কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের নামকরণের সার্থকতা,লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

কে বাঁচায় কে বাঁচে (MCQ)
কে বাঁচায় কে বাঁচে (SAQ)
কে বাঁচায় কে বাঁচে Descriptive Question and Answer
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন

২। গল্পকাৱ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্প আলােচনা প্রসঙ্গে নামকরণ কতখানি যথাযথ ও সার্থক হয়েছে আলােচনা করাে। [৩+২]

উ: ভূমিকা: গল্পের নামকরণ নানাভাবে হয়। গল্পের ঘটনা, কাহিনি, চরিত্র, বিষয়বস্তু, বক্তব্য—কোনাে না কোনাে কিছুকে লক্ষ্য করে নামকরণ হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে গল্পের অন্তর্নিহিত ভাব, সত্য কিংবা প্রকাশিত আদর্শের ব্যঞ্জনাৰ্থে নাম দেওয়া বা নামকরণ হয়। প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পের নামকরণ কীভাবে হয়েছে এবং নামকরণ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে কি না, তা বিচারবিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে।

গল্পের ঘটনা: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পটি ঘটনাকেন্দ্রিক নয়, চরিত্রনির্ভর। ঘটনা খুবই অল্প। গল্পের মূল  চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় অফিস আসার পথে প্রথম অনাহারে মানুষ মরতে দেখে শহরের ফুটপাথে। সে অফিসের মােটা মাইনের চাকুরে। ট্রামে অফিসে যাতায়াত করে। ফুটপাথে হাঁটে না। ফুটপাথের নিরন্ন ক্ষুধার্ত মানুষের জীবনযাপন ও মৃত্যুর কথা কাগজে পড়ে, লােকের মুখে শােনে। প্রত্যক্ষ দর্শনের অভিজ্ঞতা এর আগে তার ছিল না। এই দৃশ্যের আঘাত তাকে মন ও শরীর উভয় দিক থেকে কাবু করে ফেলে। গল্পের ঘটনা বলতে এটুকুই।

নিজেকে অপরাধী ভাবা, প্রায়শ্চিত্তেৱ চিন্তা, ৱিলিফ ফান্ডে দান: তারপর গল্পের বিস্তার, দ্বন্দ্ব, পরিণতি যা কিছু, সবই চরিত্রনির্ভর। গল্পের উদ্দীপন বিভাব মন্বন্তর এবং ভয়াবহ আকালের ফলে অনাহারে অসহায় মানুষের মৃত্যু। তাদের অনাহার ও অসহায় মৃত্যুঞ্জয়কে ভাবিয়ে তােলে। সে ভাবে তারা যখন দিনে চারবেলা উদরপূর্তি করে ভুরিভােজ করছে, তখন ফুটপাথের নিরন্ন ভুখা মানুষগুলি খেতে না পেয়ে মরছে। এজন্য নিজেকে অপরাধী মনে হয় মৃত্যুঞ্জয়ের। তার প্রায়শ্চিত্ত কী, সে চিন্তাও তাকে অস্থির করে। তা ছাড়া লােকের অভাবে রিলিফ-ওয়ার্ক যখন ঠিকমতাে হচ্ছে না, তখন সময় কীভাবে কাটাবে, সে-ভাবনায় ব্যস্ত থাকার জন্যও নিজেকে শত ধিক্কার জানায়। মাইনের সব টাকা রিলিফ ফান্ডে দান করে। একবেলা খায়, আর একবেলার তাদের স্বামী-স্ত্রীর খাবার ক্ষুধার্ত মানুষদের বিলিয়ে দেয়।

মধ্যবিত্ত স্তর থেকে সর্বহাৱা স্তরে উপনীত: মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে দিন দিন পরিবর্তন ঘটতে থাকে। অফিসে আসা অনিয়মিত হয়ে যায়। বাড়িতেও দেখা যায় না। শহরের ফুটপাথে দুর্ভিক্ষপীড়িত ভুখা মানুষজনের মাঝে ঘুরে বেড়ায়। তাদের খুঁটিয়ে লক্ষ করে। তাদের সঙ্গে আলাপ করে। তাদের ভাষা, তাদের ভিতরের কষ্ট, তাদের মনােভাব বােঝার ও অনুভব করার চেষ্টা করে। তাদের জন্য কিছু করতে না পারার অসহায়তা তাকে যেন কুরে কুরে খায়। হতাশ হয়ে ক্রমশ মুষড়ে পড়ে। অফিস ও সংসার থেকে সরে আসা মৃত্যুঞ্জয় ধীরে ধীরে নিরন্ন ক্ষুধার্ত মানুষগুলির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। তার মধ্যবিত্তের বুর্জোয়া খােলসটি গা থেকে খুলে গিয়ে সে সম্পূর্ণ সর্বহারাতে পরিণত হয়।

নামকরণ যথাযথ ও সার্থক: উল্লিখিত আলােচনা প্রসঙ্গে দেখা গেল দুর্ভিক্ষপীড়িত নিরন্ন ক্ষুধার্ত মানুষগুলির ভয়াবহ অসহায়তার ছবি, বিশেষ করে গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে। এই অসহায়তা থেকে এ সত্যতাই বেরিয়ে এসেছে যে, এই সমাজব্যবস্থায় কে, কাকে বাঁচায়, কে দেয়া বা বাঁচে। শিরােনামের শেষে বিস্ময়সূচক চিহ্নের দ্বারা লেখক একটি শ্লেষের মাধ্যমে এই ব্যঞ্জনাটুকুই পাঠকের কাছে রেখেছেন যে, এই বুর্জোয়া সমাজে দুর্ভিক্ষপীড়িত নিরন্ন ভুখা মানুষদের বাঁচানোের দায়িত্ব যাদের, তাদের দরদ, সহানুভূতি মেকি আন্তরিকতার চেয়ে লােকদেখানাে ভঙ্গিসর্বস্ব প্রবণতাই বেশি। কাজেই বাঁচতে হলে লড়াই করে অসহায়তা জয় করাে, বেঁচে থাকার শক্তি ও রসদ অর্জন করাে। কেউ কাউকে বাঁচায় না, নিজের শক্তিতে বাঁচতে হয়। এককভাবে নয়-দশজনে মিলেমিশে। এই ব্যঞ্জনার্থই গল্পের নামকরণকে করেছে যথাযথ ও সার্থক।


[sc name=”last”]