সামাজিক দূষণ বাংলা প্রবন্ধ রচনা | প্রবন্ধ রচনা পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

সামাজিক দূষণ

ভূমিকা :

সভ্য মানুষ একদিন অরণ্যের জন্তু থেকে নিজেদের স্বতন্ত্র করে সভ্যতার বিকাশের লক্ষ্যে সমাজ গড়েছিল। বর্তমানে সেই সমাজে বাসা বেঁধেছে দুর্নীতি ও দূষণ। দূষণ নেই কোথায়? শুধু কী পরিবেশে দূষণ? মোটেই না—দূষণ আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে । জল, বায়ু, শব্দ, ভূমি প্রভৃতিতে শুধু দূষণ নয়, দূষণ আজ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনে, সমাজদেহের অস্থিমজ্জায়। অমৃতের সন্তান মানুষের অন্তরে আজ হলাহল। কোথায় সেই নীলকণ্ঠ? তাহলে তো অপমৃত্যু অবশ্যম্ভাবী কেননা – শুধু আকাশ বাতাস নয়, মানুষের অন্তর ভরে গিয়েছে হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা-সুবিধাবাদ, কৃত্রিমতা ও অহমিকায়, মানুষ আজ ষড়রিপুর দাস। কে কাকে বশে আনবে? কারণ দূষণ আর দুর্নীতি তো রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যেই। তাই সময় থাকতে এই ক্ষত সারানো ভাল, নইলে পস্তাতে হবে।

স্বরুপ :

শিল্পায়ন, নগরায়ন ও বিশ্বায়ন—এই তিন অয়নের সুবাদে বর্তমান বিশ্বের আর্থ- সামাজিক কাঠামোয় এসেছে আমূল পরিবর্তন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দারিদ্র্য এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য দূষণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে (Population > Pov- erty > Pollution)। তবে এই দূষণ পরিবেশে। কিন্তু সামাজিক দূষণ বৃদ্ধি পেল মানুষ যখন অপরিমিত ভোগাকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে দিন কাটাবার স্বপ্ন দেখল। মানুষ যতই যন্ত্রনির্ভর ও কৃত্রিম হল ততই তার মধ্যে বাসা বাধল দূষণের বীজ। কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো মিথেন, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, ডি.ডি.টি. প্রভৃতির সঙ্গে বৃদ্ধি পেল মানুষের অতিরিক্ত ভোগাকাঙ্ক্ষা, অর্থলিপ্সা, প্রতিশোধস্পৃহা, অবৈধ প্রতিযোগিতার ভাব, পারস্পরিক অবিশ্বাস, অপরকে ঠকিয়ে নিজেকে জাহির করার বাসনা, হিংসা-বিদ্বেষ- হানাহানি ও তজ্জনিত ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব। মার্কেট ইকনমি-র প্রভাবে মানুষের উন্নততর বৃত্তিগুলি যেমন—পরোপকার, দেশসেবা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সহ্যশক্তি, শ্রমশীলতা প্রভৃতি ক রের মতো উবে গেল। ফলে হৃদয়বৃত্তি বিকি-কিনির মার্কেটে পরিণত হল পণ্যে। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক চাতুর্য ও মিডিয়া এল দোসররূপে, কেননা এদের কাজ হল পণ্যের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাকে পণ্যমুখী করা। তাতেই বাজিমাৎ।

কারণ :

কেনই বা হবে না? আজকের একজন শিশু শৈশবেই জানল তার প্রতিবেশী দেশ শত্ৰু। তাই সে বড় হয়ে প্রতিবেশীকে শত্রু বানাল, শত্রু বানাল তার ভাই-বোনকে। একজন শিশুর বিকাশে মাধ্যম হিসাবে তার পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ তাকে শেখাল নানান নীতিহীনতা। ফলে সে যখন শৈশব থেকে কৈশোরে পদার্পণ করল তখন সে হল মূল্যবোধহীনতার শিকার। তারপর ক্যাটারিং সংস্কৃতি ও চাউমিন কালচার ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতির সমাধি শয্যা ঘটাল। আত্মীয়তা করার জন্য আর বাড়িতে যাওয়ার প্রয়োজন হল না। ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়তা, ক্যাটারিং-এর মাধ্যমে অতিথিসেবা, চিড়ে মুড়ির পরিবর্তে ফাস্টফুড, মাতৃদুগ্ধের পরিবর্তে সেরেলাক, গোদুগ্ধের জায়গায় এল কমপ্ল্যান-হরলিক্স-ব্রেনোলিয়া-পিডিয়াসিওর। এতে মগজের বোধ-বুদ্ধি বাড়ে, না মগজ ধোলাই হয়?

পরিণাম :

মগজ ধোলাই না হলে যে মসনদে টিকে থাকা যায় না। তাই যেন-তেন-প্রকারেণ দেশসেবার নামে, রাজনীতির নামে চালাকি ও ভণ্ডামি। মানুষ তো ‘হীরক রাজার দেশে’-র যন্তরমন্তরের ঘরের উপাদান মাত্র। তাই তাকে যা গেলানো হবে তাই গিলবে, যা বলানো হবে তাই বলবে। এভাবেই তো দীর্ঘজীবী বিপ্লব সংগঠিত হবে। মানুষকে সুবিধাবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত করে, তাদের প্রতিবাদী চেতনাকে কৌশল ও চাতুর্যের দ্বারা স্লো পয়জন করে, কিম্বা টিকে থাকার মন্ত্র যখন দেশচালকদের করায়ত্ত হয়, তখন রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যেই প্রকাশিত হয় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিষবাষ্প। যান্ত্রিকতা ও শ্রমবিমুখতার কালো ধোঁয়া এই বিষবাষ্পের সঙ্গে মিশে গিয়ে সোনায় সোহাগায় পরিণত হয়। দেখা দেয় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কর্কট রোগের ক্ষত। যে ক্ষতের দগদগে ঘা আজ সমাজের সর্বত্র। আগে ছেলেমেয়েরা একান্নবর্তী পরিবারে মানুষ হত। পরস্পর পরস্পরের সম্পর্কে বোঝাপড়ার মাধ্যমে বড় হয়ে উঠত। দাদু ঠাকুমার কোলে শুয়ে পুরাতন নীতিমূলক গল্প শুনত। কিন্তু ‘হায়রে! কবে কেটে গেছে সে কাল, তাই আজকের যুবক-যুবতীরা প্রকৃত স্নেহ-ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রকৃত শিক্ষার অভাবে মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছে। শুধু কি তাই, আজকের অভিভাবকরা নিজেদের ছেলেদের সামনে কোন অপরাধমূলক কাজ করতে দ্বিধা করে না। সর্বোপরি, বর্তমান সমাজে ন্যায়-অন্যায় বোধের বড় অভাব, যে দোষী সে সমাজে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়, ভাল কাজ করেও কোন পুরস্কার জোটে না। পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা যদি না থাকে তাহলে মূল্যবোধই বা কীভাবে গড়ে উঠবে।

প্রতিকার :

আজকে কোন ছাত্র-যুবককে তার জীবনের লক্ষ্য কি জিজ্ঞাসা করলে, সে বলে না সে দেশসেবক হবে। কারণ দেশসেবা কথাটাই আজ মূল্যহীন। বরং সে একজন বিজ্ঞানী হয়ে বিদেশে গিয়ে গবেষণা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করবে—এই তার লক্ষ্য। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রথমেই চাই মনুষ্যত্বের জাগরণ, কারণ গাছটি যে মাটি থেকে তার রসদ নিয়ে বেড়ে উঠল সে যদি সেই মাটিকেই ছায়াদান না করে তাহলে তার বেড়ে ওঠাটাই বৃথা। এই বোধের উদ্বোধন একান্ত জরুরি। দুইঃ আরো জরুরি, সমাজে সামাজিক বন্ধনের শৃঙ্খল রচনা করা। এজন্য পাড়ায় পাড়ায় কাউন্সেলিং সেন্টার গড়ে তোলা যেতে পারে। তিন ঃ যুবসমাজকে এবং তাদের শক্তিকে যথাযথ ব্যবহার করার জন্য সবাইকে
ভাবতে হবে। তাদের মধ্যে কর্মমুখী মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। তাদের শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য কর্মমুখী চেষ্টা সংশ্লিষ্ট সবাইকে করতে হবে। চারঃ যুবসমাজের মধ্যে সংগ্রামী মনোবৃত্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। কোন পলায়নপর মনোবৃত্তি বা ধ্বংসাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি
বা নেতিমূলক মনোভাবের শিকার যাতে যুবসমাজ না হয় তাও দেখতে হবে। পাঁচ ঃ প্রয়োজন, মনীষীদের আদর্শ ও পথের অনুধ্যান ও চিন্তন। সেজন্য পিতা-মাতা শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আদর্শবান হতে হবে।

উপসংহার :

যে দেশে যুবসমাজ তথা বেশির ভাগ মানুষ নৈতিক মূল্যবোধহীনতায় ভোগে সেটা যে কত বড় লজ্জার ব্যাপার, তা নিশ্চয় যে কোন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিই উপলব্ধি করতে পারবেন। এ লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে গেলে মানুষকে মনুষ্যত্ববোধের মন্ত্রে জাগ্রত হতে হবে। সমাজের মানুষের কামনা হবে—অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা সব কথা নয়—চাই বিবেক। এই বিবেক বোধে যদি মানুষ জাগ্রত হয় এবং অহেতুক পরানুকরণ প্রবৃত্তি বন্ধ করে শ্রমশীল হয় তাহলে আগামী সমাজব্যবস্থা দূষণমুক্ত হয়ে অনেকটা শুচিসুন্দর হয়ে উঠতে পারে।

▣এ অনুসরণে লেখা যায় : সমাজের অস্থিমজ্জায় দূষণ।

________

Your Queries:

শহরাঞ্চলের দূষণ
প্লাস্টিক দূষণের উৎস
দূষণ রচনা
মাটি দূষণের উৎস
দূষণের প্রভাব
সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব
প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ বলতে কি বুঝায়
পরিবেশের ভূমিকা
পরিবেশ দূষণের কুফল
দূষণের প্রভাব
শিল্প দূষণের প্রভাব
শব্দ দূষণের উৎস
দষণ তনট একট শঙখল সমবদধ
পরবশর সজঞ লখন পরবশ কত
সমজক দষণ তনট একট শঙখল
পরবশ দষণর করণ আপনর ক
সজঞ লখন পরবশ কত পরকর