ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে।( একাদশ শ্রেণির বিষয় ইতিহাস)

অর্থনীতির বিভিন্ন দিক

০ বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :

৩। ম্যানর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে।

উ: মধ্যযুগে সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যবস্থায় ম্যানর। প্রথা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ম্যানরগুলি ছিল এক একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ গ্রাম। প্রতিটি ম্যানরে বিভিন্ন পেশার মানুষ বসবাস করত এবং ম্যানরের যাবতীয় প্রয়ােজনীয় কাজ সম্পন্ন করত। প্রত্যেকের প্রয়ােজনীয় সামগ্রী ম্যানরেই উৎপাদিত বা তৈরি হত।

স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিটি ম্যানর ছিল সাজানাে গােছানাে। ম্যানরের একদিকে পথের পাশে তৈরি হত কৃষকের কুঁড়েঘর, বাড়ি গুলাের
চারপাশে থাকত সবজি বাগান, আস্তাবল ও হাঁস-মুরগির খামার। ম্যানরের অন্য দিকে থাকত চার্চ, যাজকদের ঘর ও কবর খানা। এছাড়া ম্যানরে কারিগরদের কারখানা ও রুটি তৈরির বেকারি থাকত।

প্রতি ম্যানরে বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি, পশুচারণভূমি, পতিত জমি, জঙ্গল, জলাভূমি, কৃষকের বাসগৃহ শ্রমিক ও
কারিগরদের বাসগৃহ, গির্জা ইত্যাদি থাকত। ম্যানরের জমি মূলত চার ভাগে বিভক্ত ছিল— ডিমিন – প্রভুর খাসজমি, দরদ্রি কৃষক ও ভূমিদাসদের বসবাস ও চাষের জমি, স্বাধীন কৃষকদের জমি, সর্ব সাধারণের ব্যবহারের জন্য জঙ্গল, তৃণভূমি পশুচারণভূমি ইত্যাদি।

সামন্ত প্রভু নিজের দখলে রাখা খাস জমিতে কৃষক ও ভূমিদাসদের বেগার খাটিয়ে ফসল উৎপদান করতেন। সামন্ত প্রভু তার জমির বাকি অংশ তার অধীনস্থ কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন।
ম্যানরের বসবাসকারী ১২-৬০টি কৃষক পরিবারের মধ্যে অবশিষ্ট জমি বণ্টিত হত। দরিদ্র কৃষকরা তাদের প্রভুকে বিভিন্ন ধরনের কর দিয়ে ও বেগার শ্রম দিয়ে এই জমি চাষ করতে পরতেন।

ম্যানর ব্যবস্থা একজন প্রভুর অধীনে, ম্যানর এলাকায় অনুগত মানব গােষ্ঠী বসবাস করত। এদের ওপর ম প্রভুর চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করত। এই অন কৃষকগােষ্টী ম্যানর প্রভুর খাস জমিসহ অন্যান্য জমি উৎপাদন কাজে নিযুক্ত থাকত। ম্যানর প্রভু এই জমি যাবতীয় উৎপাদন ভােগ করত। ম্যানরের প্রশ্ন
পরিচালনার উদ্দেশ্যে তিনি স্টুয়ার্ড, বেইলিফ, রিভি, প্রত উপাধিধারী উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কয়েকজন কর্মচারী নিয়ােগ করতেন।

স্টুয়ার্ড ম্যানর প্রভুর সম্পত্তি ও বালিকা
দেখাশােনা করতেন এবং আদালত পরিচালনা করতে বেইলিফরা উৎপাদন তদারকি করতেন। খাজনা ও জরিমানা আদায় করতেন এবং আয়ব্যয়ের হিসাব
রাখতেন। রিভি কৃষকদের সুবিধে অসুবিধে দেখতেন। ম্যানরে কৃষি উৎপাদনে প্রথম দিকে গুরুর ব্যবহার বেশি। হলেও দ্বাদশ শতকে ঘােড়ার ব্যবহার বাড়তে থাকে।

কোনাে কোনাে ম্যানরে সমবারে মাধ্যমে চাষের কাজ হত, মাঝে মধ্যে জমিতে চাষাবাস বন্ধ রেখে উৎপাদন বৃদ্ধির
চেষ্টা করা হত। ফসলের সঙ্গে ঋতুর সম্পর্ক উপলব্ধি করে ম্যানরে শরৎ-বসন্তকালে গম ও রাই চাষ করা শুরু করে। বনাঞ্চলে শূকর পালন বিশেষ উপযােগী ছিল। সামন্ত প্রভুর অধীনে ম্যানরের কৃষক ও ভূমিদাসরা উৎপাদনকার্যে অংশ দিয়ে দেশের

অর্থনীতিকে সচল রাখত। মূলত গ্রামের চাহিদা অনুসারেই উৎপাদন কার্য। পরিচালিত হত। প্রথমদিকে ম্যানরের কৃষিজমিতে বছরে দুটি এবং পরে তিনটি চাষ হত। অগণিত কৃষক ও ভূমিদাস
অক্লান্ত পরিশ্রম করে ম্যানরের জমিতে খাদ্য ফসল উৎপাদন করত এবং অন্যান্য কাজগুলি সম্পন্ন করে মানুষের জীবনযাত্রা সচল রাখত। অবশ্য অনুন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে উৎপাদনের পরিমাণ কম হত।


৪। ভারতীয় গিল্ড বা বণিক সংঘগুলির সাংগঠনিক কাঠামাে ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলােচনা করাে।

উ: প্রাচীন ও আদি মধ্য যুগে ভারতের বিপুল সংখ্যক বণিক, শিল্পী, কারিগর প্রমুখ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। নিজেদের গােষ্ঠী স্বার্থ সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে বণিক শিল্পী, কারিগর
প্রমুখ নিজেদের পৃথক পৃথক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করত। এই সংগঠনগুলি গিল্ড বা সংঘ বা শ্রেণি নামে পরিচিত ছিল।
নিজস্ব নিয়ম কানুন অনুসারে গিন্ডের কার্যকলাপ পরিচালিত হত। গিল্ডগুলি বর্তমানকালের ব্যাংকের মতাে স্থাবর সম্পত্তি ও নগদ অর্থ আমানত হিসাবে জমা রেখে আমানতকারীকে সুদ দিত। গিন্ড আবার জমা রাখা অর্থ সুদে অন্যকে ঋণ দিত স্থানীয় শিল্প ও বাণিজ্যে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করে গিন্ডগুলি স্থানীয় শিল্প ও বাণিজ্যকে রক্ষা করত।

গিল্ডের বিচারালয়ে সদস্যদের যাবতীয় ব্যক্তিগত বিরােধ, অপরাধ ও পারিবারিক বিবাদ প্রভৃতির বিচার করে মীমাংসা
করা হত। গিল্ডগুলি পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে এবং নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয় করতে উদ্যোগ নিত। রাজকোষে নিয়মিত রাজস্ব প্রদান করে গিল্ডগুলি রাজকীয় কাজে সহায়তা করত। রাষ্ট্রের প্রয়ােজনে গিন্ডগুলি রাজাকে সামরিক সাহায্য দিত।