মিশরের ক্রীতদাসরা প্রধানত কী কী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকত? ( একাদশ শ্রেণির বিষয় ইতিহাস)

অর্থনীতির বিভিন্ন দিক

০ বর্ণনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :

২। মিশরের ক্রীতদাসরা প্রধানত কী কী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকত?

উ: প্রাচীন মিশরের ক্রীতদাসরা তাদের প্রভুর ও রাষ্ট্রের প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন কাজকর্ম করে দিত। মিশরের কোন কোন ক্রীতদাস নৃত্য বা সঙ্গীতকলার সঙ্গে
যুক্ত ছিল। তারা শিল্প প্রদর্শন করে দর্শকদের মনােরঞ্জন করত।

বিভিন্ন ক্রীতদাস অনেক অভিজাত ও ধনী পরিবারের কাজের দায়িত্ব সামলাত। তারা ফ্যারও, আভিজাত, পুরােহিতদের স্থাবর সম্পত্তির দেখাশােনা করত। অভিজাত পরিবারের সঙ্গে থাকায় তাদের সন্তানরা
কখনাে কখনাে বিশেষ মেধা ও যােগ্যতার পরিচয় দিয়ে প্রভুর প্রিয় পাত্র হয়ে উঠত।

সেক্ষেত্রে ক্রীতদাসরা বিভিন্ন উচ্চ সরকারি পদ লাভের সুযােগ পেত ও দাসত্ব থেকে
মুক্তির পর পূর্বতন প্রভুর পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপন করতে পারত। মিশরের বহু ক্রীতদাস ছিল শত্রুপক্ষের যুদ্ধবন্দী। যােদ্ধা হিসাবে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল।

ফলে বহু ক্রীতদাসকে মিশরের সেনাবাহিনীতে নিয়ােগ করা হয়েছিল। এছাড়া সম্রাটের দেহরক্ষী বা রাজপরিবারের পাহারাদার হিসাবেও বহু ক্রীতদাস কাজ করত। ক্রীতদাসরা প্রভুর কৃষি জমিতে নিযুক্ত থাকত তাদের শ্রমে
উর্বর কৃষিজমিতে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হত। খাদ্যশস্য এবং বাণিজ্যপণ্য উভয় ধরনের উৎপাদন কাজেই মিশরের ক্রীতদাসরা নিযুক্ত থাকত। তারা প্রভুর হয়ে নদীতে মাছ ধরত।

উদবৃত্ত কৃষিপণ্য ও মাছ বিদেশের বাজারে রপ্তানি করে মিশরের যথেষ্ট অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটেছিল। মিশরে বেশ কিছু ক্রীতদাস তাদের প্রভুর ব্যবসা-বাণিজ্য ও
অন্যান্য কজে হিসাবরক্ষক বা করণিক হিসাবে কাজ করত। ক্রীতদাসের মাধ্যমেই প্রভুর ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হত।

অধিকাংশ ক্রীতদাসরা পরিবারের গৃহভৃত্য হিসাবে কাজ করত। গৃহভৃত্য হিসাবে গৃহপরিস্কার, উদ্যান পরিচর্যা, রান্নাবান্না, নিত্যদিনের কাজ-কর্ম করত। ফলে তারা
প্রভুদেরর গৃহে সুখস্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারত। ক্রীতদাসরা বিভিন্ন কুটির শিল্পের কাজেও নিযুক্ত থাকত। তারা শনের চাষ করত এবং তা থেকে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি
করত। ক্রীতদাসরা সুতােকাটত ও বস্ত্র বুনত।

অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পের কাজেও ক্রীতদাসরা নিযুক্ত থাকত। খনি থেকে উত্তোলিত ধাতু দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও
গৃহস্থালির প্রয়ােজনীয় সামগ্রী তৈরি হত। ক্রীতদাসদের শিল্পােৎপাদনের ফলে মিশরের কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে শিল্প অর্থনীতির বিকাশ ঘটতে থাকে। মিশরের বিভিন্ন খনি থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের কাজে প্রচুর ক্রীতদাস নিযুক্ত থাকত। মিশরের বিপদ শঙ্কুল নুবিয়া ও সিনাই-এর সােন ও তামার খনিসহ অন্যান্য ধাতুর
খনিগুলিতে বহু শ্রমিক ক্রীতদাস কাজ করত।

তাদের কঠোর শ্রমের ফলে উত্তোলিত মূল্যবান খনিজ সম্পদ মিশরের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটিয়েছিল। বিপদ শঙ্কুল ও অস্বাস্থ্যকর খনিগুলিতে কাজ করার সময় জলের অভাব এবং মরুভূমির প্রান্তে তাপ প্রবাহে প্রচুর ক্রীতদাসের মৃত্যু হত। খনিতে কাজ করার ছাড়াও বহু ক্রীতদাস নীলনদের
নুড়ি, পাথর পরিষ্কার করে নদীকে নৌ চলাচলের উপযােগী করার কাজে নিযুক্ত থাকত। বহু ক্রীতদাস নির্মাণ কাজেও যুক্ত ছিল।