রাজা রামমােহন রায়ের অবদান। অথবা – জাতীয় জাগরণে ও সমাজ সংস্কারে রাজা রামমােহন রায়ের অবদান কী ছিল?

রাজা রামমােহন রায়ের অবদান।
       অথবা
জাতীয় জাগরণে ও সমাজ সংস্কারে রাজা রামমােহন রায়ের অবদান কী ছিল?

উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ হলেন রাজা রামমােহন রায়। ভারতের ধর্মসমাজ ও সংস্কৃতি তার ওপর ভিত্তি করেই আধুনিক রূপ পেয়েছে। তাই তাঁকে ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত বলা হয়েছে।

 সমাজ সংস্কারের ভূমিকা :

  ১. সতীদাহ প্রথা নিবারণ : তখনকার দিনে একটি নারকীয় সামাজিক প্রথা ছিল সতীদাহ। তৎকালীন হিন্দুসমাজ মৃত স্বামীর চিতায় তার স্ত্রীকে নববধূর সাজে সাজিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে পুড়িয়ে মারা হত। ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর লর্ড বেন্টিঙ্ক ‘সতীদাহ রদ আইন পাশ করেন এবং এই প্রথা বন্ধ হয়।
২. নারীমুক্তি আন্দোলন : তৎকালীন যুগে নারীদের কোনাে স্বাধীনতা ছিল না। বালবিধবাদের নানা নির্যাতন সহ্য করতে হত। তিনি নারীদের উন্নতির জন্য আন্দোলন করেন। এছাড়া গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন, বাল্যবিবাহ প্রভৃতি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন।

৩. জাতিভেদ প্রথার বিরােধিতা : রামমােহন জাতিভেদ প্রথার তীব্র সমালােচনা করেন এবং এই প্রথার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রমাণ তুলে ধরার জন্য ‘বজ্ৰসূচি’ গ্রন্থটি বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন।

ধর্ম সংস্কারের ভূমিকা :
১. আত্মীয়সভা গঠন : ১৮১৫ খ্রি. রামমােহন রায় কলকাতায় ‘আত্মীয়সভা গঠন করেন। মুর্তিপূজার অসারতা, জাতিভেদ প্রথার বিরােধিতা করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য।
২. ব্রাত্মসভা স্থাপন : ১৮২৮ খ্রি. রামমােহন রায় ব্রাত্মসভা স্থাপন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল বহু দেবতাদের স্থলে একেশ্বরবাদী মতাদর্শ প্রচার করা এবং নিরাকার ব্রত্মের উপাসনা করা।

শিক্ষা সংস্কারে ভূমিকা :
. স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা : রামমােহন রায় শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেন। তিনি হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। এছাড়া বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

২. সংবাদপত্র প্রকাশনা : রামমােহন সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের দিশারি ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষায় ‘সম্বাদ কৌমুদী’ (১৮২১ খ্রি.) এবং ফারসিতে প্রকাশিত ‘মিরাৎ-উল-আকবর’ (১৮২২ খ্রি.) ইত্যাদি ছিল তার উল্লেখযােগ্য।

রাজনৈতিক সংস্কারে ভূমিকা :
পত্র পত্রিকার মাধ্যমে রাজনৈতিক ঘটনা প্রকাশ : সমকালীন ইউরােপের বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা রামমােহনের বিভিন্ন পত্রিকায় লক্ষ করা যায় যেমন—ইতালির রাজতন্ত্র বিরােধী অভ্যুত্থানের ব্যর্থতায় তিনি হতাশ হন। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকায় স্পেন বিরােধী বিদ্রোহের সফলতা এবং ফ্রান্স ১৮৩০ খ্রি. জুলাই বিপ্লবের সাফল্যে তিনি উৎফুল্ল

রাজনৈতিক ভাবে পার্লামেন্টের হাতে প্রদান : তিনি মনে করতেন ভারতীয়দের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটানাের জন্য ভারতবর্ষের শাসনভার কোম্পানির হাতে থেকে নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাতে দেওয়াই উচিত।

মূল্যায়ন : বাংলার সমাজ সংস্কারকদের মধ্যে রামমােহন রায় উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তৎকালীন সময় বাংলার প্রতিকূল সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যেও ধর্ম সংস্কারে ব্রতী হয়ে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন। যে কোন নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক বিচারে রামমােহন ছিলেন ভারতের প্রগতিশীল মতবাদ ও রাজনৈতিক আন্দোলনের পথপ্রদর্শক।