কাশ্মীরের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো।_অথবা_ কাশ্মীরকে কীভাবে ভারতের অন্তর্ভুত্ত কর হয় তা লেখো।

কাশ্মীরের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা
কাশ্মীরকে কীভাবে ভারতের অন্তর্ভুত্ত কর হয় তা লেখো।

উত্তর : ভূমিকা : ১৯৪৭ খ্রিঃ ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করে তারপর ভারতীয় ভূখণ্ডে অস্তত ৫০০টি স্বাধীন দেশীয় রাজ্যর অস্তিত্ব ছিল। ভারতের স্বাধীনতা আইনের দ্বারা এই রাজ্যগুলি নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অথবা ভারত ও পাকিস্তানের যে কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগদানের অধিকার পায়। “লৌহ মানব’ নামে খ্যাত ভারতের সর্দার বল্পভভাই প্যাটেলের চাপের ফলে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যই ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে “INSTRUMENT OF ACCESSION” নামক ভারত ভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করে ভারতরে অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু যে তিনটি ব্যতিক্রমী রাজ্য ভারতভূস্তির বিষয়ে বিশেষ সমস্যা সৃষ্টি করেছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল কাশ্মীর। কাশ্মীরের ভারতভু্তি নিয়ে যে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল তার সমাধান আজও হয়নি।
কাশ্মীরের স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা : ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় কাশ্মীরের রাজা ছিলেন হরি সিং। ভারত ও পাকিস্তান নিজ নিজ দেশে হরি সিংকে যোগদানের আবেদন জানান। কিন্তু মহারাজা হরি সিং কোনো দেশে যোগদান না করে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থাকার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। অপরদিকে কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দল “ন্যাশনাল কনফারেন্স’ এর নেতা শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরের ভারত ভূক্তির জন্য আন্দোলন করেন।
 
কাশ্মীরে পাক আক্রমণ ও ভারতভূপ্তির দলিলে স্বাক্ষর : কাশ্মীরের রাজা হরি সিং স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। ভারতও এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বিরোধী ছিল। কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দল ও তার প্রাণপুরুষ এক্ষেত্রে কাশ্মীরের ভারতভূপ্তি সম্পর্কে জনমত গঠন করতে থাকেন। কিন্তু যেহেতু মুসলিমদের সংখ্যা বেশি সেজন্য পাকিস্তান এই রাজ্যটিকে নিজের অধীনে আনতে উদ্যোগী হন। এই অস্থায় ১৯৪৭ খ্রীঃ ২২শে অক্টোবর পাকিস্তানের মদতপূর্ণ হানাদার বাহিনী কাশ্মীরে প্রবেশ করে হত্যা, লুঠ, ও নির্যাতন সহ ব্যাপক হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করে। এই অবস্থায় মহারাজা হরি সিং রাজধানী শ্রীনগর থেকে পালিয়ে যান এবং ২৫ অক্টোবর ভারত সরকারের কাছে সাময়িক সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভারত সরকার জানায় যে, মহারাজা ভারতভূপ্তির দলিলে সাক্ষর করলে তবে ভারত কাশ্মীরে
সেনা পাঠাবে। তারপর মহারাজা হরি সিং ২৬ অক্টোবর ভারতভূন্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং কাশ্মীরের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল তা সমর্থন করে। পরদিন ভারত সেনাবাহিনী শ্রীনগরে প্রবেশ করে এবং কাশ্মীরের ১/৩ অংশ দখল করে নেয়।

উপসংহার : পাকিস্তান পূর্ণাঙ্ কাশ্মীর না পেয়ে তখন থেকে মাঝে মাঝেই কাশ্মীরে আক্রমণ চালায় । এর ফলে কাশ্মীরের উপর আধিপত্য প্রতিস্থানকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক ও বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ ও ১৯৯৯ স্রীঃ বড় ধরনের যুদ্ধ সংগঠিত হয়।