আইন অমান্য আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। এই আন্দোলনের গুরুত্বব্যাখ্যা করো।_অথবা _আইন অমান্য আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। এই আন্দোলনে কতখানিসফল হয়েছিল ?

আইন অমান্য আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। এই আন্দোলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
              অথবা
আইন অমান্য আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। এই আন্দোলনে কতখানি সফল হয়েছিল ?

 

উত্তর : ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯২৯ থেকে ১৯৩১ খ্রিঃ পর্যন্ত আইন অমান্য আন্দোলন এক সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অসহযোগ আন্দোলনের পরে জাতীয় সংগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণঅভ্যুত্থান হল আইন অমান্য আন্দোলন।
পটভূমিকা : সমকালীন ভারতবর্ষের নানা ঘটনাবলি ও ক্ষোভের পরিণতি হল আইন অমান্য আন্দোলন। যেমন–(i) বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা (ii) কমিউনিস্ট দলের উদ্ভব (iii) পুঁজিপতি শ্রেণির অসম্তোষ (iv) সাম্প্রদায়িক দাঙ্জা-হাঙ্গামা। প্রথম পর্যায়
 
(i) আন্দোলনের সূচনা : লবণ সত্যাগ্রহ : সে সময় ভারতবাসীদের স্বহস্তে লবণ তৈরি করা দণ্ডনীয় অপরাধ ছিল। এই অবস্থায় ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ১২ মার্চ লবণ আইন ভঙ্গের উদ্দেশ্যে গান্ধিজি সবরমতী আশ্রম থেকে গুজরাতের সমুদ্রতীরে ডান্ডি অভিমুখে ৭৮ জন সত্যাগ্রহীকে নিয়ে এঁতিহাসিক ডান্ডি অভিযান শুরু করেন। ৬ এপ্রিল ডাণ্ডিতে স্বহস্তে সমুদ্রের জল থেকে লবণ তৈরি করে লবণ আইন ভঙ্জা করেন এবং আন্দোলনের সূচনা করেন।
 
(ii) আন্দোলনের ব্যাপকতা : গাম্ধিজির আহ্বানে আইন অমান্য আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ গুজরাত উপকূল থেকে দাবানলের মতো সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। মহা উল্লাসে সর্বত্রই চলতে থাকে লবণ তৈরি। কলকাতার মেয়র যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত প্রকাশ্য জনসভায় নিষিদ্ধ গ্রন্থ পাঠ করে আইন ভঙ্জা করে। উত্তর পশ্চিম সীমান্তে খান আব্দুল গফ্ফর খান এর নেতৃত্বে খোদা-ই-খিদমৎসার দলের অনুচরেরা আন্দোলনকে তীব্র রূপ দেন।
(iii) সরকারি দমনীতি : আন্দোলনের ব্যাপকতা করে ব্রিটিশ সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং আন্দোলনকে দমন করার জন্য নিষ্ঠুর দমননীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। গান্বিজি সহ প্রায় ৭৬০০০ সত্যাগ্রহীকে গ্রেফতার করা হয়। তাছাড়া বেত্রাঘাত, বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আইন অমান্য আন্দোলন : ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক বসে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গান্বিজি এবং নারীসমাজের পক্ষ থেকে সরোজিনী নাইডু বৈঠকে যোগ দেন। গাম্বিজি বড়োলাট লর্ড উইলিংডনকে টেলিগ্রাম করে এই দমন নীতি বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু তিনি এতে কর্ণপাত না করায় গাম্বিজি পুনরায় আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেন।
 
(i) সাম্প্রদায়িক বীটোয়ারা : যখন সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে মুখর, তখন আন্দোলনের দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার এক কূটনৈতিক চাল দেয়। ১৯৩২-এর ১৬ আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড “সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ার” জারি করে মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান ও হিন্দুদের জন্য পৃথক পৃথক নির্বাচনের অধিকার দিয়ে ভারতীয় জনমতকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র করেন।
 
(ii) পুনা চুপ্তি : গাম্ধিজির জীবন বাঁচাতে অনুন্নত সম্প্রদায়ের নেতা ড. বি. আর আসম্বেদকর ও গাম্থিজির মধ্যে সমঝোতামূলক পুনা চুপ্তি সম্পাদিত হয়।
 
(iii) গুরুত্ব: (a) এই আন্দোলন ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পথকে প্রশস্ত করে দেয় (b) এই আন্দোলন বহির্বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।