ভারতের আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায় কীভাবে অরণ্যের ওপর নির্ভর করে জীবিকানির্বাহ করত এবং ব্রিটিশ সরকার কীভাবে তাদের অরণের অধিকার হরণ করে নেয়?

উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় নোট 

প্রতিরােধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় নোট Part-2
প্রতিরােধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ বড় প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় নোট Part-1
উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় নোট

 ভারতের আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায় কীভাবে অরণ্যের ওপর নির্ভর করে জীবিকানির্বাহ করত এবং ব্রিটিশ সরকার কীভাবে তাদের অরণের অধিকার হরণ করে নেয়?

 উত্তর

আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার হরণ

ভূমিকা: ভারতের প্রাচীন বাসিন্দা আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন ছিল খুবই সরল প্রকৃতির। তারা মূলত অরণ্যের ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকানির্বাহ করত।

[1] বসবাস: ভারতের উপজাতি বা আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি সাধারণত তথাকথিত সভ্য সমাজ থেকে অনেক দূরে প্রত্যন্ত অরণ্যসংকুল ও পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করত।

[2]অরণ্য সম্পদ সংগ্রহ: ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আদিবাসীরা অরণ্যের কাঠ, ফলমূল ও বিভিন্ন বনজ সম্পদ সংগ্রহ, পশুপাখি শিকার প্রভৃতির মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করত।

[3] জীবিকানির্বাহ: আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি অরণ্যের সম্পদ ভােগ এবং বিক্রি দুইই করত। তারা কঠোর পরিশ্রম করে বনভূমি পরিষ্কার করে, অনুর্বর পতিত জমি উদ্ধার করে সেখানে চাষবাস শুরু করে।

কিন্তু অষ্টাদশ শতক থেকে ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর সরকার নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেয়। যেমন—

[1] অরণ্যে সরকারি আধিপত্য: ব্রিটিশ সরকার এদেশে নতুন নতুন শহরের নির্মাণকার্য, জাহাজ তৈরি, রেলপথ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি প্রয়ােজনে ভারতের অরণ্য সম্পদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

[2] আদিবাসীদের অধিকার হরণ: সরকার বাধানিষেধের মাধ্যমে আদিবাসীদের অরণ্যের বনজ সম্পদ আহরণের অধিকার কেড়ে নেয়। এ ছাড়া অরণ্য সনদ, বনবিভাগ গঠন, অরণ্য আইন প্রবর্তন প্রভৃতির ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের অরণ্যের অধিকার হারাতে থাকে।

[3] খাজনা আরোপ: আদিবাসীরা নিজ পরিশ্রমে যে কৃষিজমি উদ্ধার করে তার ওপর সরকার খাজনা নির্ধারণ করে। ব্রিটিশ সরকারের এই অরণ্যনীতির ফলে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হয়।


1. ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে সংঘটিত বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি কী ছিল?

উত্তর:

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের প্রধান কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহের কারণ

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের কৃষক ও উপজাতি গােষ্ঠীর ওপর সরকার এবং তাদের সহযােগী জমিদার ও মহাজন শ্রেণির শােষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন ও বিদ্রোহ শুরু হয়। এসব আন্দোলন বা বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল নিম্নরূপ-

[1] ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধি: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কৃষকদের ওপর ভূমিরাজস্বের বােঝা বিপুল পরিমাণে বাড়িয়ে দিলে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে যায়।

[2] ব্রিটিশ আইন ও বিচারব্যবস্থা: ইংরেজরা ভারতের চিরাচরিত আইনকানুন ও বিচারব্যবস্থা বাতিল করে তাদের নিজস্ব আইন ও বিচারব্যবস্থা চালু করে। ভারতীয় সমাজে এরূপ বিদেশি হস্তক্ষেপে দেশবাসী ক্ষুব্ধ হয়।

[3] চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের তুটি : সরকার প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (১৭৯৩ খ্রি.) ফলে কৃষকরা তাদের জমির মালিকানা হারায় এবং জমির মালিকানা চলে যায় একশ্রেণির নতুন জমিদারদের হাতে। তারা নিজের ইচ্ছামতাে কৃষকদের ওপর কর বৃদ্ধি করে।।

[4] অত্যাচার: জমিদার শ্রেণি কর আদায়ে কৃষকদের ওপর সীমাহীন নির্যাতন শুরু করে এবং যখন তখন কৃষককে জমি থেকে উৎখাত করতে থাকে।

[5] খাদ্যাভাব: সরকার কৃষকদের ধানের পরিবর্তে নীল, পাট, তুলাে প্রভৃতি চাষে বাধ্য করলে কৃষকদের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়।

[6] ঋণের জাল: মহাজন শ্রেণি দরিদ্র প্রজাদের নানাভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে দেয়। ফলে প্রজাদের অবস্থা শােচনীয় হয়ে পড়ে।

[7] কুটিরশিল্প ধ্বংস: ব্রিটেনে শিল্পবিপ্লব ঘটার পর সেখানকার শিল্পজাত পণ্য ভারতের বাজারগুলি দখল করে নিলে ভারতের কুটিরশিল্প ধ্বংস হয় এবং শিল্পী ও কারিগররা বেকার হয়ে পড়ে।


2. ভারতের আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায় কীভাবে অরণ্যের ওপর নির্ভর করে জীবিকানির্বাহ করত এবং ব্রিটিশ সরকার কীভাবে তাদের অরণের অধিকার হরণ করে নেয়?

 উত্তর

আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার হরণ

ভূমিকা: ভারতের প্রাচীন বাসিন্দা আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন ছিল খুবই সরল প্রকৃতির। তারা মূলত অরণ্যের ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকানির্বাহ করত।

[1] বসবাস: ভারতের উপজাতি বা আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি সাধারণত তথাকথিত সভ্য সমাজ থেকে অনেক দূরে প্রত্যন্ত অরণ্যসংকুল ও পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করত।

[2]অরণ্য সম্পদ সংগ্রহ: ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আদিবাসীরা অরণ্যের কাঠ, ফলমূল ও বিভিন্ন বনজ সম্পদ সংগ্রহ, পশুপাখি শিকার প্রভৃতির মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করত।

[3] জীবিকানির্বাহ: আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি অরণ্যের সম্পদ ভােগ এবং বিক্রি দুইই করত। তারা কঠোর পরিশ্রম করে বনভূমি পরিষ্কার করে, অনুর্বর পতিত জমি উদ্ধার করে সেখানে চাষবাস শুরু করে।

কিন্তু অষ্টাদশ শতক থেকে ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর সরকার নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেয়। যেমন—

[1] অরণ্যে সরকারি আধিপত্য: ব্রিটিশ সরকার এদেশে নতুন নতুন শহরের নির্মাণকার্য, জাহাজ তৈরি, রেলপথ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি প্রয়ােজনে ভারতের অরণ্য সম্পদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

[2] আদিবাসীদের অধিকার হরণ: সরকার বাধানিষেধের মাধ্যমে আদিবাসীদের অরণ্যের বনজ সম্পদ আহরণের অধিকার কেড়ে নেয়। এ ছাড়া অরণ্য সনদ, বনবিভাগ গঠন, অরণ্য আইন প্রবর্তন প্রভৃতির ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের অরণ্যের অধিকার হারাতে থাকে।

[3] খাজনা আরোপ: আদিবাসীরা নিজ পরিশ্রমে যে কৃষিজমি উদ্ধার করে তার ওপর সরকার খাজনা নির্ধারণ করে। ব্রিটিশ সরকারের এই অরণ্যনীতির ফলে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হয়।


3. ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতে অরণ্যের ওপর আধিপত্য বৃদ্ধির পদক্ষেপগুলি উল্লেখ করাে।

উত্তর:

ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতে অরণ্যের ওপর আধিপত্য বৃদ্ধির পদক্ষেপ

ভূমিকা: ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতের আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেয় বা ধ্বংস করে। যেমন—

[1] অরণ্য সনদ, ১৮৫৫ খ্রি.: ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ‘অরণ্য সনদ পাস করে। এর দ্বারা সরকার অরণ্যের কাঠ সংগ্রহ ও কাঠের ব্যাবসার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরােপ করে। অরণ্যের শাল, সেগুন প্রভৃতি মূল্যবান কাঠ সরকারের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন ও জীবিকায় টান পড়ে।

[2] বনবিভাগ গঠন: ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে বনবিভাগ গঠন করে। দিয়েত্রিশ ব্র্যান্ডিস নামে জনৈক জার্মানকে বনবিভাগের ইনস্পেকটর জেনারেল হিসেবে নিয়ােগ করা হয়।

[3] প্রথম অরণ্য আইন, ১৮৬৫ খ্রি.: সরকার ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় অরণ্য আইন পাস করে এদেশের অরণ্য সম্পদের ওপর ভারতীয়দের অধিকার খর্ব করে এবং অরণ্যকে সংরক্ষণের আওতায় এনে সেখানে নিজের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে। সরকার ঘােষণা করে যে, অরণ্যে ঘেরা যে-কোনাে ভূমিই হল সরকারি সম্পত্তি।

[4] দ্বিতীয় অরণ্য আইন, ১৮৭৮ খ্রি.: ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় ‘অরণ্য আইন’-এর দ্বারা সরকার অরণ্যের ওপর নিজের অধিকার আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করে। সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের শত-সহস্র বছরের অরণ্যের অধিকার হারিয়ে এক চরম দুর্দশার শিকার হয়।


4. ভারতে ব্রিটিশ সরকার প্রচলিত প্রধান অরণ্য আইনগুলির পরিচয় দাও।

উত্তর:

ব্রিটিশ সরকার প্রচলিত বিভিন্ন অরণ্য আইন

ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে অরণ্য সম্পদের ওপর নির্ভর করে এদেশের আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়গুলি জীবিকানির্বাহ করত। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ শাসন- কালে একাধিক অরণ্য আইন পাস করে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।

[1] ভারতীয় অরখ্য অছিল, ১৮৬৫ খ্রি.: ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় অরণ্য আইন পাস করে। এর দ্বারা-[1] এদেশের অরণ্য সম্পদের ওপর ভারতীয়দের অধিকার খর্ব করা হয়। [2] সরকার অরণ্যকে সংরক্ষণের আওতায় আনে। [3] সরকার ঘােষণা করে যে, অরণ্যে ঘেরা যে-কোনো ভূমিই হল সরকারের সম্পত্তি।

[2] ভারতীয় অরণ্য আইন, ১৮৭৮ খ্রি.: ব্রিটিশ সরকার ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ভারতীয় অরণ্য আইন পাস করে। এর দ্বারা—[1] ব্রিটিশ সরকার ভারতে অরণ্যের ওপর নিজের অধিকার আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। [2] অরণ্যের ওপর আদিবাসীদের অধিকার ধ্বংস করা হয়।

[3] ভারতীয় অরণ্য আইন, ১৯২৭ খ্রি.: ব্রিটিশ সরকার ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে অপর একটি ভারতীয় অরণ্য আইন’ পাস করে। এই আইনের দ্বারা অরণ্যকে– [1] সংরক্ষিত অরণ্য, [2] সুরক্ষিত অরণ্য ও [3] গ্রামীণ অরণ্য—এই তিন ভাগে বিভক্ত করা হয় এবং এদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়। কোন্ কোন্ বিষয়গুলি ‘অরণ্য বিষয়ক অপরাধ অরণ্যের অভ্যন্তরে কোন্ কোন্ কাজ নিষিদ্ধ, অরণ্য আইন লঙ্ঘন করলে কী শাস্তি হবে তা উল্লেখ করা হয়।


6. বিধোহ বলতে কী বোঝায়? বিদ্রোহের কয়েক উদাহরণ দাও।

উত্তর:

বিদ্রোহ

ভূমিকা: বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্ধ বা অসন্তুষ্ট মানুষজন যে উপায়ে নিজেদের ক্ষোভ বা প্রতিবাদ প্রকাশ করে থাকে সেগুলির মধ্যে। একটি উল্লেখযােগ্য উপায় বা ধারা হল বিদ্রোহ।

[1] বিদ্রোহ কী?: কোনাে সমাজে বা রাষ্ট্রে কোনাে প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে বিরােধী জনগােষ্ঠী সুসংগঠিত বা অসংগঠিতভাবে যে আন্দোলন গড়ে তােলে তা সাধারণভাবে বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

[2] বৈশিষ্ট্য: বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[1] বিদ্রোহ স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। [2] বিদ্রোহ পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিতভাবে শুরু হতে পারে। [3] বিদ্রোহ সফল হলে পূর্বতন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে। [4] বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে পূর্বতন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে না।

[3] উদাহরণ: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে রংপুর বিদ্রোহ, পাবনা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ প্রভৃতি কৃষক বিদ্রোহ, সিপাহি বিদ্রোহ (১৮৫৭ খ্রি.) প্রভৃতি হল বিদ্রোহের উল্লেখযােগ্য উদাহরণ। [1] ভারতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহ ছিল স্বল্পকালীন বিদ্রোহ, আবার চিনের তাইপিং বিদ্রোহ দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল। [2] নীল বিদ্রোহ পরিকল্পিতভাবে শুরু হলেও সিপাহি বিদ্রোহ অপরিকল্পিত ভাবে শুরু হয়েছিল। [3] নীল বিদ্রোহ সফল হওয়ায় সরকার নীল কমিশন গঠন করে নীলচাষিদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ নেয়। [4] সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ায় ভারতীয় সিপাহিদের দুর্দশা দূর হয়নি। [5] অনেকসময় বিদ্রোহ এক বিশেষ গােষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।


7. অ্যুত্থান বলতে কী বােঝায়? অ্যুত্থানের কয়েকটি উদাহরণ দাও।

উত্তর

অভুত্থান

ভূমিকা: বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্ধ বা অসন্তুষ্ট মানুষজন যে উপায়ে । নিজেদের ক্ষোভ বা প্রতিবাদ প্রকাশ করে থাকে সেগুলির মধ্যে। একটি উল্লেখযােগ্য উপায় বা ধারা হল ‘অভ্যুত্থান।

[1] অ্যুত্থানকী?: অ্যুত্থান বলতে বােঝায় কোনাে দেশ বা সমাজে কিংবা প্রশাসনে কোনাে প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজ গােষ্ঠীর একাংশের সংগ্রাম। এক্ষেত্রে নিজেদের নেতা বা প্রভুদের বিরুদ্ধেই তাদের অধীনস্থ মানুষ সংগ্রাম করে।

[2] বৈশিষ্ট্য: অভ্যুত্থানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল— [1] নিজ গােষ্ঠীর ক্ষুব্ধ লােকজন অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পতন বা পরিবর্তন ঘটাতে চায়। [2] অভ্যুত্থানের দ্বারা শুধু ক্ষমতার কেন্দ্রের পরিবর্তন ঘটানাের চেষ্টা করা হয়। [3] অভ্যুত্থান সফল বা ব্যর্থ যাই হােক না কেন তাতে সমাজ বা রাষ্ট্রের মূল কাঠামাের পরিবর্তন ঘটে না।

[3] উদাহরণ: এ অভ্যুত্থানের প্রধান উদাহরণগুলি হল— [1] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একাংশের উদ্যোগে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহ। [2] ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সেনাদের নেতৃত্বে নৌবিদ্রোহ, [3] বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান সরকারের পতন (১৯৮৫ খ্রি.) ঘটিয়ে তার সেনাপতি এরশাদের ক্ষমতা দখল।


8. বিপ্লব বলতে কী বােঝায়? বিপ্লবের কয়েকটি উদাহরণ দাও।

উত্তর

বিপ্লব

ভূমিকা: বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্ধ বা অসন্তুষ্ট মানুষজন যে উপায়ে নিজেদের ক্ষোভ বা প্রতিবাদ প্রকাশ করে থাকে সেগুলির মধ্যে একটি উল্লেখযােগ্য উপায় বা ধারা হল বিপ্লব।

[1] বিপ্লব কী ?: বিপ্লব কথার অর্থ হল কোনাে প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন। কোনাে দেশ বা সমাজে জনগণ প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন ঘটালে তাকে ‘বিপ্লব’ বলে অভিহিত করা হয়।

[2] বৈশিষ্ট্য: বিপ্লবের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—[1] বিপ্লব হল মানুষের সফল আন্দোলন। [2] বিপ্লবের দ্বারা দেশ বা সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থা বাতিল হয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু হয়। [3] বিপ্লবের দ্বারা প্রচলিত ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।

[3] উদাহরণ: বিপ্লবের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য উদাহরণ হল-[1] ষ্টাদশ শতকে ইউরােপে সংঘটিত শিল্পবিপ্লব, [2] ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব। শিল্পবিপ্লবের দ্বারা ইউরােপের শিল্পব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা ফ্রান্সে পূর্বতন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত ও আমূল পরিবর্তন ঘটে।


9. ‘রংপুর বিদ্রোহ সম্পর্কে কী জান?

উত্তর:

রংপুর বিদ্রোহ (১৭৮৩ খ্রি.)

ভূমিকা: দেবী সিংহ নামে জনৈক ব্যক্তি ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে সরকারের কাছ থেকে দিনাজপুর, রংপুর ও এদ্রাকপুর পরগনা ইজারা নেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেবী সিংহের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে যে কৃষক বিদ্রোহ শুরু হয় তা রংপুর বিদ্রোহ’ (১৭৮৩ খ্রি.) নামে পরিচিত।

[1] বিদ্রোহের কারণ: রংপুর বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার বিভিন্ন কারণ ছিল–[1] রাজস্ব বৃদ্ধি: দেবী সিংহ দিনাজপুর, রংপুর ও এদ্রাকপুর পরগনার ইজারা নিয়ে সেখানকার জমিদার ও প্রজাদের ওপর রাজস্বের হার বহুগুণ বৃদ্ধি করেন এবং নানা নতুন কর আরােপ করেন।

[2] অত্যাচার: রাজস্ব আদায়ে এখানকার জমিদার ও কৃষকদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু হয়। এ ছাড়া রংপুরেও অত্যাচার চরমে ওঠে। কৃষকদের কারাগারে অনাহারে বন্দি রাখা, বেত্রাঘাত প্রভৃতি চলতে থাকে।[3] কৃষকদের সম্পত্তি বিক্রি: কৃষকরা গােরুবাছুর, সম্পত্তি, এমনকি নিজ সন্তানদের বিক্রি করেও দেবী সিংহের শােষণ থেকে মুক্ত হতে পারত না। [2] বিদ্রোহের সূত্রপাত: দেবী সিংহের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরের কাজীর হাট, কাকিনা, ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি স্থানের কৃষকরা ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি তেপা গ্রামে মিলিত হয়ে দেবী সিংহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করে। এটি ‘রংপুর বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

[3] স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা: বিদ্রোহীরা একটি স্থানীয় স্বাধীন সরকার গঠন করে। এই সরকারের নবাব বা নেতা হন নুরুলউদ্দিন এবং তাঁর সহকারী নেতা হন দয়ারাম শীল। [3] বিদ্রোহের প্রসার : বিদ্রোহীরা দেবী সিংহকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে এবং তার রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের বিতাড়িত করে। বহু কর্মচারী নিহত হয়। বিদ্রোহের ব্যয় নির্বাহের জন্য ‘ডিং খরচা’ নামে চঁাদা ধার্য করা হয়।

[4] বিদ্রোহ দমন: রংপুরের কালেক্টর গুডল্যান্ড বিদ্রোহ দমনে সুবিশাল ব্রিটিশবাহিনী পাঠান। মােগলহাট ও পাটগ্রামের যুদ্ধে বিদ্রোহীরা সেনাপতি ম্যাকডােনাল্ডের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশবাহিনীর কাছে পরাজিত হলে বিদ্রোহ বন্ধ হয়। ব্রিটিশবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, অসংখ্য বিদ্রোহীকে হত্যা করে।


10 চুয়াড় বিদ্রোহের (প্রথম পর্ব, ১৭৬৭ খ্রি.) বিবরণ দাও।

উত্তর:

চুয়াড় বিদ্রোহের (প্রথম পর্ব, ১৭৬৭ খ্রি.) বিবরণ

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনকলে ভারতে যেসব আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল চুয়াড় বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ দুটি পর্বে সংঘটিত হয়। প্রথম পর্বের বিদ্রোহ হয় ১৭৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে।

[1] চুয়াড়দের পরিচয়: আদিবাসী চুয়াড় বা চোয়াড় জনগােষ্ঠী বাংলার বর্তমান মেদিনীপুর জেলার উত্তর- পশ্চিমাংশ ও বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে বসবাস করত। চুয়াড়রা কৃষিকাজ ও পশুশিকারের পাশাপাশি স্থানীয় জমিদারদের অধীনে পাইক বা সৈনিকদের কাজ করত। জমিদারদের কাজের বিনিময়ে তারা কিছু নিষ্কর জমি ভােগ করত।

[2] বিদ্রোহের কারণ: প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল—[1] জীবিকা সমস্যা: ব্রিটিশ কোম্পানি চুয়াড়দের অধিকাংশ জমিজমা কেড়ে নিলে তাদের জীবিকানির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ে। [2] রাজস্ব বৃদ্ধি: কোম্পানি চুয়াড়দের কৃষিজমির ওপর রাজস্বের হার যথেষ্ট বাড়িয়ে দেয়। [3] অত্যাচার: রাজস্ব আদায়কারী ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারীরা চুয়াড়দের ওপর চরম অত্যাচার চালাতে শুরু করে।

[3] বিদ্রোহের সূচনা: ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথম কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করেন। চুয়াড়রা এই বিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে যােগ দেয়।

4] বিদ্রোহের প্রসার: জগন্নাথ সিংহের নেতৃত্বে চুয়াড়রা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এরপর ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে চুয়াড়রা ধাদকার শ্যামগঞ্জন-এর নেতৃত্বে আবার বিদ্রোহ শুরু করে। কিন্তু এই বিদ্রোহও ব্যর্থ হয়। তবে ব্যর্থতা সত্ত্বেও চুয়াড়দের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন ধিকিধিকি জ্বলতেই থাকে।