কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের উৎস নির্ণয় করাে এবং গল্পটির সারাংশ লেখাে [HS]

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্য বইয়ের কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের Descriptive প্রশ্ন উত্তর , প্রশ্নের মান ৫।

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পাঠ্য বইয়ের গল্পকে বাঁচায় কে বাঁচে
কে বাঁচায় কে বাঁচে (MCQ)কে বাঁচায় কে বাঁচে (SAQ)
কে বাঁচায় কে বাঁচে Descriptive Question and Answerউচ্চমাধ্যমিক বাংলা
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশনসবকটি প্রশ্নের উত্তর পেতে প্রশ্নতে ক্লিক করুন।

প্রশ্ন ১। কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পের উৎস নির্ণয় করাে এবং গল্পটির সারাংশ লেখাে। [১+৪]

উ: উৎস: প্রখ্যাত কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় পরিমল গােস্বামী সম্পাদিত ‘মহামন্বন্তর’ গ্রন্থে। প্রকাশকাল মার্চ, ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ। পরে গল্পটি ‘মানিক গ্রন্থাবলি’-র দ্বাদশ খণ্ডে ‘সংকলিত গল্প’ বিভাগে স্থান পায়। সেখান থেকে গল্পটি সংকলিত।

সারাংশ, চাকুৱজীবন: মৃত্যুঞ্জয় অফিসে উচ্চপদের চাকুরে ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষ। শহরের নিরালা পরিবেশে তার বাড়ি। ফুটপাথে চলাফেরা করে না বললেই চলে। বাড়ি থেকে বেরিয়েই ট্রামে চড়ে, ট্রাম থেকে নেমেই অফিসের ফটক। বাড়ির বাজার ও কেনাকাটা নিজে করে না। চাকর কিংবা ছােটো ভাই সামাল দেয়।।

অনাহাৱে মরতে দেখে প্রতিক্রিয়া: অফিস আসার পথে দৈবক্রমে ফুটপাথে দুর্ভিক্ষপীড়িত এক অনাহারীকে সে মরতে দেখে। না খেতে পেয়ে মরার ভয়ানক যন্ত্রণা ও বীভৎসতা তার মনকে এমন আহত করে যে, সে অফিসে এসে মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে ও বমি করে। তাকে দেখে তার সমপদস্থ সহকর্মী নিখিলের মনে হয়, বড়াে একটা সমস্যার সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে তার মধ্যে। তার বক্তব্যে তার প্রকাশ ঘটে। চারবেলা ভরপেট খেয়ে একশ্রেণির মানুষ দিব্যি স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকল, আর-এক শ্রেণির হতভাগা মানুষ না খেয়ে মরছে—এই অসম বণ্টন আর বৈষম্যজনিত যে অপরাধ, তার প্রায়শ্চিত্ত কী ? মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ওই অপরাধীর একজন ভেবে শত ধিক্কার দেয় নিজেকে।

দৱদ, সহানুভূতি, আন্তরিকতা ও মানবতাবােধ অকৃত্রিম: মুখে দরদ ও সহানুভূতি দেখানাে মেকি ও নিরর্থক। তাতে ক্ষুধার আগুন নেভে না। মৃত মানুষের স্বর্গপ্রাপ্তির জন্য সম্প্রতি হল না বলে মিডিয়ার হা-হুতাশভরা তীক্ষ মন্তব্য প্রকাশ, লােকদেখানাে সহানুভূতি জানানাে এক ধরনের বিলাসিতা। তবে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মৃত্যুঞ্জয়ের কিছু করার আন্তরিকতা অকৃত্রিম। সে তার বেতনের সবটাই রিলিফ ফান্ডে দান করে। সে কিছু একটা করতে চায়। রাতে তার ঘুম হয় খেতে বসে খেতে পারে না। একবেলা খায় আর তাদের স্বামী-স্ত্রীর একবেলার খাবার ভুখা মানুষদের বিলিয়ে দেয়। তাতেও তার শান্তি নেই। সে যেন ভিতরে ভিতরে পুড়তে থাকে।

ফুটপাথেৱ ভুখা মানুষ হয়ে খাদ্যের জন্য বিনীত আবেদন: তার মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। অফিস, সংসার সবকিছু থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হয়ে দুর্ভিক্ষপীড়িত নিরন্ন মানুষের সান্নিধ্যে তাদের ভয়ংকর কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক জীবনযাত্রার সঙ্গে একাত্ম হতে চায়। অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করে তাদের ভাষা, বলার ভঙ্গি। বুঝতে পারে তাদের বুকে কারওর বিরুদ্ধে নালিশ বা প্রতিবাদ নেই। কী থেকে তাদের এই দুর্দশা, তা জানতেও চায় না তারা। তারা অদৃষ্টনির্ভর। তাদের মুখে একই দুঃখের কাহিনি। মৃত্যুঞ্জয় আরও উপলদ্ধি করে তার যথাসর্বস্ব দিয়েও ওদের নিরন্নতার প্রতিকার করা সম্ভব নয়। ওই অসহায়তা ও হতাশা তাকে ক্রমশ মুষড়ে ফেলে। পরিশেষে মৃত্যুঞ্জয় তাদেরই একজন হয়ে যায়। তাদের মতনই ফুটপাথের ভুখা মানুষ হয়ে খাবারের জন্য বিনীত আর্জি রাখে। মহত্তম মানবতাবােধের টানে মধ্যবিত্ত স্তর পেরিয়ে মৃত্যুঞ্জয় নেমে আসে সর্বহারাদের স্তরে। সমষ্টি মানুষের ভিড়ে ব্যক্তি মানুষের উপস্থিতি। এই। জীবনদর্শন লেখকের মার্কসীয় জীবনদর্শনেরই প্রতিচ্ছবি যেন।