বিকল্প শক্তি ও সৌরশক্তি

বিকল্প শক্তি ও সৌরশক্তি

[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”2″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]

ভূমিকা :

জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, বিশ্বায়ন ও মানুষের চাহিদার ফলে আমাদের দেশের মতাে সারা বিশ্বেও কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি চিরাচরিত শক্তির উৎসগুলি প্রায় শেষের পথে।

শুধু তাই নয় এই সমস্ত উৎসের ব্যাপক ব্যবহার পরিবেশকেও করছে দূষিত। ১৯৭০ সালে শক্তির যে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছিল তা বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিকল্প শক্তির উৎসের চিন্তাকে জাগিয়ে দেয়।

এবং যার ফলে নবীভবনযােগ্য এবং দূষণহীন শক্তির সন্ধান করেন—যার মধ্যে সৌরশক্তি অন্যতম। আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও সুন্দরবন, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি স্থানে সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহার যেমন লক্ষ করা যায় তেমনি সরকার বিদ্যালয়গুলিতে এই সৌরশক্তির ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন।

সৌরশক্তি কী?

আমরা জানি, সূর্য হল অফুরন্ত শক্তির উৎস। এই শক্তিকে ব্যবহার করে জীবজগত তার অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে। তাছাড়া সৌরশক্তি এমনই শক্তি যা পরিবেশের দূষণ ঘটায় না।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সৌরশক্তিকে ঠিকমত কাজে লাগাতে পারলে আগামী দিনে শক্তি সংক্রান্ত কোন সমস্যা থাকবে না। ইজরায়েল, আমেরিকা-তে ইতিমধ্যে সৌরশক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এশিয়া, আফ্রিকাও অস্ট্রেলিয়াতে সৌরশক্তির তীব্রতা অনেক বেশি হওয়ায় সৌরশক্তির ব্যবহারের ব্যাপারে এই সব দেশের সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল।

সম্ভাবনা :

ভারতবর্ষের মতাে দেশে যেখানে প্রতি বছরে গড়ে ১৬৪৮-২১০৮ KWH/m/year সূর্যালােক পাওয়া যায় এবং বছরে প্রায় ২৫০-৩০০ দিন সূর্যালােকিত থাকে—সেখানে সৌরশক্তির সম্ভাবনা যথেষ্ট।

এই বিশাল সৌরশক্তির প্রাচুর্যকে ফোটোভােল্টাই কনভারশানের মাধ্যমে অন্যান্য শক্তিতে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। আবার সূর্যের রশ্মির তাপশক্তিকে ব্যবহার করে যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক এবং রাসায়নিক শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব।

প্রকারভেদ :

সৌরশক্তিকে রূপান্তরিত করার জন্য যে সমস্ত পদ্ধতি চালু আছে সেগুলি হল : (ক) সােলার কুকার (খ) সােলার ড্রায়ার (গ) সৌরবিদ্যুৎ।

সােলার কুকার এমনই একটি যন্ত্র যার সাহায্যে সূর্যালােকের তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে রান্নার কাজ করা হয়—যা পরিবেশ বান্ধব (eco-friendly)। এছাড়া খাবারের খাদ্যগুণও এতে বজায় থাকে, শ্রম ও পয়সা সাশ্রয় হয়।

বাড়িতে যেখানে সূর্যের আলাে সব থেকে বেশি পড়ে সেখানে যন্ত্রটিকে রাখা হয় এবং লক্ষ্য রাখা হয় যাতে আয়নার মুখ সূর্যের দিকে থাকে। এতে খাবার তৈরিতে ৪/৫ ঘণ্টা সময় লাগে।

সােলার ড্রায়ার :

যে কোনাে ধরনের কৃষিজাত দ্রব্যকে সংরক্ষণের জন্য ফসলের আর্দ্রতা অপসারণ করা প্রয়ােজন। ফসলের আর্দ্রতা না সরিয়ে সংরক্ষণ করলে ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণু সংক্রমণ ঘটে যায়।

ফসল সংরক্ষণের আগে সূর্যালােকে ফসলকে শুকিয়ে নেবার প্রথা অনেকদিন ধরে চলে আসছে। বর্তমানে একটি বিশেষ আবদ্ধ প্রকোষ্ঠ ফসলকে শুষ্ককরণের কাজে লাগানাে হয়।

যে প্রকোষ্ঠটির একটি মুখ্য অংশ হল স্বচ্ছ আবরণী যুক্ত তাপ সংগ্রাহক—যার ভিতর দিয়ে সূর্যালােক ভিতরে প্রবেশ করবে ও ভিতরের বাতাসকে উত্তপ্ত করে তুলবে।

এই উত্তপ্ত বাতাসের সংস্পর্শে ফসলের মধ্যে জলীয় বাষ্প শােষিত হবে ও উপরের নির্গমন নল দিয়ে বেরিয়ে যাবে।

সৌরবিদ্যুৎ :

সােলার ফোটোভােল্টিক সেলের মাধ্যমে সূর্যালােককে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা যায়। সাধারণত দুর্গম স্থানে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে প্রচলিত উপায়ে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় (যেমন সুন্দরবন) সেখানে এই সৌরবিদ্যুতের কোনাে বিকল্প নেই।

এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে সৌরকোষ ব্যবহার করা হয় তা সিলিকন ধাতু দিয়ে তৈরি। সৌরকোষে উৎপন্ন বিদ্যুতের পরিমাণ খুব কম হওয়ায় সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে অনেকগুলি সৌরকোষের প্রয়ােজন হয়।

এছাড়া সূর্যালােক না থাকলে বা বর্ষাকালে মেঘলা দিনে এই ধরনের সৌরকোষগুলি কোনাে কাজ করে না। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত এলাকার রাস্তায় ইলেকট্রিক বাতি জ্বালানাে, টিভি, ফ্রিজ, পাখা, জল তােলার পাম্প চালানাে ইত্যাদি কাজে সৌরবিদ্যুৎকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

Rural Electrification Corporation আমাদের দেশের প্রায় ৯০ হাজার প্রত্যন্ত গ্রামে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন। রাজস্থান, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানাতে ৩০০র বেশি গ্রামে সৌরসেলের সাহায্যে রাস্তার আলােগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ :

পশ্চিমবঙ্গে WBREDA ১৯৯৩ সালে গঠিত হওয়ার পর গােসাবা, পাথরপ্রতিমা ও সাগর ব্লকে বাড়িতে ও রাস্তায় সৌরবিদ্যুতের প্রয়ােগ ঘটিয়ে অন্ধকার থেকে আলােয় উত্তরণ ঘটিয়েছেন সেখানকার মানুষদের।

প্রায় ২৩৭৪৫টি বাড়ি ও রাস্তায় ৭৪২টি স্থানে সৌরবিদ্যুৎ আলাে দান করছে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলে ও কম্পিউটার শিক্ষণ কেন্দ্রে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার প্রসারিত হয়েছে।

সােলার থার্মাল প্রােগ্রামও বিভিন্ন হােস্টেল, হাসপাতাল, নার্সিং হােমেও ব্যবহৃত হচ্ছে। পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডিতে সােলার কুকার বসানাে হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে মুর্শিদাবাদে দেশের সর্ববৃহৎ সােলার গ্রিড বসাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।

উপসংহার :

যেভাবে প্রচলিত শক্তির উৎস ক্ষয় হচ্ছে, এমনকি মানুষের সামগ্রিক চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে সৌরশক্তি যে বিকল্প শক্তি হিসেবে আমাদের আগামী দিনে পথ দেখাবে, তা বলাবাহুল্য। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে—এটা আশার কথা।


[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”2″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]