পৃথিবীর সাম্প্রতিক অতিমারী কোভিড-১৯
ভূমিকা: মন্বন্তরে মরিনি আমরা মারী নিয়ে ঘর করি’—একথা আবারও সত্য হল সাম্প্রতিক অতিমারী করােনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে। আমরা বাঙালি তথা ভারতীয়রা যে ধৈর্য, সাহস ও উদ্যম দেখিয়েছি তাতে বিশ্বের মধ্যে আমাদের সেরে ওঠার নিরিখে তথা করােনাকে জয় করার ক্ষেত্রে প্রথম স্থানেই রয়েছি। এর কারণ আমাদের নিজস্ব প্রতিরােধক্ষমতা। বিশ্বায়ন উত্তরকালে পৃথিবী যখন একটি মাত্র একক, সেখানে এ ধরনের রােগের আক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে গেলে চাই যথাযথ পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সম্যক সচেতনতা। তাহলেই অন্যান্য ক্ষেত্রের মতাে এইসব অতিমারীর ক্ষেত্রেও আমরা বলতে পারব—ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।
উৎস: করােনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চিনের উহান প্রদেশ হলেও আমাদের পশ্চিমবঙ্গে প্রথম তা ছড়িয়েছে লন্ডন থেকে আগত এক যুবকের মাধ্যমে। কোনাে কোনাে বিজ্ঞানীদের অনুমান ‘প্যাঙ্গোলিন’ নামক প্রাণী বা বাদুড় থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। আবার কারাে মতে তা ল্যাবরেটারিতে কৃত্রিমভাবে তৈরি। এ নিয়ে তথ্যানুসন্ধান ও গবেষণা চলতেই থাকবে, আসল কারণ ভবিষ্যই বলতে পারে। তবে এই ভাইরাস দুদিন থেকে চোদ্দ দিন গুপ্তভাবে থেকে মানুষের মধ্যে তা ছড়াতে পারে হাঁচি, কাশি, থুতু, কফ-এর কণার (droplet) মাধ্যমে এবং তাই তা এত সংক্রামক। এই ভাইরাস নাক, সাইনাস বা গলার উপরিভাগে সংক্রমণ ঘটায়।
লক্ষণ ও স্বরূপ : জ্বর, সর্দি, শুকনাে কফ, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, জিভে স্বাদ চলে যাওয়া, নাকে গন্ধ না পাওয়া প্রভৃতি করােনা ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ। এই ভাইরাস প্রথম প্রাণী থেকে সৃষ্ট হলেও তারপরে তা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় ও মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চিনের হুপেই প্রদেশের উহান নগরীতে প্রথম তা শনাক্ত করা হয়। পরে ভাইরাসটি চিনের মূল ভূখণ্ডের অন্যান্য প্রদেশ ও বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে থাইল্যান্ড, জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম আক্রান্তের খবর ১৭ই নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে পাওয়া যায়। ২০২০-র ৩০শে জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা এই রােগকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী জরুরি সতর্কতা জারি করে। ভাইরাসটির প্রজননের হার ১.৪ থেকে ৩.৯ পর্যন্ত বিস্তৃত।
সংক্রমণ: করােনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে প্রধানত দুই ধাপে ছড়াতে পারে। প্রথম পর্যায়ে করােনা ভাইরাস-সংক্রমিত ব্যক্তি ঘরের বাইরে গিয়ে মুখ না ঢেকে হাঁচি, কাশি উন্মুক্ত স্থানে প্রকাশ করলে আশেপাশে ১-২ মিটার পরিধির মধ্যে বাতাসে কয়েক ঘণ্টা ভাসমান থাকতে পারে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সেই ভাইরাস কণাযুক্ত বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করলে অন্য ব্যক্তিদের ফুসফুসেও শ্বাসনালি দিয়ে করােনা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া অন্য একটি সংক্রমণের প্রক্রিয়া হল—করােনা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি নিয়মবিধি না মানেন তাহলে তার হাতে বা ব্যবহৃত বস্তুতে ভাইরাস লেগে থাকতে পারে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমিত ব্যক্তি যদি কোনাে বস্তুর পৃষ্ঠতলে স্পর্শ করেন তাহলে পরবর্তী কয়েকদিন সেই ভাইরাস থেকে যেতে পারে। তৃতীয় পর্যায়ে যদি অন্য কোন ব্যক্তি ঐ বস্তুতে হাত দেন তাহলে সে সংক্রমিত হতে পারে। চতুর্থ পর্যায়ে ভাইরাস থাকা অবস্থায় হাত দিয়ে যদি কেউ নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করে তাহলে তখনই ভাইরাস উন্মুক্ত শ্ৰেঝিল্পি দিয়ে দেহের ভিতর প্রবেশ করে গলায় ও ফুসফুসে বংশ বিস্তার করে।
প্রতিরােধ: যেহেতু ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় এবং দু’ সপ্তাহ পর্যন্ত রােগটি অজান্তে থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে তাই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাটাই এই রােগ থেকে বাঁচবার প্রধান অস্ত্র। দ্বিতীয়ত, মুখে ও নাকে মাস্ক পরে অপরের সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। তৃতীয়ত, হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা এবং হাত স্পর্শ করার ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি থেকে নিজেদের সচেতন রাখা। বাইরে থেকে এসে ব্যবহৃত জামাকাপড় পৃথক জায়গায় রেখে গরম জলে সাবান দিয়ে কেচে ফেলা ও ব্যবহৃত সমগ্র জিনিষগুলি সযত্নে জীবাণুমুক্ত করে ঘরে ঢােকা অত্যন্ত জরুরি। চতুর্থত, বহু জনসমাগম-এর স্থান এড়িয়ে যাওয়া, বাইরে গিয়ে একজন থেকে আরেক জনের দূরত্ব বজায় রাখা, হাসপাতালে ও নার্সিং হােমে গেলে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শ এড়িয়ে থাকা অত্যন্ত প্রয়ােজন। পঞ্চমত, হােটেল, রেস্তোরায় গিয়ে খাওয়ার সময়, কিম্বা অফিসে বা কার্যালয়ে গিয়ে জল খাওয়া বা আহার করার সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর দেওয়া দরকার। ষষ্ঠত, নিজের চারদিকের পরিবেশ, আবাসস্থল জীবাণুমুক্ত রাখা, যাঁরা মাস্ক ব্যবহার করেন না, তাদের বােঝানাে দরকার নিজের নাক কেটে তিনি যেন অপরের যাত্রাভঙ্গ না করেন। কারণ সামাজিক সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে নিজেকে যেমন সচেতন হতে হবে অপরকেও সচেতন করতে সচেষ্ট হতে হবে। সপ্তমত, যে ব্যক্তির জ্বর, সর্দি, কাশি ও হাঁচি হচ্ছে তার থেকে ন্যূনতম ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যত্রতত্র থুতু ফেলা যাবে না, মাস্ক মুখে না দিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলা যাবে না, খালি হাত দিয়ে হাঁচি কাশি ঢাকা যাবে না, প্রতিবেশি বা স্বজনের মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে সাথে সাথে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা অ্যাপ-এ সংবাদ দিতে হবে ও আক্রান্ত ব্যক্তি ও ব্যক্তির সঙ্গে থাকা সমস্ত মানুষদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে অন্তত চোদ্দ দিন। সন্দেহ হলে পরীক্ষা করা ও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অষ্টমত, ভাইরাসে আক্রান্ত রােগীর সঙ্গে যুক্ত যারা রয়েছেন তাদের চরম সাবধানতা গ্রহণ করতে হবে নিজের ও সমাজের স্বার্থে। সর্বোপরি যে কোন অতিমারী প্রতিরােধ সম্ভব সামগ্রিক সচেতনতার মাধ্যমে এবং জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সম্যক অবহিত থেকে।
পরিসংখ্যান ও টীকা: ইতিমধ্যে (৩০/১০/২০২০) ভারতে প্রায় একাশি লক্ষ ও পশ্চিমবঙ্গে ৩.৭০ লক্ষ আক্রান্ত হয়েছে এই রােগে এবং ভারতে প্রায় এক লক্ষ বাইশ হাজার মানুষের ও পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সাত হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৯৪ লক্ষ)র পরেই ভারত (৮১ লক্ষ)। তবে মৃত্যুর হারে ভারত তৃতীয় (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২.৩৬ লক্ষ, ব্রাজিল ১.৫৯ লক্ষ ও ভারত ১.২২ লক্ষ)। বসন্ত রােগ যেমন টীকা প্রয়ােগ করে প্রতিরােধ করা সম্ভব হয়েছে তেমনি করােনা ভাইরাসও টীকা (vaccine) প্রয়ােগ করে প্রতিরােধ করা সম্ভব। ইতিমধ্যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়া ভ্যাকসিন-এর বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে, ভারতের বিজ্ঞানীরাও পিছিয়ে নেই। আশা করব শীঘ্র টীকা মানবশরীরে প্রয়ােগ করে তার সুফল পাওয়া যাবে।
উপসংহার: পশ্চিমবঙ্গে করােনা পরিস্থিতি ভৌগােলিক অবস্থান অনুযায়ী অন্য রাজ্য অপেক্ষা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামাে তৈরি করে, উপযুক্ত পরিচালন ব্যবস্থার মাধ্যমে, টেস্টের সংখ্যা বাড়িয়ে, সুদূরপ্রসারী প্রচার করে, লকডাউন এর সুফল গ্রহণ করে ও সর্বোপরি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশকর্মীদের সেবামূলক মানসিকতায় পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষ এই ভাইরাসকে প্রতিহত করতে যে অনেকটা সক্ষম হয়েছে, তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না।
- স্বামী বিবেকানন্দ রচনা | Swami Vivekananda Rachana
- জি এস টি বিল রচনা l GST Bill রচনা
- Safe Drive Save Life in Bengali | সেভ ড্রাইভ সেভ লাইফ প্রতিবেদন রচনা
- কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা
- বিকল্প শক্তি ও সৌরশক্তি
- সবুজ সাথী প্রকল্প বাংলা রচনা | সবুজ সাথী প্রকল্প ও উন্নয়নের দিশা
- রাজ্যের নাম বদল
- ১২৫ তম জন্মবর্ষে বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু
- ভারতীয় মেয়েদের খেলাধুলায় অবদান
- বিশ্বকাপ ফুটবল 2018 রচনা | বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ প্রবন্ধ রচনা
- স্বামী বিবেকানন্দের চিকাগাে বক্তৃতার একশ পঁচিশ বছর
- সার্ধ জন্মশতবর্ষে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী
- জন্ম শতবর্ষে পদাতিক কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায়
- স্মরণে মননে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
- জন্ম শতবর্ষে কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলােপ : সমস্যা ও সম্ভাবনা
- তিন তালাক বিল ও নারীর ক্ষমতায়ন
- ১৭৫ তম জন্মবর্ষে নট নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘােষ
- জলসংরক্ষণ ও সমস্যা ও সম্ভাবনা
- সাম্প্রতিক কৃষি বিল ২০২০ প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
QNA
- করোনা ভাইরাস রচনা
- করোনা প্রবন্ধ রচনা
- করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা
- করোনা ভাইরাস অনুচ্ছেদ রচনা বাংলা
- করোনা ভাইরাস রচনার উপসংহার
- করোনা ভাইরাসের বিষয়ে রচনা
- করোনা ভাইরাস সম্পর্কে রচনা
- অতি সাম্প্রতিক বিষয়