অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের পূর্বে কৃষক আন্দোলনের পরিচয় দাও।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের পূর্বে কৃষক আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর : ভূমিকা : অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞলে কৃষক বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আর গান্বিজিসহ কংগ্রেসের প্রথম সারির সকল নেতারা এই কৃষক বিদ্রোহগুলিকে অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গো যুস্ত করতে তৎপর হয়ে ওঠেন।
বিভিন্ন স্থানে কৃষক আন্দোলন : অসহযোগ আন্দোলনের পূর্বে বাংলা মেদিনীপুরের কীথি ও তমলুক, পাঞ্জাবের জলন্ধর, হোসিয়ারপুর, উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি, প্রতাপগড়, সুলতানপুর ও ফৈজাবাদ, গুজরাতের বারদৌলি প্রভৃতি অঞলের কৃষকেরা ব্যাপকভাবে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল।

বাংলা ও বিহারে কৃষক আন্দোলন :১৯১৯-২০ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিদ্যানন্দের নেতৃত্বে দারভাঙ্গার জমিদারের বিরুদ্ধে বিহারের কৃষকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বাংলার বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে মেদিনীপুরে কৃষক ও সম্পন্ন চাষিরা ইউনিয়ন বোর্ড বর্জন ও চৌকিদারি কর প্রদান করে দেয় পূর্ববাংলার রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর প্রভৃতি স্থানের কৃষকেরা নীলচাযের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে।

অশ্থপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন : অস্থপ্রদেশের রায়চোটি তালুক (কুড়াপ্পা) ও পালান্ড তালুকে (গেন্টুর রেখা) যে সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয়, তাতেও খাজনা হ্রাস ও অরণ্য আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকরা আন্দোলনে সমবেত হন।

উত্তরপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন : এখানে মদনমোহন মালব্যের নেতৃত্বে যুস্তপ্রদেশ কিযষাণ সভা গড়ে ওঠে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে। তাদের দাবিগুলি কংগ্রেসের কর্মসূচিতে স্থান পেয়েছিল। ফলে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকেরা তালুকদারের শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শামিল হয়। বাবা রামচন্দ্র কৃষকদের সংগঠিত করেন। পরে তিনি অযোধ্যা কিযাণ সভা গড়ে তোলেন ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে । 
বরদৌলি সত্যাগ্রহ : গুজরাতের সুরাট জেলার বরদৌলি গ্রামে “ভারতের বিসমার্ক” হিসাবে খ্যাত সর্দার বল্পভভাই প্যাটেল-এর নেতৃত্বে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে চাষিরা খাজনা না দেওয়ায় দাবিতে জমিদারের বিরুদ্ধে এক আন্দোলনের পরিচালনা করেন। এই আন্দোলন বরদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

মালাবারের কৃষক বিদ্রোহ : অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে মালাবারের মোপলা কৃষকরা জমিদারদের শোষণ ও প্রবর্তিত প্রজাস্বত্ব আইন বাস্তবে প্রচলিত না হওয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের জেলা অধিবেশন থেকেই মোপলাদের কৃষক প্রতিরোধ গড়ে ওঠে । সরকার কঠোর হাতে এই আন্দোলন দমন করে। এতে প্রচুর কৃষক প্রাণ হারায় এবং তাদের জমি বাজেয়াপ্ত হয়।

উপসংহার : এই পার্টি শ্রেণি সংগ্রাম সম্পর্কে শ্রমিকশ্রেণিকে সচেতন করে তোলে এবং তারা মনে করে যে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে না পারলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে পড়বে।