জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলােপ : সমস্যা ও সম্ভাবনা

জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলােপ : সমস্যা ও সম্ভাবনা

[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”2″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]

ভূমিকা :

সম্প্রতি লােকসভায় জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধাসূচক ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি এবং সেই প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপকে কেন্দ্র করে ভারতীয় তথা আন্তর্জাতিক দুনিয়া সরগরম হয়ে উঠেছে।

এতে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে যেমন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তেমনি পাকিস্তান ও চিন এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়ায় একটা ঠাণ্ডা লড়াই-র পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

তাই এই প্রেক্ষিতে সমস্যা যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি অনেক সম্ভাবনার দ্বারও খুলে গেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতি যেহেতু প্রধান অস্ত্র তাই এর ভালাে-মন্দ সবদিকই উন্মুক্ত হচ্ছে।

৩৭০ ধারা কী ও কেন :

১৯৪৯ সালে জওহরলাল নেহেরুর নির্দেশে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে বিশেষ খসড়া প্রস্তুতিতে তৎকালীন আইনমন্ত্রী বি. আর. আম্বেদকর শেখ আবদুল্লার সঙ্গে বৈঠকে বসেন ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গােপালস্বামী আয়াঙ্গার (জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং-এর মন্ত্রিসভার সদস্য) ৩৭০ ধারার খসড়া প্রস্তুত হয় এবং ১৯৫২-র ১৫ নভেম্বর সংশােধিত খসড়া অনুযায়ী রাজ্যে বিধানসভা ও রাজ্যপালের ভূমিকা স্পষ্ট হয় এবং এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমানা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ভারতীয় সংসদ।

৩৭০ ধারা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যােগাযােগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে জম্মু কাশ্মীরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। এমনকি কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না কেন্দ্র বা সংসদেরও। আইন প্রণয়ন করতে হলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সহমত নিতে হত। ৩৭০ ধারার অধীনে ৩৫-এ ধারায় কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাও বিশেষ সুবিধা পেতেন—অন্য রাজ্যের বাসিন্দারা জমি কেনা, চাকরি করার সুযোেগ পেতেন না।

৩৭০ ধারা বিলােপ :

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা না দিয়ে ৩৭০ ধারা বাতিল করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হল জম্মু ও কাশ্মীরকে, সেই সঙ্গে লাদাখ-কে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার বিল সংসদে পাশ হল। সংবিধানের ৩নং অনুচ্ছেদে জম্মু কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা হয়েছে। ৩৭০ ধারা অনুযায়ী এ রাজ্যের জনগণ স্থায়ী বাসিন্দা, নাগরিক নয়।

কারা বাসিন্দা তা ঠিক করত জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা। সেই প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা ও বিশেষ স্বায়ত্ত শাসন-এর ক্ষমতা হারাল। সেইসঙ্গে কেন্দ্র প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যােগাযােগ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে এবং সংসদ আইন প্রণয়নের ক্ষমতা অর্জন করল।

অন্য রাজ্যের বাসিন্দারা জমি কিনতে পারবে, চাকরির আবেদন করতে পারবে, এখানের কোনাে মহিলা অন্য রাজ্যের কোনাে পুরুষকে বিয়ে করলে সম্পত্তির অধিকার থেকে যে বতি হতেন, তা রক্ষিত থাকবে। ৫ই আগস্ট, ২০১৯ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব দেন লােকসভায় এবং তােকসভা ও রাজ্যসভায় তা সংখ্যাধিক্যের জোরে পাশ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর এর পর তা আইনে পরিণত হয়।

বিতর্ক ও সমস্যা :

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রবল বিরােধিতা করেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি বলেন, আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের কালাে দিন। ৩৭০ ধারাকে বাতিল করে দেওয়ার কার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।

তিনি আরাে বলেন, রাজ্যের মানুষকে ভয় দেখিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর দখল করতে চাইছে তারা। কাশ্মীরকে যে কথা দেওয়া হয়েছিল, তা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা বলেছেন, এটা একটা হতাশাজনক সিদ্ধান্ত।

কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হল। রাজনৈতিক দলগুলি স্পষ্টত দুভাগে বিভক্ত। বিপক্ষে যারা তাদের মত হল কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে আলােচনা করে তা করলে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হত।

তাছাড়া ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতিকে নজরবন্দি করা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া, বাইরের কাউকে ওখানে ঢুকতে না দিয়ে সামরিক বাহিনী বৃদ্ধি করার বিরুদ্ধে অনেকেই সরব হয়েছেন। ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, গণপরিষদ নতুন করে না বসলে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলােপ সম্ভব নয়।

কেউ কেউ মনে করেন, যদি ভারতের একশাে কোটি মানুষও বলে কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, আর কাশ্মীরের মানুষ সে কথা না মানে তাহলে কিন্তু আইনি পথে বা গণতান্ত্রিক পন্থায় ভারত সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

নারীদের সমস্যা :

আসলে মুসলিম প্রধান জম্মু ও কাশ্মীর ৩৭০ ধারার মাধ্যমে যে বিশেষ সুযােগ পেয়ে আসত, তা থেকে বঞ্চিত হলে কিছু বিক্ষোভ তাে হবেই। তবে নারী পুরুষের সমানাধিকার সেখানে প্রতিষ্ঠিত হবে নাকি কাশ্মীরীদের জীবন আরাে দুঃখ কষ্টময় ও অনিশ্চয়তায় তলিয়ে যাবে তা ভবিষ্যৎ বলবে।

তবে কাশ্মীরী মেয়েদের যাদের স্বামী নিখোঁজ, সন্তান নিখোঁজ, তাদের হদিশ না পেলে, গণকবরে পরিচয়হীন যারা শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় না জানালে, সেনাবাহিনীর হাতে অত্যাচারিত ও নিহতদের সেই হাজার হাজার মা, বােন ও স্ত্রী-কন্যাদের মনের ক্ষত কী করে শুকবে?

সম্ভাবনা:

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাম্য ও স্বাধীনতার কথা মেনে নিলে ভারতের অন্তর্ভুক্ত কোনাে স্থান বিশেষ সুবিধা বা কম সুবিধা পেতে পারে না, তাই সরকারপক্ষ মনে করে এই ৩৭০ ধারা বিলােপের ফলে কিছু মানুষের কর্তৃত্ব চলে গেলেও উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

তাছাড়া কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদী ক্রিয়াকর্ম বন্ধ হবে—পাকিস্তানের গুপ্ত সন্ত্রাসের আঁতুড় ঘরকে বন্ধ করে দেওয়া যাবে ও ভারত রাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের মতাে সবকিছু নাগরিক সুযােগ সুবিধা সেখানে পৌঁছে দেওয়া যাবে।

উপসংহার :

নতুন কিছু উদ্যোগ বিতর্ক সৃষ্টি করবেই, বিশেষ করে প্রায় ৭০ বছর ধরে চলে আসা বিষয়গুলি নিমেষের মধ্যে দূরীভূত হলে, সুবিধা প্রাপকরা আক্ষেপ তাে করবেনই। তবে কাশ্মীরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই।


[su_posts template=”templates/list-loop.php” posts_per_page=”3″ tax_term=”1392″ order=”desc” orderby=”rand”]