শিখনের সংজ্ঞা দাও। শিখনের বৈশিষ্ট্য লেখাে। (2+6)
উত্তর:-
শিখনের সংজ্ঞা
মনােবিদগণ শিখনের একাধিক সংজ্ঞা দিয়েছেন। এখানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল ।
1) অতীত অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, সক্রিয়তা এবং অনুশীলনের প্রভাবে ব্যক্তিজীবনে আচরণধারা পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে শিখন বলা হয়।
2) যে মানসিক প্রক্রিয়া অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আচরণের প্রগতিশীল পরিবর্তনের দ্বারা, ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটিয়ে তাকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে, তাকে শিখন বলে।
3) অতীতের অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণের প্রভাবে আচরণের পরিবর্তনের প্রক্রিয়াই হল শিখন।
শিখনের বৈশিষ্ট্য
1)উদ্দেশমুখী: প্রথাগত শিক্ষায় শিখন উদ্দেশমুখী অর্থাৎ, পূর্বনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আয়ত্ত করার জন্যই শিক্ষার্থীরা শেখে।
2)বিকাশমনি: শিখন হল একটি ক্রমবিকাশমান প্রক্রিয়া। জন্মকাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনে শিখনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
3) অভিযোজনমূলক: শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণীরা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে শেখে এবং নতুন কোনাে সমস্যায় পড়লে সমাধানের পথ খুঁজে বার করে।
4) চাহিদানির্ভর: শিখন প্রক্রিয়া চাহিদানির্ভর অর্থাৎ, শিখনকে চাহিদাপূরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
5)ব্যক্তি ও সমাজনির্ভর: শিখন যেমন ব্যক্তির চাহিদার ওপর নির্ভর করে, তেমনি সমাজের চাহিদার দ্বারাও শিখন প্রভাবিত হয়। শিখন হল একই সঙ্গে ব্যক্তি ও সমাজনির্ভর প্রক্রিয়া।
6) অচরণগত পরিবর্তন: ব্যক্তি যখন কোনাে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন সে পূর্বাৰ্জিত আচরণের দ্বারা তা সমাধানের চেষ্টা করে। তাই শিখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি তার আচরণের পরিবর্তন করে।
7) স্থায়ী পরিবর্তন: শিখনের ফলে যে পরিবর্তন হয় তা স্থায়ী প্রকৃতির। অন্যান্য অস্থায়ী বা সাময়িক পরিবর্তনের সঙ্গে শিখনজাত পরিবর্তনের এখানেই পার্থক্য।
8) সার্বিক বিকাশে সহায়ক: শিখনের ফলে ব্যক্তি যে কেবলমাত্র কয়েকটি কৌশল অর্জন করে তাই নয়, শিখনের ফলে ব্যক্তির বিভিন্ন দিকেরও বিকাশ ঘটে।
9) অনুশীলনসাপেক্ষ: পুরােনাে আচরণ ত্যাগ করে নতুন নতুন আচরণ আয়ত্ত করার জন্য ব্যক্তিকে বারবার অনুশীলন করতে হয় অনুশীলন ছাড়া শিখন স্থায়ী হয় না।
10) শিখনের হার: পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রথম দিকে শিখন খুব দ্রুত ঘটে। পরে এর হার হ্রাস পায় এবং এমন এক সময় আসে যখন অনুশীলনের ফলেও শিখনের উন্নতি হয় না। একেই শিখনের অধিত্যকা বলে।
11)অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন: প্রতিটি শিখনই অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন। প্রতিটি শিখনেই পুরােনাে অভিজ্ঞতা নতুন পরিস্থিতিতে পুনর্গঠিত হয়ে কার্যকরী হয়। অর্থাৎ, শিখনের ফলে অভিজ্ঞতাসমূহের পুনর্গঠন হয়।
12) সক্রিয় প্রক্রিয়া: ব্যক্তি নিজে সক্রিয় না হলে শিখন সম্ভব নয়। শিখনের জন্য চাই প্রচেষ্টা। প্রচেষ্টায় অভাব দেখা দিলে যথাযথ শিখন হয় না।
13) সর্বজনীন প্রক্রিয়া: শিখন কেবলমাত্র মানুষের মধ্যেই। সীমাবদ্ধ নয়। ইতর প্রাণীরাও এটি শিখে থাকে, কারণ তারাও পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে শিখনের মাধ্যমে
নিজেদের মানিয়ে নেয়।
14) পরিবেশের ফল: মানুষের যাবতীয় অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় পরিবেশ থেকেই। সেই কারণে শিখন হল পরিবেশের ফল। উপযুক্ত পরিবেশ শিখনকে ত্বরান্বিত করে।
15) প্রেষণানির্ভর: মানুষের একটি অভ্যন্তরীণ স্পৃহা হল প্রেষণা। প্রেষণা প্রত্যেকটি কাজে মানুষকে শক্তি জোগায় প্রেষণা ছাড়া শিখন অসম্ভব।
16)কুসংস্কার দূরীকরণ: শিখন ব্যক্তিকে যুক্তিনির্ভর করে। তােলে এবং কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদি থেকে ব্যক্তিকে মুক্ত হতে সাহায্য করে।
[su_posts template=”templates/teaser-loop.php” posts_per_page=”5″ order=”desc”]