মহাবিদ্রোহের সংক্ষেপে চরিত্র বিশ্লেষণ করো। মাধ্যমিক ইতিহাস নোট

 চতুর্থ অধ্যায় 

সংঘবদ্ধতার গােড়ার কথা বিশ্লেষণ ও বৈশিষ্ট্য

[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”3″ tax_term=”559″ order=”desc”]

বিশদ ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর:  প্রশ্নমান ৮

সংক্ষেপে মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের বুকে ঘটে যাওয়া বহুচর্চিত বিদ্রোহটির প্রকৃতি বা চরিত্র নির্ধারণে এর সার্ধ-শতবৎসর অক্ৰিান্তেও কোনাে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভবপর হয়নি। স্বভাবতই তাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক মহলে উঠে এসেছে নানান পরস্পর বিরােধী ব্যাখ্যা। 

১৮৫৭-র বিদ্রোহ প্রকৃতি

(i) সিপাহি বিদ্রোহ

প্রবক্তা: চার্লস রেকস, স্যার জন লরেন্স, দাদাভাই নৌরজি, দুর্গাদাস ব্যানার্জী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

মূল বক্তব্য: এই তত্ত্বের প্রবক্তাদের মতে, ১৮৫৭-র বিদ্রোহ মুখ্যত ছিল একটি ‘সিপাহি বিদ্রোহ’। সিপাহিদের অসন্তোষ থেকেই বিদ্রোহের সূচনা ও প্রসার। অসামরিক লােকেদের অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য এবং মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সুযােগ নিয়েছিলেন মাত্র। কোনাে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালিত হয়নি, অঞ্চলভেদে বিদ্রোহের নেতাদের চাওয়া-পাওয়া ছিল ভিন্ন। সিপাহিদের সঙ্গেও বিদ্রোহের প্রধান নেতাদের কোনাে যােগাযোেগ ছিল না। ভারত থেকে ইংরেজ শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে কোনাে কেন্দ্রীয় সংগঠনও গড়ে তােলা হয়নি। দেশীয় রাজাদের অনেকেই, এমনকি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজও আন্দোলন থেকে দূরে ছিল। আবার শিখ, গােখা প্রভৃতি যােদ্ধা জাতি ভারতে পুনরায় মুঘল শাসনের দুর্দিন’ ফিরে আসার আশঙ্কায় সরাসরি বিদ্রোহ দমনে সরকারকে সাহায্য করেছিল। সুতরাং উপরিউক্ত যুক্তির আলােকে এই শ্রেণির তাত্ত্বিকগণ ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে ‘ সিপাহি বিদ্রোহ’ অপেক্ষা অধিক কিছু আখ্যা দিতে নারাজ।

(ii) জাতীয় বিদ্রোহ

প্রবক্তা: কার্ল মার্কস, নর্টন, ডাফ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

মূল বক্তব্য: এঁদের বক্তব্যের নির্যাস হলাে–সিপাহিদের দ্বারা বিদ্রোহের সূচনা হলেও অচিরেই এর বিপুল সম্ভার, জনগণের বিপুল সমর্থন ও অংশগ্রহণ, হিন্দু-মুসলিম ঐক্য, বিদ্রোহ দমনে সরকারের ব্যাপক যুদ্ধ পরিচালনা প্রভৃতি এই বিদ্রোহকে গণসংগ্রামের চরিত্র দান করেছে। তারা দেখিয়েছেন, দেশের উত্তর, মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম অংশে বিশেষত অযােধ্যা, দিল্লি, রােহিলখণ্ড প্রভৃতি অঞ্চলে এই বিদ্রোহ কার্যত গণসংগ্রামের রূপ নেয়। মার্কসের পরিভাষায়—“(জন বুল) যাকে সেনা বিদ্রোহ মনে করেছেন, সেটা আসলে জাতীয় বিদ্রোহ।”

(iii) স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম:

প্রবক্তা: প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনায়ক দামােদর সাভারকার তার Indian War of Independence’ গ্রন্থে এই তত্ত্বের অবতারণা করেছেন।

মূল বক্তব্য : ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্বাধীনতার প্রথম সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে ১৮৫৭-র বিদ্রোহেই প্রথম জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা-শ্রেণি নির্বিশেষে আপামর ভারতবাসী একই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে, একই শত্রুর মােকাবিলায় সামিল হয়েছিল। ভারত থেকে অত্যাচারী ইংরেজ শাসনের উৎপাটন ছিল তাদের সাধারণ লক্ষ্য।

(iv) সামন্ত বিদ্রোহ :

প্রবক্তা : ডঃ রজনীপাম দত্ত, আর. সি. মজুমদার প্রমুখ মার্কসবাদী ঐতিহাসিকগণ।

মূল বক্তব্য : এঁদের মতে, গদিচ্যুত ও রাজ্যচ্যুত সামন্তরাজারা (যথা—নানাসাহেব, তাতিয়া টোপি, লক্ষ্মীবাঈ প্রমুখ) নিজ নিজ স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে নিজ নিজ অঞ্চলে জনগণকে খেপিয়ে তুলে বিদ্রোহে সামিল হয়েছিলেন। ডঃ মজুমদার এই বিদ্রোহকে ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত তন্ত্র ও মৃতপ্রায় সামন্ত শ্রেণির মৃত্যুকালীন আর্তনাদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরও লিখেছেন – The First National War of Independence’ is neither ‘first nor ‘national’ nor ‘the war of independence.”

মন্তব্য : বস্তুতপক্ষে ১৮৫৭-র বিদ্রোহ কোনাে ঐতিহাসিকের নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক বক্তব্য মেনে পরিচালিত হয়নি। গতির আবেগে বিদ্রোহ সমস্ত তত্ত্বকেই সংমিশ্রিত করেছিল। তাই ঐতিহাসিক C.A. Bayly-কে উদ্ধৃত করেই আলােচনার ইতি টানা যায়— “The Indian Rebellion of 1857 was not one movement….it was many.”


[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”10″ tax_term=”555″ order=”desc”]

Madhyamik History Notes

[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”10″ tax_term=”1090″ order=”desc”]

Madhyamik Suggestion

[su_posts template=”templates/list-loop.php” tax_term=”559″ order=”desc”]

Madhyamik Result & Routine

[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”5″ tax_term=”1091″ order=”desc”]