রাজ্যের নাম বদল

[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”2″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]

রাজ্যের নাম বদল

ভূমিকা :

প্রায় এক দশক পর আবার রাজ্যের নামবদল খবরের শিরােনামে পৌঁছে গেছে এবং এ বিষয়ে বিধানসভায় ঐক্যমত হলেও বাংলার সুশীল সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যদিও বিশিষ্ট নাম লক্ষণাত্মক, তবুও রাজ্যর নামবদল-এর পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি উত্থাপিত হয়েছে।

বাঙালিরা আর একবার মেতেছে তাদের এই পুরাতন নাম নিয়ে—এ নিয়ে চাপান-উতোের, চ্যানেলে চ্যানেলে বিতর্ক উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। এখনাে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের প্রস্তাব মেনে নেয়নি। এজন্য রাজনীতিও সরগরম হয়ে উঠেছে।

পটভূমি :

গত বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সর্বদলীয় বৈঠকে বাংলা নামটি বাংলায় ও ইংরেজিতে Bengal ব্যবহারের জন্য উত্থাপিত হয়।

কিন্তু সর্বদলীয় বৈঠকে বিজেপি, কংগ্রেস, বামদলগুলি নামবদলের পদ্ধতি ও নাম নিয়ে ঐক্যমতে আসতে পারেনি, সরকার পক্ষের সঙ্গে।

তারপর বিধানসভার বৈঠক ডেকে সরকার ভােটাভুটিতে গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভােটে নামবদলের প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিতে সক্ষম হয়।

এর আগেও চারটি নাম উত্থাপিত হয়—বাংলা, বঙ্গ, বঙ্গভূমি ও পশ্চিমবঙ্গ এবং শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ নামটি বহাল থাকলেও ‘West Bengal’ পরিবর্তিত হয়ে ‘Paschimbanga’ করার সিদ্ধান্ত হয়।

এই প্রসঙ্গে স্মরণযােগ্য যে, ১৯৯৭-তে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ক্যালকাটা’-র পরিবর্তে ‘কলিকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তে বাংলা’ করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হলেও সেবারে সরকার আর এ বিষয়ে অগ্রসর হয়নি। তাই পশ্চিমবঙ্গ’ ও ‘West Bengal’ চলেই আসছিল।

যুক্তি :

বর্তমান সরকারের নামবদলের ক্ষেত্রে যুক্তিগুলি হলঃ (এক) ওয়েস্ট বেঙ্গল এই ইংরেজি নামের ক্ষেত্রে ‘W’ অক্ষরটি বর্ণমালার শেষের দিকে হওয়ায় জাতীয় ক্ষেত্রে সুযােগসুবিধা প্রথমের দিকে পাওয়া যায় না।

জাতীয় সম্মেলন বা ঐ জাতীয় সভা-সমিতি প্রভৃতিতে রাজ্যের নাম ‘W’ দিয়ে শুরু হওয়ায় সবার শেষে ডাক পড়ে—এটা সম্মানের ক্ষেত্রে বা প্রতিযােগিতার বাজারে কাম্য নয়।

(দুই) বােম্বাই, মাদ্রাজ, ব্যাঙ্গালাের নামগুলি যদি বদল হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ-ই বা তার ব্যতিক্রম হবে কেন। (তিন) উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজ্যকে টেক্কা দিতে গেলে রাজ্যের নামের আদ্যক্ষর বর্ণমালার প্রথমের দিকের বর্ণ হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

আজকাল অভিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের নাম রাখছেন ABCD প্রভৃতি বর্ণমালায় প্রথমের দিকের আদ্যক্ষর দিয়ে। (চার) রাজ্যের বাইরে বা দেশের বাইরে Bengal নামটা বেশি ব্যবহৃত হয়।

বিতর্ক :

পশ্চিমবঙ্গ নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যাঁরা সহমত পােষণ করেন তাদের মত হল পূর্ববঙ্গ যেহেতু বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেখানে পশ্চিমবঙ্গ নাম রাখার কোনাে যৌক্তিকতা নেই।

ইতিহাস যারা চর্চা করেন তাঁরা জানেন ইতিহাস কোনও অনড় অক্ষয় ব্যাপার নয়, বহুবার বহুরকম পট পরিবর্তনেই ইতিহাসের আসল রােমাঞ। বহু দেশ বহু নগরের নাম বারবার পরিবর্তিত হয়েছে, নতুন নাম থেকে পুরনাে নামে ফিরে যাওয়া হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা, নতুন পরিবর্তনও নয়; বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাকি অংশটির নাম বাংলা হওয়াই তাে ইতিহাস সম্মত।

আর মানুষ ইতিহাস আঁকড়ে ধরে বাঁচে না, বর্তমানের বাস্তবতা নিয়ে বাঁচে। অন্যদিকে অনেকে বাংলা নামটির সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাম এক হয়ে যাচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।

সেজন্য অনেকে ‘বঙ্গভূমি’, ‘বঙ্গপ্রদেশ’ নামটি রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন। তাছাড়া বাংলা নামটি শুনতে ন্যাড়া লাগে।

  অনেকে ‘বঙ্গ’ শব্দটির পক্ষে। কেননা, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’, ‘বঙ্গোপসাগর’ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অন্যদিকে আমার সােনার বাংলা’, ‘বাংলাভাষা’ প্রভৃতিও ব্যবহৃত হচ্ছে।

অন্যদিকে ইংরেজি নাম ‘Bengal’ও ব্যবহৃত হয়। যেমন-Bay of Bengal, Royal Bengal Tiger’ প্রভৃতি। তাছাড়া বাংলা নাম ও ইংরেজি নামের সহাবস্থানের মধ্যে অনেকে ঔপনিবেশিকতার গন্ধ পাচ্ছেন।

একথা ঠিকই ইতিহাসকে মুছে ফেলে ঔপনিবেশিকতার গন্ধ দূর করা যায় না, আত্মসম্মানে ভর করে নতুন গন্ধ তৈরি করলেই একমাত্র পুরাতন গন্ধের তীব্রতা কমে।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশ অনুযায়ী ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলাতে একটি নাম রাখার কথা জানানাের ফলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বাংলা’ সব ভাষাতেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমােদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

সেই অনুমােদন এলে নতুন নাম হবে রাজ্যের।

উপসংহার :

এসব বিষয়ে বিতর্ক আছে, বিতর্ক থাকবে। যাঁরা পরিবর্তনের জন্য প্রয়াসী তাঁর বিধানসভায় বিষয়টি সংখ্যাধিক্যে পাশ করিয়েছেন—‘বাংলা’ ও ‘Bangla এইভাবে আগামীদিন এই রাজ্যের কাজ চলবে।

এবার বিষয়টি যাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে। তারপর সেই নামটিতে বৈধ সিলমােহর পড়বে। তা সম্ভব হলে রাজ্যের বিপুল গাড়ির নেমপ্লেট পরিবর্তন করতে হবে।

সে যাই হােক, হুজুগ-প্রিয় বাঙালি যে বেশ কিছুদিন এই নামবদল নিয়ে হুজুগে মাতবে, তর্ক বিতর্কে অধিক আগ্রহী হয়ে এবং নিজ নিজ কর্মে শৈথিল্য দেখিয়ে বাগাড়ম্বরে আত্মতৃপ্ত হবে তা বলা বাহুল্য।

তবে সরকারের সদিচ্ছা এই নাম পরিবর্তনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে—যেহেতু এই উদ্যোগ পূর্বে সফল হয়নি।


[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”2″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]