দেয়া লের ছবি

     দেয়া লের ছবি                        প্রচলিত গল্প
অনেক অনেক দিন আগের কথা। সেই কালে আমাদের দেশে ছিল ঘন বন। আমরা তখন বনের ধারে এক গাঁয়ে থাকতাম। চায়। করতাম, বনে শিকার করতাম। সে ছিল বড়াে সুখের দিন। কোথায় হারিয়ে গেল সেসব সুখের দিন!

সেইকালে বনের ধারে গায়ে থাকত একশিকারি। সে সবসময় বনে বনে ঘুরত। তার ছিল না কোনাে ভয়-ডর। উলটে বনের পশুপাখিই তাকে ভয় করত। হাতে তির-ধনুক-গুলতি নিয়ে সে ঘুরত। এমন কি রাতে শােওয়ার সময়েও তার বিছানার পাশে থাকত তির-ধনুক-গুলতি।

          
সকালে গাঁয়ের ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে। আঁধার হওয়ার আগে পর্যন্ত বনে বনে ঘােরে। গাছের ফল খায়, পাখি শিকার করে বনেই রান্না করে খায়। বড়াে আনন্দে থাকে সে।
        
  এমনি করে একদিন এক বাঘের সঙ্গে তার দেখা হলাে। দুজনেই
খুশি। অনেকক্ষণ কথাবার্তা হলাে। দুজনেই খুব বন্ধু হয়ে গেল। প্রায়
প্রতিদিনই দেখা হয়। খুব ভাব দুজনের।
একদিন শিকারি বলল, বন্ধু, অনেকদিন হয়ে গেল, দুজনেই খুব বন্ধু হয়ে গেলাম। তাহলে চলাে একদিন আমার বাড়িতে। আমার ভালাে লাগবে।

বাঘ বলল, এ আর এমন কী। যাওয়াই যায়। চলাে এখনই যাই। বন্ধুর বাড়ি। যাব, তাতে আর আপত্তি কী!
দুজনে রওনা দিল বনের পথে। বন পেরিয়ে মাঠ। মাঠের পাশে ফসলের জমি। তার পাশেই শিকারির বাড়ি। ছােটো দাওয়া পেরিয়ে তারা ঘরে ঢুকল। ছিমছাম পরিষ্কার সুন্দর ঘর। চোখ জুড়িয়ে। যায়। বাঘ ঘরে ঢুকে মাটির ঠান্ডা মেঝেয় বসে পড়ল। আঃ, কী আরাম!
শিকারি ললাটায় করে পুকুরের ঠান্ডা জল এনে দিল। বাঘ জিভ দিয়ে চেটে চেটে লােটার জল খেল। বন্ধুর দিকে ডাগর চোখে চেয়ে রইল।
বাঘ হঠাৎ চোখ ফিরিয়ে ঘরের দেয়ালে একটা হাতে-আঁকা ছবি দেখতে পেল। উঠে ছবির কাছে। গেল। দেখল, একজন মানুষ শিকারি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার হাতে তির-ধনুক আর মাটিতে শুয়ে রয়েছে। একটা বাঘ। শিকারি বড়াে বড়াে চোখে তাকিয়ে রয়েছে, যেন মনে হচ্ছে বিরাট কোনাে কাজ করেছে।
শিকারি খুব মজা পেয়েছে। বলল, আমার ঠাকুরদা, মস্ত শিকারি ছিলেন। দেখাে, তিনি কেমন বিশাল বাঘ মেরে পায়ের তলায় রেখে দিয়েছেন। ঠাকুরদা বাঘ-নেকড়ে-চিতা কাউকে ভয় পেতেন না। মস্ত শিকারি ছিলেন। আমার বাবাও মস্ত শিকারি ছিলেন। আমিও তাই।
বাঘ হাই তুলে বলল, ‘ছবিটা এঁকেছে কে?
শিকারি বলল, আমার বাবা এঁকেছেন। তিনি শুধু মস্ত শিকারি ছিলেন না, খুব ভালাে আঁকতে পারতেন।
বাঘ বলল, “হ্যা সে তাে দেখতেই পাচ্ছি। তা এটা কি মানুষের আঁকা?
শিকারি বলল, “কী যে বলাে বন্ধু, আমার বাবা তাে মানুষই ছিলেন। আমার বাবা তিনি, মানুষ ছাড়া আর কী হবেন?
বাঘ গোঁফের ফঁাকে মুচকি হেসে বলল, “ছবিটা যদি কোনাে বাঘ আঁকত তাহলে অন্যরকম হতাে।