কে বাঁচায় কে বাঁচে সংক্ষিপ্ত গল্প

মৃত্যুপ্তয় অফিস যাওয়ার পথে প্রথম অনাহারে মানুষকে মরতে দেখে ৷ ফুটপাথে মৃত্যুর কথা এতদিন হয় শুনেছে, নয়তো পড়েছে। ফুটপাথে হাঁটা তার দরকার হয় না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামান্য দু-পা হেঁটে ট্রামে চড়ে ট্রাম থেকে নেমেই অফিস। বাড়ি তার এমন অঞ্লে, যেখানে ফুটপাথ সামান্য । ফলে সে-অঞলে ফুটপাথের বাসিন্দা নেই। মরার দৃশ্যও নেই। বাজার-হাটের হ্যাপা পোয়ায় ছোটো ভাই, নয়তো চাকর। ফুটপাথে মৃত্যুর দৃশ্য মৃত্যুঞপ্তয়ের মনে আঘাত হানে ৷ মানসিক প্রতিক্রিয়া ও বেদনাবোধের ফলে মৃত্যুপ্তয় শারীরিক কষ্ট অনুভব করে। তার অফিসে তার জন্য নির্ধারিত ছোট্ট ঘরটার ভিতর ঢুকে পড়ে চেয়ারে বসে পড়ার পর অসুস্থতা বোধ করতে থাকে৷ একটু পরে উঠে কলঘরে গিয়ে বাড়িতে পেট ভরে যা খেয়েছিল, বমি করে তা প্রায় উগরে দেয়। পাশের ঘরে তার সমপদস্থ সহকর্মী নিখিল বসে । সে যখন মৃত্যুঞ্তয়ের খবর নিতে আসে, মৃত্যুপ্তয় তখন কলঘর থেকে বেরিয়ে কাচের গ্লাসে জল খেয়ে দেয়ালের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দুজনে সমান বেতন পায়। মৃত্যুঞ্জয় একটা বাড়তি দায়িত্ব পালন করার জন্য পঞাশ টাকা বেশি পায়। নিখিল একটু আলসে প্রকৃতির, রোগা চেহারার, তবে তীক্ষ বুদ্ধির মানুষ। মৃত্যুপ্তয়ের বিয়ের দু-বছর আগে তার বিয়ে হয়েছে। আট বছরে দু-সম্তানের জনক সে সংসারের প্রতি তেমন একাগ্রচিত্ত নয়। বই পড়ে লব্ধ জ্ঞানে চিন্তার জগৎ বানিয়ে অবসর জীবন কাটিয়ে দিতে চায়। নিখিল অন্য সবার মতো মৃত্যুপ্তয়কে বেশ পছন্দ করে। একটু অবজ্ঞার মনোভাব তার প্রতি থাকলেও তাকে ভালোবাসে । মৃত্যুপ্তয় শান্ত, নিরীহ ও দরদি প্রকৃতির ভালো মানুষ। সৎ ও সরল। মানবসভ্যতার, সবচেয়ে টা প্রাচীন ও পচা আদর্শবাদের কল্পনা-তাপস। কিন্তু মৃত্যুপ্তয় দুর্বলচিত্ত, ভাব্রবণ ও আদর্শবাদী নয়। তার মানস ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া শথ নয়, নিস্তেজও নয়। তার মধ্যে শস্তির উৎস আছে। অব্যয়কে শব্দরূপ দেওয়ার চেষ্টায় যে শত্তি বহ্ুক্ষয় হয়েছে মানুষের জগতে, তার একটা অংশ মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে আছে। ফলে নিখিল মৃত্যুঞ্তয়ের কাছে পরাভূত । ঈর্যাধিত নিখিল মনে মনে ভাবে, সে নিখিল না হয়ে মৃত্যুঞ্জয় হলে মন্দ হত না।mমৃত্যুপ্তয়ের বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থা দেখে নিখিলের অনুমান যে, কিছু একটা সমস্যার  তার সংঘাত ঘটেছে। কাচের শার্সিতে বাধাপ্রাপ্ত মৌমাছি যেমন মাথা খোঁড়ে, মৃত্যুপ্তয় তেমনি দা অকারণ ও অর্থহীন সমস্যার অনুচিত কাঠিন্যের কাছে বাধা পেয়ে মৌমাছির মতো ছটকাচ্ছে।