নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি সচিত্র বিবরণ দাও।

নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি সচিত্র বিবরণ দাও।
উত্তর : উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত নদী তার গতিপথে তিনটি কাজ করে। যথা-
(i) ক্ষয় কাজ (ii) বহন কাজ ও (iii) সঞ্চয় কাজ । পার্বত্য প্রবাহে বা উচ্চ গতিতে নদী ক্ষয়কাজই করে থাকে। নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সব ভূমিরূপ গঠিত হয়, সেগুলি হল- (i) আকৃতিরৃ উপত্যকা, (ii) V আকৃতির উপত্যকা, (ii) গিরিখাত ও ক্যানিয়ন, (iv) জলপ্রপাত, (v) খরস্রোত, (vi) পটহোল বা মন্থকূপ, (vii) প্রপাতকূপ এবং (vii) অন্তবদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ, (ix) কর্তিত শৈলশিরা।
(i) ইংরেজি বর্ণমালার ’V’ আকৃতির উপত্যকা : নদীর উচ্চগতিতে জলের প্রবাহ বেগ বেশি থাকায় অর্থাৎ ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদী পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় করে ইংরেজি ‘’ অক্ষরের মতাে উপত্যকা সৃষ্টি করে। এই অংশে নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও গভীর হয়।
(ii) ইংরেজি বর্ণমালার ‘V’ আকৃতির উপত্যকা : উপত্যকার দু’পাশে ভূমিক্ষয় ও ধস নামার ফলে নদীখাত ধীরে ধীরে চওড়া হয় এবং কালক্রমে ইংরেজি ‘ আকৃতির উপত্যকা ‘V’ আকৃতির উপত্যকায় পরিণত হয়।
(iii) গিরিখাত ও ক্যানিয়ন : নদীর ক্ষয়কাজের ফলে ‘V আকৃতির উপত্যকা যদি আরো সংকীর্ণ ও গভীর হয় তাহলে তাকে গিরিখাত বা গিরিসংকট বলে। পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত হল এল, ক্যানন দ্য কলকা (দক্ষিণ পেরু)। এর গভীরতা 4370 মিটার ও 3233 মিটার। শুষ্ক অঞ্চলে এই গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলে। উদাহরণ—পৃথিবীর দীর্ঘতম ক্যানিয়ন (গভীরতা 1900 মিটার, দৈর্ঘ্য 483 কিলােমিটার ও প্রস্থ 22 মিটার) কলোরাড়ো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
(iv) জলপ্রপাত : নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা আড়াআড়িভাবে অবস্থান করলে, নদীর প্রবল স্রোতে কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচু হওয়ায় কঠিন শিলা অল্প ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খাড়াভাবে অবস্থান করে। এর ফলে নদী যখন খাড়া ঢাল বেয়ে নীচে প্রবলবেগে পড়ে তখন তাকে জলপ্রপাত বলে। উদাহরণ : পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত হল দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলার সান্টো অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত (রিও ও কারোনি নদীর ওপর, 979 মিটার উচ্চ)।
(v) খরস্রোত : নদীর গতিপথে কোমল ও কঠিন শিলা লম্বালম্বিভাবে অবস্থান করলে কোমল শিলা কঠিন শিলার তুলনায় বেশি ক্ষয়ে সিঁড়ির মতো ধাপ সৃষ্টি করে। এই অংশে নদীর স্রোত বেড়ে যায় তাই একে খরস্রোত বলে। উদাহরণ : নীলনদের গতিপথে আটবারা থেকে আসোয়ান পর্যন্ত মোট 6টি খরস্রোত দেখা যায়।
(vi) পটহোল বা মন্থকূপ : পার্বত্য গতিতে নদীখাতের কোনো অংশে কোমল| শিলাস্তর থাকলে নদীবাহিত শিলাখণ্ডের আঘাতে অবঘর্ষ পদ্ধতিতে নদীগর্ভ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সেখানে বড়ো বড়ো গর্তের সৃষ্টি হয়। নদীর প্রবল জলস্রোতের সঙ্গে সঙ্গে নদীবাহিত নানান আকৃতির শিলাখণ্ডগুলিও ঘুরতে থাকায় নদীগর্ভের গর্তের আকার ক্রমশ বেড়ে গিয়ে হাঁড়ির মতো হয়। পার্বত্য পথে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া এইসব গর্তকে পটহোল বা মন্থকূপ বলে। নদীগর্ভে মন্থকূপের সৃষ্টি হওয়ার ফলে নদীর গভীরতা বাড়ে।
(vii) প্রপাতকূপ : জলপ্রপাতের পাদদেশে জলস্রোতের সঙ্গে পতিত প্রস্তরখণ্ডের আঘাতে অনেক সময় যে গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে প্রপাতকূপ বলে। উদাহরণ—গ্রীষ্মকালে হুডু জলপ্রপাতে এরকম প্রপাত কূপ দেখা যায়।
(viii) অন্তর্ব শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ : এটি পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া অন্যতম একটি প্রধান ভূমিরূপ। পার্বত্য অঞ্চলে নদীর গতিপথের বাধাস্বরুপ। শৈলশিরা বা পাহাড় থাকলে সেগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নদী এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয় এবং শৈলশিরাগুলি নদীপ্রবাহের ঘর্ষণের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত ও খাঁজকাটা হয়ে যায়। এদেরকে অভিক্ষিপ্তাংশ বলে। পার্বত্য অঞ্চলে কোনো নদীর গতিপথে অনেক সময় পাহাড়গুলির অভিক্ষিপ্তাংশ কুমিরের দাঁতের মতাে এমনভাবে বিন্যস্ত থাকে যে, নদীর প্রবাহপথের একটি অংশ আর একটি অংশ থেকে আড়াল হয়ে যায়। এই অবস্থায় দূর থেকে দেখলে মনে হয় শৈলশিরাগুলি যেন আবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। একে তখন অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ বলে।
(ix) কর্তিত শৈলশিরা : পার্বত্য প্রবাহে নদীর চলার পথের ঢাল হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে জলস্রোতের প্রভাবে শৈলশিরা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নদী সোজা পথে প্রবাহিত হয়। একে তখন। কর্তিত শৈলশিরা বলে। সিন্ধু, তিস্তা, তোর্সা, শতদ্রু প্রভৃতি নদীর উচ্চগতিতে এরকম কর্তিত শৈলশিরার সৃষ্টি করেছে।
 [পাঠ্যবই থেকে চিত্রগুলি আঁকার চেষ্টা করো ।