বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯

বিশ্বকাপ ক্রিকেট–২০১৯

ভূমিকা :

২৫ জুন, ১৯৮৩ এবং ২ এপ্রিল ২০১১ ভারতীয় ক্রিকেটের যে গৌরবােজ্জ্বল মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছিল, ২০১৯-এ ভারতের সেই গৌরব স্তিমিত হয়ে যায়—দুরন্ত আশা জাগিয়েও।

সেমিফাইন্যালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দল আপামর খেলাপ্রেমী মানুষের কাছে নিজেদের ব্যর্থতাকে মেলে ধরে।

বিশ্বকাপের অধিকারী হয় ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে। খেলাপাগল ভারতীয়রা তাকিয়ে থাকবে ২০২৩ সালের দিকে এবং ক্রিকেটাররাও নিজেদের প্রমাণ করার সুযােগ পাবে—এই আশা করা যেতে পারে।

বিশ্বকাপের ইতিহাস :

১৯৭৫-এ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপ। প্রথম বিশ্বকাপ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ জয়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। ১৯৭৯-তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে।

১৯৮৩-তে কপিলদেব-এর ভারত জয়ী হয়েছিল দুবারের বিজয়ী ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। ১৯৮৭-তে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে, ১৯৯২-তে পাকিস্তান ইংল্যান্ডকে, ১৯৯৬-তে শ্রীলঙ্কা অস্ট্রেলিয়াকে, ২০০০ অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তানকে, ২০০৩-এ অস্ট্রেলিয়া ভারতকে, ২০০৭-এ অস্ট্রেলিয়া শ্রীলঙ্কাকে, ২০১১-তে ভারত শ্রীলঙ্কাকে এবং ২০১৫-তে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ী হয়। অস্ট্রেলিয়া ২০১১ ছাড়া পরপর পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়ী হয়।

২০১৯-এর বিশ্বকাপ :

এবারের বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয় ৩০শে মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। এবার দশটি দেশ খেলায় অংশগ্রহণ করে। এবারের প্রথম পর্বের খেলা রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রত্যেক দল নয়টি করে খেলায় অংশ নেয়। ১৯৯২-তেও এই প্রক্রিয়া ছিল।

গ্রুপের শীর্ষ চার দল নক-আউট পর্বে উপনীত হয় এবং সেমিফাইন্যাল ও ফাইন্যাল খেলে। গ্রুপ পর্বের খেলায় ভারত ৭টিতে জয় ও একটিতে পরাজয় সহ ১৫ পয়েন্ট পায়। দ্বিতীয় স্থান অস্ট্রেলিয়া ১৪ পয়েন্ট (৭টি জয়, ২টি পরাজয়), তৃতীয় স্থান ইংল্যান্ড ১২ পয়েন্ট (৬টি জয়, ৩টি পরাজয়), চতুর্থ নিউজিল্যান্ড পয়েন্ট ১১ (৫টি জয়, ৩টি পরাজয়), পঞ্চম স্থান পাকিস্তানের ১১ পয়েন্ট (৫টি জয়, ৩টি পরাজয়), ষষ্ঠ শ্রীলঙ্কা ৮ পয়েন্ট (৩টি জয়, ৪টি পরাজয়), সপ্তম দক্ষিণ আফ্রিকা পয়েন্ট ৭ (৩টি জয়, ৫টি পরাজয়), অষ্টম বাংলাদেশ পয়েন্ট ৭ (৩টি জয়, ৫টি পরাজয়), নবন ওয়েষ্ট ইন্ডিজ পয়েন্ট ৫ (২টি জয়, ৬টি পরাজয়), দশম ও শেষ আফগানিস্তান—কোনাে খেলায় জয় না পেয়ে পয়েন্ট ০।

গ্রুপ পর্ব :

গ্রুপ পর্বের প্রথম খেলায় আয়ােজক দেশ ইংল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে হারিয়ে জয়ী হয়। ৫ই জুন ভারত প্রথম খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে হারায়।

এছাড়া ভারত অস্ট্রেলিয়াকে ৩৬ রানে, পাকিস্তানকে ৮৯ রানে, আফগানিস্তানকে ১১ রানে, ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে ১২৫ রানে, বাংলাদেশকে ২৮ রানে, শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে জয়ী হয়। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বৃষ্টির কারণে খেলা পরিত্যক্ত হয় এবং ইংল্যান্ডের কাছে ভারত ৩১ রানে পরাজিত হয়।

সেমিফাইন্যাল :

ম্যাস্টোর-এর ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় নিউজিল্যান্ড ও ভারত-এর মধ্যে। প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড করে ২৩৯। জবাবে ভারত খেলতে নেমে বেশ কয়েকটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায়। কিন্তু জাদেজা ও ধােনি মাঝে ভালাে খেলে আশা জাগিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।

তারা ৪৯.৩ ওভারে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ২২১ রানে খেলা সমাপ্ত করে। ফলে ১৮ রানে বিজয়ী হয় নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় সেমিফাইন্যাল অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে এজবাস্টন-এ। অস্ট্রেলিয়া প্রথমে খেলে ৪৯ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান করলে জবাবে ইংল্যান্ড ৩২.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২২৬ রান করে ৮ উইকেটে বিজয়ী হয়।

ফাইন্যাল :

এবারের লর্ডসে ফাইন্যাল খেলা ছিল নাটকীয়। নিউজিল্যান্ড টস জিতে প্রথম খেলে ৮ উইকেট ২৪১ রান করে। টম লাথাম ৪৭, হেনরি নিকোলাস ৫৫ রান করে। লিয়াম প্লাঙ্কেট ৪২ রান দিয়ে ৩ উইকেট এবং ক্রিস ওকস ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট পায়। জবাবে ইংল্যান্ড ২৪১ করলে ম্যাচ টাই হয়ে যায়। বাটলার ৫৯ ও বেন স্টোকস করে ৮৪ রান।

জেমস নিশাম ৪৩ রানে ৩ উইকেট ও ফাসন ৫০ রানে ৩ উইকেট পায়। এরপর ইংল্যান্ড সুপার ওভারে কোনাে উইকেট হারিয়ে ১৫ রান (৩+১+৪+১+২+৪) করে। জবাবে নিউজিল্যান্ড শেষ বলে রান আউটের জন্য ১ উইকেট হারিয়ে ১৫ রান করলে নিউজিল্যান্ডকে হারতে হয় ইংল্যান্ডের কাছে। ইংল্যান্ড বাউন্ডারি নিয়মে জয়লাভ করে (২৯-১৭)।

রেকর্ড :

এবারের বিশ্বকাপ নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ (১) এই প্রথমবার বিজয়ী নির্ধারিত হয় সুপার ওভারে এবং সুপার ওভারও টাই হয় এবং বাউন্ডারির নিরিখে জয় পরাজয় নিষ্পত্তি ঘটে। (২) বিশ্বকাপের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হল নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়াম, রান সংখ্যা ৫৭৮।

(৩) এবার প্রথম দুটি ফাইন্যালিস্ট দলের সামনে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ছিল। (৪) এবার সর্বাধিক ৬৪৮ রান করেন রােহিত শর্মা ৯টি ম্যাচ খেলে এবং ১০টি ম্যাচ খেলে ডেভিড ওয়ার্নার করেন ৬৪৭ রান। (৫) সর্বাধিক ২৭টি উইকেট পান মিচেল স্টার্ক (সেরা ২৬ রানে ৫ উইকেট)। (৬) অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার সর্বোচ্চ ১৬৬ রান করেন।

(৭) রােহিত শর্মা সর্বোচ্চ ৫টি শতরান করেন। (৮) অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ ম্যাচে সর্বোচ্চ উভয়ের রান ছিল ৭১৪ এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের দলীয় সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৯৭, যেখানে সর্বোচ্চ ১৫০ রানে জয়ী হয় ইংল্যান্ড। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সর্বোচ্চ ১০ উইকেটে জয়ী হয় নিউজিল্যান্ড এবং ২১৮ বাকি থাকতে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ পাকিস্তানকে হারায়।

উপসংহার :

পরের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩-এ। প্রত্যেক ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের আশা থাকবে ভারতীয় দল তাদের ব্যর্থতা শুধরে নিয়ে নতুনভাবে দলকে সংগঠিত করে সম্ভাবনার দ্বারকে উন্মােচন করবে ও আবার বিশ্বসভায় শ্রেষ্ঠ আসনের অধিকারী হবে।


[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”3″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]