আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের বণনা দাও।

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের বণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলনের সংখ্যা ও তীব্রতা তুলনায় কম ছিল। কিন্তু কৃষক আন্দোলন সেই অভাব পূরণ করতে অনেকাংশেই সফল হয়। এই আন্দোলন ছিল অহিংস। লবণের মতো নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য আন্দোলনের বিষয় হওয়ায় সর্বশ্রেণির মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দেয়। বিশেষত কৃষকশ্রেণি এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

আইন অমান্য আন্দোলন চলাকালীন ভারতীয় কৃষক বিদ্রোহ :
১। স্থানীয় নেতৃত্ব : আইন অমান্য আন্দোলনের প্রথম দিকেই কংগ্রেসের নেতৃত্বস্থানীয়দের গ্রেফতার করা হয়। তখন আন্দোলন চালানোর দায়িত্ব এসে পড়ে স্থানীয় নেতাদের ওপর । তারা আন্দোলন আরও বেশি হিংসাত্মক করে তোলেন।
২। ধনী কৃষকদের ভূমিকা : বাংলায় কংগ্রেসি আন্দোলনের অন্যতম ছিলেন ধনী কৃষকরা। তারা একদিকে দরিদ্র ভাগচাষি বা বর্গাদার চাষিদের অধিকারের যেমন বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে তেমন বিরোধিতা করেন বড়ো জমিদারদেরও ৷ এঁদের উদ্যোগে আরামবাগ, কীঁথি বা তমলুক অঞ্লে অহিংস আইন অমান্য আন্দোলন গড়ে ওঠে।

৩। জমিদারদের কৃষক বিরোধিতা : পূর্ববঙ্গে কৃষক আন্দোলনে ব্রিটিশ শাসনের পাশাপাশি জমিদারদেরও বিরোধিতা করা হয়। হিন্দু ও মুসলমান কৃষকরা একত্রে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। স্থানীয় মহাজন ও জমিদারের বাড়িতে হামলা চালানো হয়।

৪। বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত ও মাদ্রাজ প্রদেশে কৃষক আন্দোলন : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গণ আইন অমান্য আন্দোলনের পর্বে এই অঞ্লগুলিতে কংগ্রেস কর্মীদের নেতৃত্বে কৃষকেরা খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করে। বাংলায় “নিখিল বঙ্ঞা প্রজা পার্টি” নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এইসব অঞলে সরকারি দমননীতি চরম আকার ধারণ করে। এইসব SGT গ্রামে গ্রামে পুলিশ সন্ত্রাস শুরু হয়। জমিদাররা পুলিশ-এর সহায়তায় অনেক বাড়ি ঘর ধ্বংস করে এবং তাদের সম্পত্তি লুঠ পাট করে।

৫। দক্ষিণ ভারতে কৃষক আন্দোলন : কিষাণ সভা গঠনের বিষয়ে সবরকম উদ্যোগী হয়ে অস্থবপ্রদেশের নেতা অধ্যাপক এন জি রঙ্গা। অল্পদিনের মধ্যেই নানা স্থানে এই সংস্থার শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্যান্য অঞলেও কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন।
৬। সারা ভারত কিষাণ সভার নামকরণ : ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বিহারের গয়া জেলার নিয়ামতপুরে সারা ভারত কিযাণ কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে। সেখানে কিযাণ কংগ্রেসের নামকরণ হয়-_’সারা ভারত কিষাণ সভা” বা নিখিল ভারত কিযাণ সভা।

৭। কিষাণ সভার দাবি ও কার্যকলাপ : ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে কিযাণ কংগ্রেস একটি ইস্তাহার প্রকাশ করে। ১৯৩৬ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে জাতীয় কংগ্রেসের ফৈজপুর অধিবেশনে এই ইস্তাহারটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ইস্তাহারে কতকগুলি দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করার কথা বলা হয় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলি হল–(ক) মহাজনি প্রথার বিলোপসাধন করতে হবে। (খ) খাজনা হার ৫০ শতাংশ কমাতে হবে। (গ) বেগারপ্রথা উচ্ছেদ করতে হবে। (8) বনজ সম্পদ আহরণের পূর্ণ অধিকার দিতে হবে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে ১৯৩০-৩১ থ্রিঃ আইন অমান্য আন্দোলন ভারতীয় কৃষকদের সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহনের সাহস জুগিয়েছিল। ভারতীয় কৃষক সমাজ বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল এবং এই বৈচিত্র্যের মধ্যে এঁক্যের প্রতীক ছিলেন গান্বিজি।