১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট আন্দোলনের ইতিহাস বণর্না করো।অথবা_ ভারত ছাড়ো আন্দোলন কেন হয়েছিল ? বাংলায় এই আন্দোলনের সংক্ষিপ্তবিবরণ দাও।অথবা_ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বণনা দাও।

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট আন্দোলনের ইতিহাস বণর্না করো।
       অথবা
ভারত ছাড়ো আন্দোলন কেন হয়েছিল ? বাংলায় এই আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত
বিবরণ দাও।
       অথবা
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন এক সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ব্যাপকতায় ও গভীরতার বিচারে এই আন্দোলন হল-_ভারতের মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়।
কেন ভারত ছাড়ো আন্দোলন : বাংলার বিপ্লবীক আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের দমন পীড়নে বিস্মিত হয়ে ওঠে । জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ, বিশেষ গান্বিজি একথা উপলব্ধি করে যে আন্দোলনের চরিত্র না পালটালে মানুষের বিশ্বাস অর্জন সম্ভব নয়।

পটভূমি : ১৯৪২-এর ব্যাপক এই গণ আন্দোলনের একটি বাস্তব পটভূমি ছিল। ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হলে সারাদেশ চরম হতাশা ও ক্ষোভে ফেটে পড়ে। গান্বিজি তার বিখ্যাত “হরিজন” পত্রিকায় লিখতে থাকেন যে, জাপানি আক্রমণ থেকে ভারতকে রক্ষা করার জন্য ব্রিটেনের উচিত অবিলম্বে ভারত ত্যাগ করা।

ভারতছাড়ো আন্দোলন : ১৯৪২ খ্রিঃ ১৪ই জুলাই কংগ্রেস কার্যবাহিনী সমিতি ভারতছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এই প্রস্তাবে বলা হয় ফ্যাসিবাদ, নার্শিবাদ কেবলমাত্র ভারতের স্বাথেই নয়। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধ বিজয়ের জন্যও ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন হওয়া প্রয়োজন । স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক দলগুলি নিয়ে ভারত একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এবং এই সরকার ভারতের সকল শ্রেণির গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধান রচনা করবে। গাম্বিজি জাতির উদ্দেশ্য বলেছেন-আমরা করব অথবা মরব। (করেঙ্ো ইয়ে মরেঙ্গে“DO OR DIE’
নেতৃত্বে গ্রেফতার : ৮ আগস্ট গভীররাতে কংগ্রেসের অধিবেশন শেষ হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাম্বিজি, জওহরলাল নেহরু, বল্পভভাই প্যাটেল সহ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়। গাম্ধিজির “হরিজন” পত্রিকা সহ কয়েকজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

গণ বিদ্রোহ : আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে সভা সমিতি, মিছিল, হরতাল ইত্যাদি অহিংস উপায়ে আন্দোলন শুরু হয়। বিহার, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গে বহু জায়গায় ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হয়ে পড়ে। তমলুকে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন জাতীয় সরকার। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, কলকারখানা, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ডাকঘর, রেলস্টেশন, থানা, জনতা ও পুলিশ সংঘর্ষ শুরু হয়।

ব্যর্থতার কারণ : আগস্ট আন্দোলনের ব্যার্থতার কারণ হিসাবে বলা যায় যে, প্রথম, জনসাধারণ সম্পূর্ণ নেতৃত্বহীন ছিল, তাদের কোনো সংগঠন, পরিকল্পনা বা কর্মসূচি ছিল না। দ্বিতীয়ত, মুসলিম লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি, হিন্দু মহাসভা অনুন্নত সম্প্রদায় প্রভৃতি ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষের এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকে। তৃতীয়ত, নিষ্ঠুর সরকারি দমননীতি ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নিরস্ত্র জনসাধারণের অসম সংগ্রামে সরকার যে জয় যুত্ত হবে।

গুরুত্ব : (i) জাতীয় মুস্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ৪২-এর এত ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। (ii) জাতীয় আন্দোলনে বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রমিক কৃষক সামিল হলে ও আগস্ট আন্দোলন তাদের অংশগ্রহণ ছিল (iii) পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু এই আন্দোলনকে ১৮৫৭ খ্রিঃ মহাবিদ্রোহের সঙ্গে তুলনা করে লেখেন যে, নেতা নেই, সংগঠন নেই প্রভৃতি প্রচেষ্টা চালান।

উপসংহার : ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট আন্দোলন কংগ্রেস প্রার্থীদের গ্রেপ্তারের সংবাদ পাওয়া মাত্রই দেশ জুড়ে উত্তাল ভাবে ডাক দেয়। এই ব্যর্থতার পেছনে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। এই কারণে আগস্ট আন্দোলন স্বার্থক আন্দোলন।