পৌরাণিক কাহিনি বা মিথস (Myths)-এর সংজ্ঞাও বৈশিষ্ট্য লেখাে। ইতিহাস ও পৌরাণিককাহিনির পার্থক্যগুলি তুলে ধরাে।

পৌরাণিক কাহিনি বা মিথস (Myths)-এর সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য লেখাে। ইতিহাস ও পৌরাণিক কাহিনির পার্থক্যগুলি তুলে ধরাে।
পৌরাণিক কাহিনি বা মিথস
[1] সংজ্ঞা: সৃষ্টির আদিমকালে অপরিণত বুদ্ধির মানুষ যে সমস্ত ধর্মীয় অলৌকিক কল্পকাহিনি রচনা ও প্রচার করে তাকে পৌরাণিক কাহিনি বা লােকপুরাণ (Myth) বলে। লােকপুরাণগুলি লােকসমাজের দ্বারা মৌখিকভাবে সুপ্রাচীন অতীত থেকে রচিত হয়ে আসছে। Myth’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Muthos’ থেকে। ব্রিটেনের ফোকলাের সােসাইটির প্রতিষ্ঠাতা প্রত্নতত্ত্ববিদ জর্জ লরেন্স গােম। তিনি বলেছেন, লােকপুরাণ হল ‘দ্য সায়েন্স অব এ প্রিসায়েনটিফিক এজ’। জে. এফ বিয়ারলেইন তাঁর ‘Parallel Myths’ গ্রন্থে লিখেছেন – পৌরাণিক কাহিনি হল “আমাদের অবচেতন মনের কাহিনিবিশেষ যা সম্ভবত আমাদের জিন-এ লিপিবদ্ধ থাকে”।
[2] বৈশিষ্ট্য—সাধারণ:
[i] চরিত্রগত: লােকপুরাণে কেন্দ্রীয় চরিত্র হল অলৌকিক দেবদেবীগণ। এতে কাহিনির মূল চরিত্র ঈশ্বর বা ঐশ্বরিক শক্তির ওপর আরােপিত। মূল চরিত্রটি ঈশ্বরের অলৌকিক লীলাকাহিনি বা কর্মকাণ্ডের রূপকার।।
[ii] কাহিনিগত : পৌরাণিক কাহিনিগুলি মূলত ধর্মভিত্তিক। ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় সংস্কার, রীতিনীতি, পূজা-প্রার্থনা, ধর্মোৎসব-উপাচার ইত্যাদির ভিত্তিতে পৌরাণিক কাহিনি গড়ে ওঠে। বিশ্বসৃষ্টির রহস্য, দেবতা-মানবের জন্ম, মহা- প্লাবন, দেবতা-দানব-মানবের দ্বন্দ্ব, জন্ম-মৃত্যু-আত্মা- পুনর্জন্ম-অবতার, স্বর্গ-নরক, পাপপুণ্য সবই হল এর বিষয়।
[iii] প্রকৃতিগত : পৌরাণিক কাহিনিগুলি ধর্মীয় প্রকৃতির হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় সংস্কার, রীতিনীতি, পূজা-প্রার্থনা, ধর্মোৎসব-উপাচার ইত্যাদির ভিত্তিতে পৌরাণিক কাহিনি গড়ে ওঠে।
[iv] শ্রেণিলিঙ্গগল্প: শ্রেণিবিভাগগত বিচারে পৌরাণিক কাহিনি বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত যথা—
[1] দৃষ্টিতত্ত্বমূলক, [2] মানুষের উদ্ভবমূলক, [3] দৃষ্টিমূলক, [4] প্রলয়সূচক, [5] আগুনের অধিকার বিষয়ক, [6] সংস্কৃতির বিকাশ বিষয়ক, [7] চন্দ্র-সূর্য গ্রহনক্ষত্র কেন্দ্রিক, [8] সামাজিক বিধি বিধান বিষয়ক, [9] ধর্মাচার সম্পর্কিত, [10] সংস্কৃতি ধাতা (Culture Hero) বিষয়ক প্রভৃতি।
[v] স্ক্রিলীৰত্নাক্ত : বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পৌরাণিক কাহিনিগুলির মধ্যে এক ধরনের বিশ্বজনীনতা রয়েছে। বিশ্বসৃষ্টিগত ধারণা, মহাপ্লাবনগত বর্ণনা, দেবদেবীর সৃষ্টিগত ধারণা প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পৌরাণিক কাহিনিগুলির মধ্যে বর্ণনার মিল লক্ষ করা যায়।
{vi] মৌখিক ঐতিজ্যান্সারে : । পৌরাণিক কাহিনিগুলি সম্পূর্ণভাবে মৌখিক ঐতিহ্যানুসারী। বর্ণমালা সৃষ্টির অনেক আগে থেকেই মৌখিকভাবে পৌরাণিক কাহিনিগুলি প্রচলিত হয়ে আসছে। বিশ্বের জনপ্রিয় পৌরাণিক কাহিনিগুলি মানব সভ্যতার উদ্ভবের পূর্বের ও পরের ঐশ্বরিক জগৎ-এ সংঘটিত নানা কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে গড়ে উঠেছে।
[vi}উৎসগত : বিশ্বের অধিকাংশ পৌরাণিক কাহিনিগুলির উৎসের সন্ধান মেলে মহাকাব্যগুলিতে। এমন বিশ্বের পাঁচটি প্রাচীনতম মহাকাব্য হল গিলগামেশ, রামায়ণ, মহাভারত, ইলিয়াড ও ওডিসি। যদিও মহাকাব্যগুলির বাইরেও পৌরাণিক কাহিনির সন্ধান মেলে।