জি এস টি বিল রচনা l GST Bill রচনা

[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”2″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]

জি এস টি বিল

ভূমিকা :

‘মনুসংহিতা’-য় বলা হয়েছে জোঁক যেমন মানুষের রক্ত চুষে নেয়, মানুষ তা জানতে পারে না, পরােক্ষ কর গ্রহণের নীতিও হবে তেমনি।

ভারতবর্ষে দীর্ঘদিন যাবৎ পরােক্ষ করের ক্ষেত্রে এই নীতিই চালু ছিল কিন্তু বিশ্বায়নের পর বাজারসর্বস্ব অর্থনীতির মানদণ্ডে পরােক্ষ করের ক্ষেত্রে এল পরিবর্তন, এল VAT বা মূল্যযুক্ত কর ব্যবস্থা, যা চালু হয় ২০১০-এর ১লা এপ্রিল থেকে।

এর পরে ‘Make in India’ কে সাফল্য দিতে গিয়ে এল জিএসটি যা চালু হয়েছে ১লা জুলাই ২০১৭ থেকে। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত পরােক্ষ করকাঠামােতে এই পরিবর্তন জনমানসে তাই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

জিএসটি কী :

জিএসটির পুরাে নাম হল Goods and Service Tax অর্থাৎ উৎপাদিত সামগ্রীর উৎপাদন ও ক্রয়ের জন্য যে অভিন্ন কর ব্যবস্থা। গত ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে বিলটি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা আইন হিসেবে বিধিবদ্ধ হয় এবং তা হল ভারতীয় সংবিধানের ১০১ তম সংশােধন।

বিলটি রাজ্যসভায় ৩রা আগস্ট, ২০১৬ ও লােকসভায় ৮ই আগস্ট, ২০১৬ তারিখে পাস হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ১লা জুলাই ২০১৭ থেকে তা লাগু করেছে। এর আগে ২০০০ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী এই GST Model-কে গ্রহণ করার কথা বলেছিলেন।

পরে পি. চিদাম্বরম ২০১০ থেকে এই বিল চালু করার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। বর্তমান মােদি সরকার এই বিল পাস করে পরােক্ষ করের ক্ষেত্রে অভিন্ন কর ব্যবস্থার এক দিশা দেখান।

প্রেক্ষাপট

সারা পৃথিবীতে বিশ্বায়নের ফলে অর্থনীতির ক্ষেত্রে নানান পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। যেহেতু এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাজার কেন্দ্রিক ও প্রতিযােগিতা ভিত্তিক তাই জাতীয় অগ্রগতির সূচককে বাড়াতে হলে চাই অভিন্ন পরােক্ষ কর ব্যবস্থা—যার সূত্রে এসেছিল।

ভ্যাট এবং পরে জিএসটি। বাজার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে, Make in India নীতিকে বাস্তবায়িত করতে হলে এই জিএসটি-র গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

এমনকি কল্যাণমুখী অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী সাধারণ মানুষকে সুযােগ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে এই বিল প্রণয়নের প্রয়ােজনীয়তা অনেকেই স্বীকার করবেন।

এই আইন ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকল ৩৬৮ নং অনুযায়ী সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অনুমােদন বা মঞ্জুর করতে পারবে।

সেজন্য প্রথমে আসাম (১২/৮/২০১৬) ও পরে বিহার, ঝাড়খণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, নাগাল্যাণ্ড, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা, সিকিম, মিজোরাম, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, উড়িষ্যা, পণ্ডিচেরি, গােয়া, অন্ত্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, পাঞ্জাব ও ত্রিপুরা রাজ্যগুলি আইনটিকে অনুমােদন দেয়।

কিন্তু জম্মু-কাশ্মীর, কর্ণাটক, কেরালা, মণিপুর, পশ্চিমবঙ্গ এখনাে এই বিল বিধানসভায় মঞ্জুর করেনি। এরই মধ্যে ১লা জুলাই, ২০১৭ তারিখে রাত ১২ টায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ঘটা করে সংসদ হলে জিএসটি চালুর ঘােষণা করে দিলেন এবং এর ফলে পরােক্ষ কর ব্যবস্থায় এক দেশ, এক কর ও এক বাজার নীতি’ লাগু হল।

উদ্দেশ্য :

এই বিলের উদ্দেশ্য হল ভারতবর্ষে সমস্ত পরােক্ষ কর, তা রাজ্য বা কেন্দ্র যেক্ষেত্রেই হােক না কেন, সেগুলিকে বিলােপ করে পরােক্ষ কর ব্যবস্থায় গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনা এবং কর আদান প্রদানের ক্ষেত্রে যে কোনাে রকমের ছল চাতুরিকে বিনাশ করা।

দ্বিতীয়ত, পরােক্ষ করের ক্ষেত্রে এক দেশ এক কর নীতি বলবৎ করা। তৃতীয়ত, উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে প্রগতির হারকে ঊর্ধ্বমুখী করা, চতুর্থত, কর ব্যবস্থায় GDP এবং ‘Tax rate-এর মধ্যে ভারসাম্য আনা।

শুধু তাই নয়, যে সমস্ত ব্যবসায়ী, প্রস্তুতকারী সংস্থা, হােলসেলার, রিটেলার ও চাকুরিজীবীরা একই জিনিষের ক্ষেত্রে একাধিকবার কর দেন তাদের সেই কষ্ট লাঘব করাও এই ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য।

সুবিধা :

এই কর ব্যবস্থায় সুবিধা হল ঃ

(১) ১৭টি পরোক্ষ কর সহজ হল।

(২) কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রচুর অর্থ আয় হবে,

(৩) বিভিন্ন রাজ্যের শিথিল ও খণ্ডিত করকাঠামোকে সম্পূর্ণতা দেবে,

(৪) সীমান্তে মাল পরিবহনকারী গাড়িকে বারবার কর দিতে হবে না,

(৫) মূল দ্রব্যের উৎপাদনের ক্ষেত্রে কর ১২ থেকে ১৪ শতাংশ কমবে,

(৬) আন্তঃরাজ্য কর কাঠামাে ব্যবস্থা থাকার কারণে উৎপাদিত সামগ্রীর প্রতিযােগিতা বাড়বে,

(৭) রাজ্যের হাতে ২ শতাংশ পর্যন্ত কর নির্ধারণ করার ক্ষমতা থাকবে।

(৮) অভিন্ন করনীতির ফলে উৎপাদিত সামগ্রীর দাম সস্তা হবে,

(৯) জি. ডি. পি-র হার ঊর্ধ্বমুখী হবে,

(১০) অনলাইনে কেনাকাটা আরাে সহজ হবে।

অসুবিধা :

এই করকাঠামাের ক্ষেত্রের বাইরে রয়েছে পেট্রোলিয়াম ও অ্যালকোহল জাত দ্রব্য- সামগ্রী। ফলে এইসব দ্রব্যসামগ্রীর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সরকারের থাকবে না।

অবশ্য ডিজেল ও পেট্রোলের বর্তমান কর ৫৭% হওয়ায় এবং জিএসটি-তে সর্বাধিক ২৮% কর হওয়ায় সরকার এক্ষেত্রে চালাকির আশ্রয় নিয়েছে। কারণ ডিজেল ও পেট্রোল জিএসটি-র বাইরে।

তাছাড়া সাধারণ মানুষ যেহেতু উৎপাদিত সামগ্রীর খরচ ও পরিষেবা কর সম্বন্ধে সম্যক অবহিত নয়, তাই তাদের ক্ষেত্রে অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক।

এমনকি এই অভিন্ন কর ব্যবস্থা প্রয়ােগের জন্য যে পরিকাঠামাে দরকার তারও একান্ত অভাব।  তাছাড়া ভ্যাট ১২.৫ শতাংশ থেকে জিএসটি ১৬ শতাংশ করায় পঞ্চায়েত স্তরে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।

সর্বোপরি সাধারণ জনসাধারণ এ ব্যাপারে এতটাই অজ্ঞ যে সরকার যে পথে তাদের নিয়ে যাবে বা যা বােঝাচ্ছে তা তাদের মেনে নিতে হচ্ছে—‘স্বচ্ছ ভারত’-এর ‘খুডাের কল’কে সার্থকতা দানের জন্য।

যেখানে দেশের অর্থনীতিতে জিডিপি নিম্নমুখী, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের স্বপ্ন অধরা সেখানে স্বচ্ছ ভারত অভিযান আপামর ভারতবাসীর কাছে প্রচার ও রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কী হতে পারে?

উপসংহার :

একটি অভিন্ন বাজার হল ভারত—এই লক্ষ্যে জিএসটি-র সাফল্য কতটা আসবে তা ভবিষ্যৎই বলতে পারে। তবে আর্থিক প্রগতি ও সুষম প্রতিযােগিতার লক্ষ্যে এবং বিগত বছরের পরিসংখ্যানের সাফল্যের নিরিখে পরিবহন খরচ কমিয়ে পরােক্ষ কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি দূর করে স্বচ্ছতা আনতে এই পদক্ষেপ যে সময়ােপযােগী তা বলা বাহুল্য।


[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”2″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]