প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রবন্ধ রচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রচনা

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ভূমিকা :

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে এগিয়ে চলেছে আধুনিক মানুষ। মধ্যযুগের দেববিশ্বাস ও ভক্তি আধুনিক জীবনে মানুষের প্রতি বিশ্বাস এবং মর্ত্যময়তায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই মর্ত্যময়তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার এবং বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদ। আধুনিক জীবনে যুক্তিবােধ ও কার্যকারণ পরম্পরা জ্ঞান থেকেই শুরু হল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে দিল মধ্যযুগীয় কুসংস্কার থেকে মুক্তি, জগৎ ও জীবনের প্রতি এক আলাদা মমত্ব। এই মমত্ব থেকে দেবতাই সব করতে পারে—এই বােধ অপসৃত হল, তার জায়গায় এল মরজগতের মানুষের অপার মহিমার প্রতি আস্থা। মানুষ আর অযথা দেবতার উপর ভরসা না করে কিম্বা প্রকৃতির উপর শুধুমাত্র আস্থা না করে বিকল্পের সন্ধান করতে লাগল। ফলে ব্যবহারিক জীবনে কিম্বা নিত্য-নৈমিত্তিক কার্যে বিজ্ঞানের অবদানকে গ্রহণ করতে থাকল মানুষ। অবশ্য একথাও ঠিক যে, প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান-নির্ভরতা মানুষকে করল কৃত্রিম, বিজ্ঞানের অপপ্রয়ােগ মানুষের শান্তি কেড়ে নিল।

প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান :

সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত একজন মানুষের ক্ষেত্রে প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের অস্তিত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনাে উপায় নেই। প্রাত্যহিক জীবনচর্যা, অফিস কাছারি, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসবক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের অবদান। শুধু একটি দিনের জীবনচর্যাকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাব বিজ্ঞানের কি প্রভাব আমাদের উপর বর্তমান। যেমন, এলার্ম বেল শুনে ঘুম থেকে ওঠা, তারপর দাঁত মাজার ব্রাশ ও পেস্ট, ফোয়ারার জলে স্নান, প্রাতরাশ করা, পরিবহনে চেপে কর্মস্থলে যাওয়া, পরিশুদ্ধ জল পান করা, কলিং বেল টিপে ডাকা, এয়ার কন্ডিশন ঘরে আরাম অনুভব করা ও লিফটের মাধ্যমে বহুতল বাড়িতে ওঠা, দূরভাষে নিত্য-নৈমিত্তিক প্রয়ােজনীয় কথা সেরে নেওয়া, পাখার তলায় বসে আরাম করা, অবসর বিনােদনের জন্য রেডিও শােনা, টিভি দেখা, খাদ্য তৈরি করার জন্য প্রেসার কুকার ব্যবহার করা, অসুস্থ হলে কি ধরনের অসুস্থতা নির্ণয় করা সবক্ষেত্রেই প্রতিদিনের কাজে বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আমরা চলতে পারি না। এমনকি গ্রামের মানুষেরা বৈদ্যুতিক আলাে ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে কাজে লাগাচ্ছে, কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষাবাদ করছে, গ্যাসের উনুন, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি ব্যবহার করছে। অফিস-আদালতে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-মেল প্রভৃতি বিজ্ঞানের অবদান—যার দ্বারা প্রাত্যহিক জীবনের কাজ সুচারু ও সুন্দর হয়ে উঠছে।

     প্রাত্যহিক জীবনকে যদি কয়েকটি ক্ষেত্রে ভাগ করে আমরা বিজ্ঞানের অবদান আলােচনা করি, তাহলে উপলব্ধি করতে পারব, বিজ্ঞানকে আমরা জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে হােক কতটা গ্রহণ করেছি। প্রতিদিনের গৃহকার্য থেকে শুরু করে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাথ্য, স্বাচ্ছন্দ্য, আমােদ-প্রমােদ, কৃষি, শিল্প ও প্রযুক্তি পর্যন্ত সমস্ত ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান রয়েছে প্রাত্যহিক জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে।

প্রযুক্তি :

বিশ্বায়নের প্রভাবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সমগ্র পৃথিবী হয়ে গেছে একটি বাজার-এর একক। ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের নানা সাফল্য আজ যে কোনাে মানুষের দোরগােড়ায় উপস্থিত হতে পারছে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অসাধ্যসাধন করতে পারছে। একদিন মানুষ খাদ্যাভাবে দিন কাটাত, এখন প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটেছে। সবুজ বিপ্লব। বাসস্থান নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রভৃতিতে যে সময় ও খরচ লাগত বর্তমানে প্রযুক্তির সাহায্যে অনেক কম সময়ে ও আধুনিক রূপে বাসস্থান ও রাস্তাঘাট নির্মিত হচ্ছে। রােগ হলে মানুষকে যেখানে দেবতা বা কোনাে অলৌকিক শক্তির উপর ভরসা করতে হত সেই রােগ নির্ণয়ে এসেছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি। এমনকি মুমূর্য মানুষকেও নানা প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বারা কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মহাকাশ অভিযান, মঙ্গল গ্রহের মাটি পরীক্ষা, পৃথিবীর বিকল্প সন্ধানও শুরু হয়েছে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মােবাইল ফোন ততা এখন গ্রামের প্রান্তে পৌঁছে গেছে। এর দ্বারা শুধু ব্যবসায়ী, ছাত্র-ছাত্রী নয়, নানা ধরনের মানুষ সুযােগ-সুবিধা পেতে পারছে। বিনােদনের ক্ষেত্রে ও আনন্দদানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির দরজা খুলে গেছে। কেবল্ চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনাে প্রান্তের খবর পেতে কারােরই অসুবিধা হচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেও বিশাল উন্নতি ঘটেছে। ই-মেল, ইন্টারনেট-এর সুযােগ গ্রহণ করে বহু মানুষ যেমন উপকৃত হচ্ছে তেমনি বহু মানুষের জীবিকার সুযােগও সৃষ্টি হয়েছে।

উপসংহার : প্রাত্যহিক জীবনে তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আর এই অপরিহার্যতা আমাদের অনেকাংশে করেছে পরনির্ভর। এ আর এক পরাধীনতা। কেননা অতিরিক্ত যান্ত্রিকতা মানুষের প্রাণের স্পন্দনকে রুদ্ধ করে কৃত্রিম করে তুলছে—মানুষকে অসুখী করে তুলছে। এর জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ মানুষের অতিরিক্ত লােভ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অপব্যবহার এই বিচ্যুতির কারণ হয়ে উঠেছে। এজন্য প্রয়ােজন এদের যথাযথ ব্যবহার এবং মানব কল্যাণে এদের নিয়ােজিত করা। নতুবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল থেকে বঞ্চিত হবে বহু মানুষ।

[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”3″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]