মহুয়ার দেশ কবিতা বিষয়বস্তু | কবিতা সংক্ষেপ আলোচনা

মহুয়ার দেশ

সমর সেন

(১)
মাঝে মাঝে সন্ধ্যার জলস্রোতে
অলস সূর্য দেয় এঁকে
গলিত সােনার মতাে উজ্জ্বল আলাের স্তম্ভ,
আর আগুন লাগে জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায়।
সেই উজ্জ্বল স্তব্ধতায়।
ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে
শীতের দুঃস্বপ্নের মতাে।
অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ,
সমস্তক্ষণ সেখানে পথের দুধারে ছায়া ফেলে

দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য,
আর দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস
রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলােড়িত করে।
আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল,
নামুক মহুয়ার গন্ধ।

(২)
এখানে অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে
মাঝে মাঝে শুনি।
মহুয়া বনের ধারে কয়লার খনির
গভীর, বিশাল শব্দ,

আর শিশিরে-ভেজা সবুজ সকালে
অবসন্ন মানুষের শরীরে দেখি ধুলাের কলঙ্ক,
ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়।
কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।


মহুয়ার দেশ কবিতা বিষয়বস্তু

বিষয়-সংক্ষেপ

অলস সূর্য মাঝে মাঝে সন্ধ্যার জলস্রোতে গলিত সােনার মতাে উজ্জ্বল আলাের স্তম্ভ এঁকে দেয়।

আর জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায় আগুন লাগে। সেই উজ্জ্বল স্তব্ধতায় ধোঁয়ার বঙ্কিম নিশ্বাস শীতের দুঃস্বপ্নের মতাে ঘুরে-ফিরে ঘরে আসে।

শহর কলকাতা থেকে অনেক অনেক দূরে মেঘমদির মহুয়ার দেশ। সেখানে পথের ধারে সমস্তক্ষণ দীর্ঘ রহস্যভরা ছায়া
ফেলে দেবদারু।

আর রাতের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলােড়িত করে দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস। কবির কামনা, তাঁর ক্লান্তির ওপর মহুয়া ফুল ঝরুক, আর মহুয়ার গন্ধ নামুক।

কিন্তু মহুয়ার দেশকে ঘিরে কবির গড়ে ওঠা রােমান্টিকতার স্বপ্নভঙ্গ হয়। এখানেও যান্ত্রিক সভ্যতার কালাে থাবার গ্রাস।

তাই কবির শান্তি ও স্বপ্নের মহুয়ার দেশ হয়ে ওঠে অসহ্য। নিবিড় অন্ধকারে কবির কানে আসে কয়লাখনির কয়লা তােলার
যান্ত্রিক গভীর বিশাল শব্দ।

সকালে শিশিরভেজা সবুজ প্রেক্ষাপটও তার ক্ষণিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে কয়লাখনি থেকে উঠে আসা শ্ৰমশ্রান্ত অবসন্ন ধূলিধূসরিত শ্রমিকের শারীরিক উপস্থিতিতে।

তাদের রাত্রিজাগা ঘুমহীন ক্লান্ত চোখে হানা দেয় দুঃস্বপ্ন।


মহুয়ার দেশ কবিতা বিষয়বস্তু