সবুজ সাথী প্রকল্প বাংলা রচনা | সবুজ সাথী প্রকল্প ও উন্নয়নের দিশা

সবুজ সাথী প্রকল্প ও উন্নয়নের দিশা

ভূমিকা :

সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে, মেয়েদের স্কুলমুখী করতে, মাঝপথে ছেলেমেয়েদের পড়াশােনা বন্ধ হওয়া বা স্কুলছুট (Dropout) রুখতে, বাল্যবিবাহের হার কমাতে তথা সাধারণ পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশােনা ও স্বনির্ভরতায় উদ্দীপিত করতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক অবিস্মরণীয় প্রকল্প সবুজ সাথী’ পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের দিশা দেখাতে পেরেছে—যা কন্যাশ্রী প্রকল্পকেও শক্তিশালী করতে পেরেছে।

প্রকল্প :

২০১৫-২০১৬ সালের বাজেটে মাননীয় অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এই সবুজ সাথী’ প্রকল্পের ঘােষণা করেন—যাতে ঐ অর্থবর্ষে রাজ্যের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল ও মাদ্রাসার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদানের সংকল্প গ্রহণ করা হয় এবং লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চল্লিশ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের তা প্রদান করা হবে। ২০১৫-র সেপ্টেম্বরে পশ্চিম মেদিনীপুরে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের শুভ সূচনা করেন—যে বাইসাইকেলের সামনে একটি বাস্কেট থাকবে।

প্রয়ােগ :

এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সরকার একটি স্টিয়ারিং কমিটি গড়ে দেন যাতে শিক্ষা দপ্তর থেকে শুরু করে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরও যুক্ত থাকে। এই কমিটির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে জেলা, মহকুমা ও ব্লক স্তরে সংযােগকারী অফিসারও নিয়ােগ করা হয়।

সেইসঙ্গে বাইসাইকেল যােগান দেওয়ার জন্য ই-টেন্ডার পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত ‘হিরাে সাইকেল লিমিটেড’, ‘টি আই সাইকেল লিমিটেড এবং ‘অ্যাভন সাইকেল লিমিটেড’ এই বাইসাইকেল দেওয়ার সরকারি বরাত পায়।

শুধু তাই নয়, বাইসাইকেল ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে সরাসরি তুলে দেবার জন্য ও যথাযথ পরিচালনার জন্য স্কুলগুলির ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যা নির্ণয় করে কীভাবে তা প্রদান করা হবে—তার একটি সামগ্রিক রূপরেখা তৈরি হয়।

প্রায় ৮,৯০০ স্কুল, ৪০ লক্ষ শিক্ষার্থী, ২৫০০ বিতরণ কেন্দ্র, ৫০০-রও বেশি সরকারি পদাধিকারী, পঞ্চায়েত দপ্তর, বিধায়ক, সাংসদ এই প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়। প্রথমে এই প্রকল্প শুধুমাত্র ছাত্রীদের জন্য চালু হলেও পরে ছাত্রদেরও যুক্ত করা হয়।

বর্তমান অবস্থা :

এই সবুজ সাথী’ প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ লক্ষ বাইসাইকেল শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয়েছে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবর্যে। কোনো ছাত্রছাত্রী নবম শ্রেণিতে পড়াশােনা করলে তারাই এই বাইসাইকেল পাওয়ার অধিকারীহবে। তৃতীয় পর্যায়ে আরাে ২৫ লক্ষ বাইসাইকেল বিলি করার ব্যবস্থা হয়েছে।

নামকরণ :

যখন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ২০১৫-র জুন মাসে জেলা সফরে বেরিয়েছিলেন তখন কোন এক ছাত্র তাকে প্রশ্ন করেন ছাত্রীরা যদি স্কুলে আসার জন্য সাইকেল পায় ছাত্ররা নয় কেন? এই জিজ্ঞাসা থেকে তাঁর মাথায় পরিকল্পনা আসে ‘সবুজ সাথী প্রকল্পের। আর এই নামটি তার পরিকল্পনায় আসে দার্জিলিং থেকে বাগডােগরা বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে পাহাড়ের ঝরনা দেখে।

তিনি সবুজ’ বলতে ফুটফুটে সুন্দর ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝিয়েছেন, এবং তাদের স্কুলে যাওয়ার সাথী’ হল বাইসাইকেল। রবীন্দ্রনাথ ‘সবুজের অভিযান’ কবিতায় যে যৌবনের বন্দনা করেছেন এই ‘সবুজ সাথী’ সেই যৌবন-কে স্বাগত জানাতে উদ্দীপিত করতে যে সাহায্য করবে তা বলাবাহুল্য।

সুবিধা :

সবুজ সাথী’ প্রকল্প শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের উপঢৌকন নয় বরং তা গ্রামালে পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নে যথেষ্ট সহায়ক। কেননা ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে, শিশুশ্রম রােধ করতে, শিক্ষার আলাে থেকে পিছিয়ে পড়ে জীবন বিকাশের স্তর থেকে বিচ্যুত হয়ে অকালে ঝরে যাওয়া থেকে বাঁচতে এই প্রকল্পের কোনাে বিকল্প নেই।

উপসংহার :

সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য মহার্ঘভাতা না দিয়ে কিম্বা বেতনবৃদ্ধিকে পিছিয়ে রেখে দিদি দান খয়রাতে ব্যস্ত এই সমালােচনা যেমন আছে তেমনি আছে। সাইকেলের মান নিয়ে সমালােচনা এবং তা থাকবেই।

বৃহৎ কিছু করতে গেলে, প্রকৃত উন্নয়নকে তৃণমূল স্তরে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কাছে পৌঁছে দিতে হলে কাউকে কাউকে তাে কিছু করতেই হবে, আর সমালােচনা ও কুৎসা শুনতেই হবে।

কিন্তু সমালােচনা তাে উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দিতে পারবে না। কারণ যাদের জন্য এই প্রকল্প তারা তাে সুবিধা পেয়ে এগিয়ে চলেছে। স্কুল ছুটির পর যখন সবুজ সাথীর সাইকেল নিয়ে ছেলে-মেয়েরা সারিবদ্ধভাবে রাস্তা দিয়ে যায় তখন কার না ভাল লাগে?


সবুজ সাথী প্রকল্প রচনা

RECENT POST

LATEST POST