২) মাধ্যমে তাঁর নমনীয়তা প্রকাশ করে পৃথক নির্বাচন নীতি থেকে সরে এলেও নির্বাচনে দলিতদের আসন সংখ্যা ৭৮ থেকে বাড়িয়ে ১৫১ করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেদিক থেকে এই পৃথক নির্বাচন নীতি উভয়ের কাছে
কিছুটা হলেও নীতিসমাত সমাধান এনেছিল।

৮। দলিত অধিকার প্রশ্নে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে লেখাে।
উ: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে সাংবিধানিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের গােলটেবিল বৈঠকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি
হিসেবে গান্ধিজি ও দলিতদের প্রতিনিধি হিসেবে বি আর আম্বেদকর উপস্থিত ছিলেন। দলিত প্রশ্নে গান্ধি- আম্বেদকরের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয় যা, গান্ধি আম্বেদকর বিতর্ক’ নামে পরিচিত। এই বিতর্কের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল উচ্চবর্ণের হাত থেকে দলিতদের অধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব আদায় করা। কিন্তু আম্বেদকর যেভাবে চাইছিলেন বা যতটা চাইছিলেন তার সঙ্গে গান্ধি একমত ছিলেন না। আম্বেদকরের মতে দলিতরা ভারতের সর্বোচ্চ ছড়িয়ে থাকায় তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। এজন্য তারা নির্বাচনের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি জেতাতে পারছেন না। পরিপ্রেক্ষিতে আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচন তথা রাজনৈতিক অধিকার দাবী করেন। এক্ষেত্রে গান্ধিজির ভিন্নমত ছিল। তার মতে দলিতরা অস্পৃশ্য বা সংখ্যালঘু নয় এবং তারা হিন্দু সম্প্রদায় ভুক্ত। এজন্য তিনি পৃথক নির্বাচনের দাবীকে তীকার করেন। এরূপ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডােনাল্ড ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি ঘােষণা করে দলিত সহ সংখ্যালঘু শ্রেণির পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেয়। গান্ধিজি খ্রিস্টান ও মুসলমানদের পৃথক নির্বাচনের দাবীকে স্বীকার করে নিলেও দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবীর বিরুদ্ধে অনশন আন্দোলন শুরু করেন। অবশেষে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে পুনা চুক্তির মাধ্যমে দলিতদের আসন সংখ্যার বৃদ্ধির দাবীকে মেনে নিয়ে ‘পুনা চুক্তি করেন। ইতিহাসের এই অধ্যায় ‘গান্ধি- আম্বেদকর বিতর্ক’ নামে পরিচিত।

৯। টীকা লেখাে :বি. ভি. বা বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স।
  উ: ভূমিকা : ১৯২৫ থেকে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত ভারতের নানা স্থানে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী কার্যকলাপ প্রবল হয়ে ওঠে এবং এক্ষেত্রে গড়ে ওঠা সংগঠনগুলির অন্যতম হল বি.ভি, বা বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স।
প্রতিষ্ঠা : ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে হেমচন্দ্র ঘােষের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ বা ‘বি.ভি দল।
সদস্য : এই দলের সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন সত্য গুপ্ত, গণেশ ঘােষ, অনন্ত সিং, লােকনাথ
বল, সূর্য সেন, বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত, সুরেন্দ্রমােহন ঘােষ প্রমুখ।

কার্যাবলি : এই গােষ্ঠীর কার্যাবলি নিম্নরূপ –
(i) অভিবাদন প্রদর্শন: এই গােষ্ঠীর সদস্যরা কলকাতায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনের সভাপতি মতিলাল নেহরুকে অভিবাদন জানায়।
(ii) অপারেশন ফ্রিডম : এই গােষ্ঠী ভারতের বিভিন্ন জেলে বন্দিদের ওপর পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদ জানায় এবং এই উদ্দেশ্যে ‘অপারেশন ফ্রিডম’ চালু করে।
(iii) সােম্যান হত্যা : এই দলের সদস্য বিনয় বসু বাংলা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল পােম্যানকে হত্যা
করেন (২৯ আগস্ট, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে)।
অলিন্দ যুদ্ধ : বি ভি দলের অন্যতম সদস্য বিনয়কৃষ্ণ বসু, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ৮ ডিসেম্বর বি ভি দলের তিন
তরুণ বিপ্লবী বিনয়কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ এক দুঃসাহসিক অভিযান চালান। তাঁরা কারাবিভাগের কুখ্যাত ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। কিন্তু কলকাতার পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট ওই তিন বিপ্লবীর ওপর আক্রমণ চালালে তাঁদের অভিযান ব্যর্থ হয়।
উপসংহার : গান্ধিজি বি ভি দলের কার্যকলাপকে কলকাতার পার্ক সার্কাসের সার্কাস’ বলে অভিহিত
করলেও তা ছিল বাংলার সশস্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে আত্মত্যাগের এক স্মরণীয় দৃষ্টান্ত।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : প্রশ্নমান-৮

১। ভারতের জাতীয় আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা আললাচনা করাে।
উ: ভারতবর্ষের জাতীয় আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কমবেশি অংশ নিয়েছিল। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি ভারতের ছাত্র সমাজ ভারতে ব্রিটিশ বিরােধী জাতীয় আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ব্রিটিশ বিরােধী জাতীয় আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা কী ছিল তা আলােচনা করার দাবী রাখে –

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে ছাত্র সমাজ : ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ১৬ই অক্টোবর লর্ড কার্জন প্রশাসনিক সুবিধার অজুহাতে বাংলার জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করার জন্য বাংলা ভাগের সিদ্ধান্ত নিলে সমগ্র বাংলা তথা বাংলার বাইরে বহুস্থানে ছাত্র আন্দোলন উত্তাল হয়ে ওঠে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বড় বৈশিষ্ট্য হল হিন্দু-মুসলিম ছাত্ররা একত্রে জোট বেঁধেছিল এবং তৎকালীন রিপন কলেজ বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজের উদ্যোগে ৫০০০ ছাত্র মিছিল করে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে সভার আয়ােজন করেছিল। সেখানে ব্যারিস্টার আব্দুল রসুল, লিয়াকত হােসেন সহ অনেকেই বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ছাত্র-শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীরা বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিদেশি দ্রব্য বর্জন, পিকেটিং, মিছিল এমনকি
বিপ্লবী কার্যকলাপ তথা গুপ্ত সমিতিতে অংশগ্রহণ করে তাদের সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। বাংলার ছাত্র
আন্দোলনে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, আনন্দ চন্দ্র রায়, অশ্বিনী কুমার দত্ত, অম্বিকাচরণ মজুমদার, উমেশ চন্দ্র
গুপ্ত, কিশােরী মােহন চৌধুরী, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখনেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখি বন্ধন উৎসব সকল শ্রেণির ছাত্রকে গণ-বয়কট আন্দোলনের আহ্বান করেছিল যা বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছিল।

অসহযােগ আন্দোলনে ভারতের ছাত্র সমাজ : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযােগ আন্দোলন শুরু হলে ছাত্র সমাজও এই আন্দোলনে শামিল হয় এবং বাংলা, আসাম, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, বােম্বাই, বিহার, উড়িষ্যা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে ছাত্ররা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় এই সময় কলেজের ৫৩৪৮২, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েক লক্ষ ছাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বয়কট করেছিল। এই আন্দোলনে ছাত্ররা –
(ক) স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে বয়কট কর্মসূচি সফল করতে উদ্যোগী হয়।
(খ) ছাত্রদের অনেকে কংগ্রেস ও খিলাফত স্বেচ্ছাসেবক রূপে চাঁদা সংগ্রহ করে গঠনমূলক কাজ করা কিংবা চরকা ব্যবহারের কর্মসূচি প্রচার করেছিল।
(গ) বিকল্প জাতীয় শিক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলােতে ছাত্ররা যােগদানের কর্মসূচি গ্রহণ করে। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় এই সময়ে কাশি বিদ্যাপীঠ, গুজরাট বিদ্যাপীঠ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রভৃতি স্বদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বয়কটের ক্ষেত্রে তারা বিদেশি দ্রব্য বর্জন ও বিদেশি দোকানের সামনে পিকেটিং শুরু করে। চৌরিচৌরা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধিজি অহিংস
অসহযােগ আন্দোলন তুলে নিলে ছাত্র আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। তথাপি ভারতের জাতীয় আন্দোলন
বিশেষ করে অহিংস অসহযােগ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।

আইন-অমান্য আন্দোলনে ছাত্র সমাজ : আইন অমান্য আন্দোলনের ঢেউ সারাদেশে ছড়িয়ে
পড়লে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি ছাত্রসমাজও এই আন্দোলনকে সফল করতে এগিয়ে
আসে। জাতীয় নেতৃবৃন্দ আইন অমান্য আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কোনাে কর্মসূচি না জানালেও ছাত্ররা
নিজেদের মতাে করে বিদেশি দ্রব্য বর্জন, বিদেশি পণ্যদ্রব্যে অগ্নিসংযােগ, পিকেটিং সহ ছাত্রধর্মঘট প্রভৃতি
চালাতে থাকে। ছাত্ররা জাতীয় পতাকার রং নিজেদের পোশাকে ব্যবহার করে পুলিশের সামনে দিয়ে ঘুরে
বেড়াতে থাকে। বােম্বাই, গুজরাট, বাংলা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, উড়িষ্যা, আসাম প্রভৃতি।
জায়গায় ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়। ১৯৩০ সালের ১২ এপ্রিল কলেজ স্কোয়ারে, ১৪ জুলাই প্রেসিডেন্সি কলেজে, ১৮ জুলাই বেথুন কলেজে। ১৯ জুলাই স্কটিশ চার্চ কলেজ প্রাঙ্গনে অবরোধ ও সত্যাগ্রহ করার অপরাধে বহু ছাত্রছাত্রী গ্রেপ্তার হয়। এমনকি ছাত্র আন্দোলনের জেরে কর্তৃপক্ষ আইন পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়।

ভারতহাড়ো আন্দোলন : ১৯৪২ সালে গান্ধিজি ‘ডু অর ডাই’ বা ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’ ধ্বনি তুলে ভারতছাড়াে আন্দোলনের ডাক দিলে ছাত্রসমাজ সেই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। গান্ধিজির আহবানে সরকারি গ্রেপ্তারি পরােয়ানা, নানা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ছাত্রসমাজ এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের সময় ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক লীগ’ গঠিত হয়েছিল, যা এই আন্দোলনের বড়াে বৈশিষ্ট্য। আসামে পাটগিরি, চারু গােস্বামী, কনকলতা বড়ুয়া, মাদ্রাজে ছাত্রনেতা গণেশ মােহন রেড্ডি, মহারাষ্ট্রে ধর্ম পােখারকর, বােম্বেতে উমাভাই দেশাই প্রমুখ নেতৃত্ব দেন। বাংলার ক্ষেত্রে কংগ্রেস ও সােসালিস্ট পার্টি পরিচালিত “ছাত্র ফেডারেশন’ নিষিদ্ধ হলে কমিউনিস্ট পার্টি, ফরওয়ার্ড ব্লক, আর এস পি দলের নেতৃত্বে ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। এই সময় বিধান রায় প্রবর্তিত ‘ছাত্র-শিক্ষক রিলিফ কমিটি’র (১৯৪৩) উদ্যোগে ছাত্ররা দুর্ভিক্ষ পীড়িত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে পীড়িত মানুষের খাবার ও ওষুধ বিতরণ করে সামাজিক কাজের নমুনা রেখেছিল। এমনকি বাংলা, বিহার, উত্তর প্রদেশ বিভিন্ন জায়গায় এবং এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গ্রামে ঘুরে ঘুরে আন্দোলনের প্রচার চালায়। মূলতঃ ছাত্র-ধর্মঘট, পিকেটিং সরকারি স্কুল, কলেজ বর্জন প্রভৃতি ছিল এই আন্দোলনের কর্মসূচি। ছাত্র সমাজ এই সময়ে বারাণসীতে জনগণের সহযােগিতায় ৫দিন ধরে সরকারি প্রশাসনকে স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছিল। গুজরাটের স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে ‘বানর সেনা’ নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠেছিল। গুলি করে একজন ছাত্রকে হত্যা করা হলেও ছাত্র সমাজকে আন্দোলন থেকে বিরত করা যায়নি। সাময়িকভাবে ছাত্র আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গেলেও ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচারকে কেন্দ্র করে নতুন করে ছাত্রসমাজ উত্তাল হয়ে উঠেছিল।

বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্র সমাজ : বিপ্লবী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ও ছাত্রসমাজ সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। বিশেষ করে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর নেতৃত্বে মােজাফফরপুর ঘটনা, ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তের নেতৃত্বে দিল্লির সংসদ ভবনে বােমা নিক্ষেপ, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের বিনয়-বাদল-দীনেশের পরিচালিত অলিন্দ যুদ্ধ এবং সর্বোপরি রশিদ আলি দিবস পালন করা ছাত্রদের কাজ কর্মের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যায়। শুধু তাই নয় বুড়িবালামের যুদ্ধে যুবদের অংশগ্রহণ উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেছিল।

২। বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি আলােচনা করাে।
  উ: পৃথিবীর সব দেশেই স্বাধীনতা আন্দোলন ‘অহিংস’ ও ‘সহিংস’ – এই দুটি পথে পরিচালিত হয়। ভারতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশমাতার মুক্তির উদ্দেশ্যে বােমা, পিস্তল হাতে নিয়ে একদল তরুণ-তরুণী ঝাঁপিয়ে কা পড়েছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে। বিশ শতকের সূচনায় বাংলার বুকে বিপ্লববাদের পদধ্বনি শােনা যেতে থাকে। সূচনাপর্বে ‘অনুশীলন সমিতি’ ও ‘যুগান্তর দল’ এই সব কাজকর্ম শুরু করলেও এরসঙ্গে মেয়েদের কোনােভাবে যুক্ত করা হত না। ভগিনী নিবেদিতা, সরলাবালা চৌধুরীদের সঙ্গে বিপ্লববাদের গােপন যােগাযােগ থাকলেও সাধারণভাবে মেয়েদের এসব কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই বিপ্লববাদে মেয়েদের অংশগ্রহণের নজির পাওয়া যেতে থাকে, যেমন –
(ক) বীরভূমের ঝাউতলা গ্রামের দুকড়িবালা দেবী নিজের বাড়িতে রডা কোম্পানির পিস্তল ও এক বাক্স কার্তুজ লুকিয়ে রেখেছিলেন। এই অপরাধে তার দু বছরের কারাদণ্ড হয়। বিপ্লবী দলের কাজে তিনিই দণ্ডপ্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় মহিলা।
(খ) বিপ্লবীদের ‘পিসিমা’ হাওড়ার বাল্যবিধবা ও ননীবালা দেবী সংসারের কত্রী সেজে পলাতক  বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতেন। পুলিশ তাকে পেশােয়ার থেকে গ্রেফতার করে। তিনি হলেন ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের তিন নম্বর আইনে সাজাপ্রাপ্ত প্রথম মহিলা রাজবন্দী।
(গ) ময়মনসিংহের ক্ষীরােদ সুন্দরী চৌধুরী পুলিশের চোখে ধুলাে দিয়ে নিজের ঘর সংসার ফেলে সুরেন্দ্র মােহন ঘােষ, ক্ষিতীশ চৌধুরী, যদুগােপাল মুখােপাধ্যায় প্রমুখ বিপ্লবীদের মা সেজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
(ঘ) আবার এক্ষেত্রে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় লীলা নাগের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত “দিপালী সংঘের’ কথা বলা যায়। নারী জাগরণ ও নারীদের আত্মপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের বেশকিছু কর্মধারা ও শাখা সংগঠন ছিল। স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বয়স্ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রী নিবাস ছাড়াও ব্যায়াম চর্চা ও ছাত্রী সংগঠন করার কাজেও তারা যুক্ত ছিল। কলকাতাতে এর একটি শাখা ছিল। এটি ছিল ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন।
(ঙ) চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্ত ছিলেন বেথুন কলেজের ছাত্রী এবং ছাত্রীসংঘ’ নামক সংগঠনের সদস্য। তারা উভয়েই সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহাবিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। মাস্টারদা জগতকে দেখাতে চেয়েছিলেন যে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে মেয়েরাও পিছিয়ে নেই।
বীণা দাস : এই প্রসঙ্গে ভারতের মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বীণা দাসের কথা বলা যায়, যিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতারত স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করেছিলেন এবং ৯ বছর জেল বন্দী হয়ে থেকে তাঁর বিপ্লবীস্বত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন।
উপসংহার : ফলে ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে নারী সমাজের এই সক্রিয় অংশগ্রহণ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে যে সমৃদ্ধ করেছিল এবিষয় বলার অপেক্ষা রাখে না।

৩। বিংশ শতকে ভারতের দলিত রাজনীতি এবং আন্দোলনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।
  উ: বিশ্ব সমাজব্যবস্থার এক মহা অভিশাপ হলাে বর্ণবৈষম্যবাদ, অস্পৃশ্যতা এবং অনগ্রসর অনুন্নত ও আর্থসামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রতি উচ্চবিত্ত এবং উচ্চবর্ণের ঘৃণা ও অবজ্ঞা। ভারত ও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারতেও দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যাদের বঞ্চিত করা হয়েছিল সেই নিপীড়িত জাতি বর্ণ-বৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে নতুনভাবে জেগে উঠেছিল। এই আন্দোলনকে দলিত আন্দোলন বলা হয়। দলিত শব্দটি এসেছে ‘দলন’ শব্দ থেকে। যে নিঃস্ব বর্গের মানুষেরা বলপূর্বক অবদমনের ফলে মানবিক ধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাদেরকে দলিত বলা হয়। অবশ্য ডঃ বি আর আম্বেদকর তাঁর সম্পাদিত ‘বহিষ্কৃত ভারত’ পত্রিকাতে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের অবদমিত জনগােষ্ঠীকে ‘দলিত’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই দলিত শ্রেণিরা সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক এবং আর্থিকভাবে উচ্চবর্ণের দ্বারা শােষিত, নিপীড়িত এবং বঞ্চিত। ভারতে এর বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন মহারাষ্ট্রের জ্যোতিবা ফুলে ‘সত্যশােধক সমাজ (১৮৭৩ খ্রিঃ) নামক সংগঠনের মাধ্যমে। এই সময় তিনি ‘দীনমিত্র’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে দলিতদের পক্ষে জনমত গঠন করার চেষ্টা করেন। এর পাশাপাশি ‘গুলামগিরি’, ‘ব্রাহ্মণচে কসাব’ গ্রন্থের মাধ্যমে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে যেমন প্রতিবাদ করেছিলেন তেমনি কুনবি, মালি, মাহার, মাং প্রভৃতি দলিত শ্রেণিকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও উচ্চবর্ণের অন্যায় এবং অসাম্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আঙ্গিকে দলিত আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন অঞ্চলের দলিতদের মধ্যে অন্যতম হল কোলার ‘ইজাভা’, ‘পুলায়া সম্প্রদায়, তামিলনাড়ুর ‘নাদার’, সম্প্রদায় মহারাষ্ট্রের ‘মাহার’, দিল্লির ‘বাল্মিকী’, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, ছত্রিশগড়ের ‘চামার’ এবং বাংলার ‘নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ইত্যাদি। এই সম্প্রদায়গুলি বিভিন্ন জায়গার হলেও এরা সকলেই উচ্চবর্ণের শােষণ, অত্যাচার ও নানান রকম সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়েছিল এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দুর্বল শ্রেণি বিংশ শতকের প্রথম ভাগ থেকেই আন্দোলন গড়ে তুলতে শুরু করেছিল। যেমন মাদ্রাজে ভেলাল জাতি ‘জাস্টিস পার্টি’ (১৯১৬ খ্রি:) গঠন করে ব্রাহ্মণ বিরােধী ও আত্মসম্মান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করে। পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে ‘আকালি’, ‘নানকার’ আন্দোলন, সংগঠিত হয়েছিল। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অসহযােগ আন্দোলনের সময় গান্ধিজি ‘হরিজন’ আন্দোলন শুরু করলে দলিত আন্দোলন একটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল। কেরালাতে নিম্ন বর্ণের মানুষদের বা দলিতদেরমন্দিরে প্রবেশের কোন অধিকার ছিল না। সেও  উচ্চবর্ণের চাপে। এর প্রতিবাদস্বরূপ ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে শ্রী নারায়ণ গুরুর ‘ভাইকম সত্যাগ্রহ’ শুরু হওয়ায় দলিত আন্দোলন আরাে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে রামস্বামী নাইকারের নেতৃত্বে ‘আত্মম্মমান আন্দোলন’, কেরালাতে কেলাপ্পন ও গােপালনের নেতৃত্বে দলিত আন্দোলন এবং বাংলায় গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে নমঃশুদ্র আন্দোলন দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইতিহাসে উল্লেখযােগ্য দৃষ্টান্ত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।

৪। দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক কেন হয়েছিল তা আলােচনা করাে।
  উঃ দলিত অধিকার প্রশ্নে গান্ধিজি-আম্বেদকরের বিতর্ক ইতিহাসের একটি উল্লেখযােগ্য বিষয়। আমরা জানি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে রামসে, ম্যাকডােনাল্ড ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি ঘােষণা করলে গান্ধিজি যারবেদা জেলে অনশন শুরু করেছিলেন। যদিও আম্বেদকরের নমনীয়তায় পুনা চুক্তির মাধ্যমে গান্ধিজির অনশন ভঙ্গ হয়েছিল তাহলে দেখতে হবে কেন গান্ধিজি এবং আম্বেদকরেরর মধ্যে এই বিতর্ক ছিল।

প্রথমতঃ আম্বেদকর দলিতদের অবস্থার উন্নতির জন্য উচ্চবর্ণের হাত থেকে তাদের পৃথক করতে জনমত গঠন করেছিলেন কিন্তু গান্ধিজি দলিতদের মন্দিরে প্রবেশও অন্যান্য সমস্যা মানবিকতার দিক থেকে বিচার
করলেও দলিতদের উন্নতির জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

দ্বিতীয়: বিষয়টি হল আম্বেদকর দলিতদের শিক্ষা; কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানা” সংগঠন স্থাপন করেন এমনকি সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি অগ্রাহ্য করে বর্ণহিন্দুদের ঐক্য অটুট রেখে পুনা চুক্তির (১৯৩২ খ্রিঃ) মাধ্যমে গান্ধিজিকে সন্তুষ্ট করলেও গান্ধিজি দলিতদের জন্য ‘হরিজন আন্দোলন’ ছাড়া আর কিছুই করেননি। এই বিষয়টিও আম্বেদকর ভালােভাবে নেননি।

তৃতীয়তঃ গান্ধিজি অসহযােগ আন্দোলনের সময় যদিও অস্পৃশ্যতা দূর করে দলিতদের সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। আবার ব্যর্থ হলেও তাতে তাঁর কোন অনুশােচনা হয়নি। অন্যদিকে আম্বেদকর দলিতদের সামাজিক অধিকারের পাশাপাশি আর্থিক ও রাজনৈতিক অবস্থার উন্নতির কথা বললেও গান্ধিজি দলিতদের সমস্যাকে কেবলমাত্র ধর্মীয় দিক থেকে ভেবেছিলেন, যা আম্বেদকর সমর্থন করতে পারেননি।

চতুর্থতঃ বিষয় ছিল গান্ধিজি সমাজে অস্পৃশ্যতার অবসান চাইলেও কিংবা তার নিন্দা করলেও তিনি ‘বর্ণপ্রথাকে টিকিয়ে রাখার পক্ষপাতি ছিলেন। গান্ধিজির মতে ‘বর্ণপ্রথা’ হল সমাজের ভিত্তি এবং বর্ণপ্রথাকে “বৃক্ষ ও অস্পৃশ্যতাকে ‘আগাছা বলে অভিহিত করেন এবং সেইসাথে আগাছা বিনাশ করার কথা বললেও আম্বেদকর মনে করতেন ‘বর্ণপ্রথাই হল সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একমাত্র অন্তরায়। এই অবস্থানগত দৃষ্টিভঙ্গী ছিল উভয়ের পরস্পর বিরােধী।

পঞ্চমতঃ গান্ধিজি যখন দলিতদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেবার কথা কিংবা উচ্চবর্ণের সঙ্গে খাওয়া- দাওয়ার কথা বলে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন তখন আম্বেদকর মনে করতেন খাওয়া-দাওয়া বা মন্দিরে প্রবেশ নয়, তাদের প্রাপ্য অধিকার এবং প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদার দাবী পূরণ করতে হবে।

ষষ্ঠতঃ গান্ধিজি উচ্চবর্ণের হিন্দু ও দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচন চাইতেন না। ম্যাকডােনাল্ডের পৃথক নির্বাচন নীতি ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ঘােষিত হলে তিনি অনশন শুরু করেন। আম্বেদকরের মনে হয়েছিল
এই অনশন আসলে গান্ধিজির দলিতদের চাপে রাখার একটি কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। আম্বেদকর পৃথক নির্বাচন নীতির পক্ষপাতি হলেও শেষ পর্যন্ত পুনা চুক্তির মাধমে পৃথক নির্বাচন নীতি থেকে সরে আসেন। তাহলেও সামগ্রিক ভাবে গান্ধিজি এবং আম্বেদকরের মধ্যে প্রচলিত বিতর্কের অবসান ঘটেনি। উপরিউক্ত উল্লিখিত কারণের ফলে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক ইতিহাসের একটি উপজীব্য বিষয় হয়ে আছে।


[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”10″ tax_term=”545″ order=”desc”]