প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ

প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ

ভূমিকা :

এক সময়ে মানুষ ছিল অরণ্যবাসী। গুহা বা বৃক্ষশাখায় তার দিন কাটতাে। তখন মানুষ ছিল সবচেয়ে দুর্বল জীব। প্রকৃতির ভীষণ রূপ তাকে করতাে ভীত। হিংস্র বন্য জানােয়ারের ভয়ে সে ছিল সদা সন্ত্রস্ত। আকাশচুম্বী পাহাড়ের দৃঢ়তা তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করত। সমুদ্রের উত্তাল জলরাশির সীমাহীনতা সে বিস্মিত চোখে দেখতাে কিন্তু মানুষ চাইলাে জগতের দুর্বলতম জীব হিসাবে বেঁচে থাকতে। মানুষের ছিল এক অমূল্য সম্পদ যা আর অন্য কোনও প্রাণীর ছিল না।

তা হল মানুষের বুদ্ধি। আদিম মানুষ । আবিষ্কার করলাে আগুন। সেই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পর মানুষকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সে আয়ত্ত করেছে বিজ্ঞান। আর, বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার হল বিদ্যুৎ। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের অবদান নগণ্য নয়।

বিদ্যুতের অবদান :

মানব জীবনে বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হল বিদ্যুৎশক্তি। এই বিদ্যুৎ মানুষ কাজে লাগালাে কল্যাণমূলক কাজে। এর ফলে মানবসভ্যতার প্রগতি হল ত্বরান্বিত। বর্তমানে বিদ্যুৎশক্তি মানব জীবনের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক মানুষের জীবন অচল। বিদ্যুতের অপার মহিমাকে মানুষ কাজে লাগিয়ে প্রাত্যহিক জীবনে নিয়ে এসেছে যুগান্তকারী আলােড়ন।

প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ :

আজকের দিনে মানুষকে প্রতি পদক্ষেপে বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করতে হয়। সারাদিন আমরা চেতনে অবচেতনে বিদ্যুতের ওপর এত নির্ভরশীল যা কল্পনার বাইরে। কোনাে শহরের পথ দিয়ে হাঁটলেই আমাদের নজরে পড়বে বিদ্যুতের অসংখ্য ব্যবহার। রাস্তার দুদিকে দেখা যাবে দৈত্যাকার সৌধমিছিল।

চোখে পড়বে অসংখ্য দোকান, অফিস, ক্লাব, লাইব্রেরি—যা উজ্জ্বল আলােকে আলােকিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই আলাে বিদ্যুতের দান। অফিসে বাড়িতে অবিরাম চালানাে হচ্ছে কম্পিউটার। ঝড়ের বেগে সব কাজ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের আত্মীয়কে ই-মেল করা যাচ্ছে, হাতে লেখা চিঠির থেকে যা ঢের তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে উদ্দিষ্ট স্থানে।

ইন্টারনেট থেকে নানাবিধ জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে, বই পড়া, গান শােনা এমনকি সিনেমাও দেখা যাচ্ছে। এই যে অমিত প্রতিভার অধিকারী কম্পিউটার, এ কার শক্তিতে বলীয়ান ? বিদ্যুতের। আজকের ব্যস্তত্রস্ত জীবনে মানুষ সারা সপ্তাহের বাজার একদিনে করে রাখতে পারছে। রেফ্রিজারেটারে ঢুকিয়ে রাখছে পচন রােধ করার জন্য।

এই রেফ্রিজারেটারও বিদ্যুতের শক্তিতেই কাজ করছে। সারাদিনের ক্লান্তির পর মানুষ কর্মস্থান থেকে ফিরে মনােরঞ্জনের জন্য বেতার শােনে, টিভি দেখে, দেশবিদেশের নানা খবর পায়, নানা অনুষ্ঠান দেখে ও শুনে অনাবিল আনন্দ উপভােগ করে। তাদের সারাদিনের হাড়-ভাঙা পরিশ্রমের ক্লান্তি কেটে যায়। মানুষের এই মনােরঞ্জনের আয়ােজনও করে বিদ্যুতই। বৈদ্যুতিক মুদ্রণযন্ত্রের জন্যই বইয়ের সংখ্যা সীমিত না থাকায় আজ সমাজের বেশির ভাগ মানুষই শিক্ষিত। জীবনের আরও বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের উপস্থিতি আছে। কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি সবক্ষেত্রেই বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে।

দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার রসদ যােগাচ্ছে বিদ্যুৎ। যে মান্ধাতার আমলের হাল লাঙল দিয়ে চাষের পদ্ধতি অনুসৃত হত, তার জায়গায় এসেছে বিদ্যুৎচালিত মােটর, ট্রাক্টর, ধান ঝাড়ানাে মেসিন প্রভৃতি। কৃষিতে সেচের জন্য বিদ্যুৎচালিত মােটর মাটির নীচ থেকে জল তুলে আনছে, এতে কায়িক পরিশ্রমও বেঁচেছে এবং উৎপাদনও নির্দিষ্ট হতে পেরেছে।

কুটির শিল্পে বিদ্যুৎ :

এমনকি প্রাত্যহিক জীবনের আয়ের উৎস হিসেবে যেসব কুটির শিল্প আমাদের গ্রামে ও শহরে বিরাজ করত সেগুলিতে বিদ্যুতের ব্যবহার উৎপাদনকে বাড়িয়ে দিয়েছে। শিল্পের ক্ষেত্রে তাে বলাই বাহুল্য, দৈনন্দিন কাজে যে কোনাে মিস্ত্রিরা বিদ্যুৎচালিত মেসিনের সাহায্যে অনেক দ্রুত গতিতে ও সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে সফল হচ্ছে। যেমন, একজন রাজমিস্ত্রি ঘরের দেওয়াল ফুটো করবার জন্য ছেনি হাতুড়ি দিয়ে অনেক পরিশ্রম করত, সে-ই মােটরের সাহায্যে অনেক কম সময়ে ও সুচারুভাবে কাজটি সমাধা করতে পারছে।

ঘরকন্নার কাজে :

ঘরকন্নার কাজে বিদ্যুৎ তাে এখন অপরিহার্য উপাদান। মশলা বাটার ঝক্কি নেই, মিক্সি মেসিনে ফেললেই হল, উনুনে ইস্ত্রি বসিয়ে কাপড় জামা ইস্ত্রি করতে হবে না, প্লাক পয়েন্টে সুইচ দিলেই ব্যাস। পরিশ্রম করে কাপড় কাচার বালাই নেই, ওয়াশিং মেসিনের জ্যাকটা বাের্ডে দিয়ে সুইচ দিলেই কাজ শেষ। ঘরমােছার জন্য বিদ্যুৎচালিত ক্লিনার ব্যবহার করলেই হল। ঠাণ্ডার দিনে গ্যাসে গরম জল প্রস্তুত করার দিন শেষ, যদি বাথরুমে হিটারের জন্য সুইচ বাের্ডের সুইচটা অন করা যায়।

উপসংহার :

বিদ্যুৎকে অপর্যাপ্ত ব্যবহার করায় মানুষের ক্ষতি বিস্তর। মানুষ বিদ্যুতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেই সমাজ স্তব্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া বিদ্যুতের সুফল এখনও ভারতের বহু গ্রামে পৌঁছয়নি। এখনও ভারতের অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে বৈদ্যুতিক আলাে পৌঁছায়নি। একথা মনে রাখতে হবে যে, যতদিন না সমাজে সার্বিকভাবে বিদ্যুতের সুফল পৌঁছে দিতে পারব, ততদিন আমাদের দেশের উন্নতি অসম্পূর্ণই থাকবে। অনুসরণে লেখা যায় দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের অপরিহার্যতা।


[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”3″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]