অন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির ভূমিকা (Role of theInternational Organisations in the Development of International Relations)

✳️   অন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির ভূমিকা 
(Role of theInternational Organisations in the Development of International Relations)

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে যে দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠন উল্লেখযােগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে সেগুলি হল—
[১] জাতিসংঘ এবং [২] সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ।

[] জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক; প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ (League of Nations) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (United Nations) নামে দুটি আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি শাস্ত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যাতে গড়ে উঠতে পারে, সে ব্যাপারে ওই দুটি সংগঠনের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। জাতিসংঘ লন্ডন, মাদ্রিদ ও প্রাগে পঠনপাঠনসংক্রান্ত তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করেছিল। ওইসব সম্মেলন আহ্বানের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতাে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে একটি পৃথক শাস্ত্র হিসেবে গড়ে তোেলা। জির্মানের মতে, ওই সম্মেলনগুলি একথা স্বীকার করে নিয়েছিল যে, তদানীন্তন বিশ-পরিস্থিতিতে পৃথকীকরণযােগ্য এমন বহু বিষয় রয়েছে, যেগুলি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সম্মেলনে সমবেত প্রতিনিধিবৃন্দ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়-তুল্য প্রতিষ্ঠানগুলি (Institutions of University ranks)-তে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পঠনপাঠন অবিলম্বেশুরু করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছিলেন। আধুনিক বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পঠনপাঠনের বিষয়গুলি (topics)-কে চিহ্নিত করার ওপরেও তারা নজর দিয়েছিলেন। জাতিসংঘের পরিষদ (Council) ও সভা (Assembly)-য় পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে প্রকাশ্য আলােচনার সময় জনসাধারণের প্রয়ােজনীয়তা ও ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুরােধ জানানাে হয়। তা ছাড়া, ওই আলােচনার সময় অধিকতর যুক্তিসংগতভাবে জাতীয় স্বার্থ (national interests)- এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছিল। উদীয়মান আন্তর্জাতিক সমাজের স্বার্থের সঙ্গে প্রতিটি রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের এ পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তােলার ওপর জোর দেওয়া হয়। এসবের ফলে পররাষ্ট্রনীতির ওপর গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। দুটি বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনসাধারণের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে একথা সত্য যে, ১৯২৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কেবল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলির সম্পর্ক আলােচনা ও বিশ্লেষণের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছিল। কিন্তু ১৯২৯ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বিরাট মন্দা (Great Depression) শর হয়েছিল, তার নেতিবাচক প্রভাব ইউরােপের দেশগুলি ছাড়াও ক্রমশ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে হিটলারের অভ্যুত্থানের অন্যতম কারণ হিসেবে ওই বিশ্বব্যাপী মন্দাকে চিহ্নিত করা হয়। এরপর ১৯৩৯ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ওই সময় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পর্ক (domestic and foreign relations)-এর মধ্যেকার পার্থক্য কার্যত মুছে যায়। কারণ, একে অপরের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি।
[2]  সম্মিলিত জাতিগ ও অন্তর্জাতিক সম্পর্ক: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপকতা, মারণাস্ত্রের অভিনবত্ব ও ধ্বংসীলালা, অগণিত মানুষের প্রাণনাশ সমগ্র বিশ্বের মানুষকে পুনরায় শান্তিকামী করে তােলে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাজনৈতিক নেতবন্দও ভবিষ্যতে বিশ্ববিধ্বংসী যুদ্ধের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের (যা রাষ্ট্রসংঘ নামেও পরিচিত)। দ্বিতীয় বিয়ন্ধের পরবর্তী সময়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি দুর্বল হয়ে পড়লে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের উপনিবেশগলি একের পর এক স্বাধীনতা লাভ করতে থাকে। এরূপ পরিবর্তিত বিশ্ব-পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পঠনপাঠনের প্রয়ােজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। এ বিষয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জও অগ্রণী ভমিকা পতন আসে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অন্যতম বিশেষজ্ঞ সংস্থা ইউনেস্কো (UNESCO’- পালন করতে এগিয়ে আসে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অন্যতম বিশেষজ্ঞ সংm ও ‘United Nations Educational, C – Educational, Scientific and Cultural Organisation) ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর গরিসে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের একটি সম্মেলন আহ্বান করে। ওই সম্মেলন মাসে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের The Paris Conference’) নামে পরিচিত। ওই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ‘প্যারিস সম্মেলন’ (‘The Paris Conference’) নামে পরিচিত।  পৰতপর্ণ শাখা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সম্মেলনে তিনটি বিষয়কে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সম্মেলনে তিনটি বিষয়কে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলােচনাক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই বিষয়গুলি হল [১] আন্তর্জাতিক রাজনীতি (Inter- national Politics), [২] আন্তর্জাতিক সংগঠন (International Organisation) এবং [৩] আন্তর্জাতিক আইন (International Law)।