উত্তম স্মৃতির শর্তাবলি উল্লেখ করে। স্মৃতির প্রশিক্ষণ ও শিখনের সহজ উপায় সম্পর্কে লেখাে। (3+5)

উত্তম স্মৃতির শর্তাবলি উল্লেখ করে। স্মৃতির প্রশিক্ষণ ও শিখনের সহজ উপায় সম্পর্কে লেখাে। (3+5)

উত্তম স্মৃতির শর্তাবলি

দীর্ঘ সময়ের জন্য ও নিখুঁতভাবে মনে রাখার কৌশলই হল উত্তম স্মৃতির শর্ত। স্মৃতির চারটি স্তর আছে অভিজ্ঞতা অর্জন, সংরক্ষণ বা ধারণ, পুনরুদ্রেক এবং প্রত্যভিজ্ঞা। এই চারটি স্তরের উৎকর্ষের ওপরে স্মৃতি উত্তম বা উৎকৃষ্ট হয়ে ওঠা নির্ভর করে। এর জন্য প্রয়ােজন হল—

1.) অভিজ্ঞতা অর্জনে উৎকৰ্ম: আগ্রহ সহকারে পাঠ্যবস্তুর অর্থ। বুঝে শিখতে হবে। বিষয়বস্তুর দৈর্ঘ্য অনুযায়ী আংশিক বা সামগ্রিকভাবে শিখতে হবে। অতিশিখন (over learning) উত্তম স্মৃতির সহায়ক।

2.) উত্তম সংরক্ষণ: উত্তম সংরক্ষণের জন্য প্রথমেই প্রয়ােজন হল উত্তম শিখন। এ ছাড়াও প্রয়ােজন হল উত্তম মানসিক স্বাস্থ্য, প্রাক্ষোভিক সাম্যতা, মাঝে মাঝে পুনরাবৃত্তি, স্মৃতিসহায়ক কৌশল ব্যবহার ইত্যাদি।

3.) সঠিক পুনরুদ্রেক ও প্রত্যভিজ্ঞা: উপযুক্ত সময়ে ও সঠিকভাবে পুনরুদ্রেক এবং প্রত্যভিজ্ঞার জন্য উত্তম শিখন এবং উত্তম সংরক্ষণের প্রয়ােজন হয়।

স্মৃতির প্রশিক্ষণ ও শিখনের সহজ উপায়

অনুশীলনের মাধ্যমে বা প্রশিক্ষণের দ্বারা স্মৃতিশক্তি বাড়ানাে যায় কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে বহু মনােবিদ মন্তব্য করেছেন যে, অনুশীলনের মাধ্যমে বা প্রশিক্ষণের সাহায্যে স্মৃতিশক্তি বাড়ানাে যায় না। স্মৃতিশক্তি বা স্মরণ ক্রিয়া একটি মানসিক বৃত্তি বা ধীশক্তি। তবে স্মরণ ক্রিয়ার কতকগুলি উপাদান রয়েছে, যেমন—শিখন, সংরক্ষণ, পুনরুদ্রেক, প্রত্যভিজ্ঞা, স্থানকাল নিদের্শ ইত্যাদি। সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে এইসব উপাদানের কাজকে ত্বরান্বিত করা যায়। এখানে এ বিষয়ে আলােচনা করা হল-

1.) আবৃত্তি পদ্ধতি: কোনাে বিষয় মুখস্থ করার সময় নীরবে পড়ার চেয়ে আবৃত্তি করে পাঠ করা অনেক ভালাে।

2.) সামগ্রিক বনাম আংশিক পদ্ধতি: ছােটো একটি কবিতা মখস্থ করার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে পড়ার চেয়ে সামগ্রিকভাবে পাঠ করাই ভালাে।

3.) বিরতি পদ্ধতি: কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু মখস্থ ক, সময় মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে পঠনপাঠন করলে, শেখার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং তা স্থায়ীও হয়।

4.) মিশ্র পদ্ধতি : খুব বড়াে কোনাে বিষয়বস্তু শেখার ক্ষেত্রে মিশ্র পদ্ধতি অধিক কার্যকরী হয়।

5.) অর্থ অনুধাবন: কোনাে বিষয়বস্তু শেখার সময় অর্থ বুঝে শেখার চেষ্টা করলে তা দ্রুত মুখস্থ হয়। অর্থ না বুঝে পাঠ করলে মুখস্থ হতে অনেক বেশি সময় লাগে।

6.) রুটিন পদ্ধতি: কোনাে বিষয়বস্তু শেখার সময় একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী পাঠ-অভ্যাস করলে স্মৃতির প্রসার বৃদ্ধি পায়।

7.) প্রসঙ্গ বা পরিবেশ: যে নির্দিষ্ট পরিবেশে বা প্রসঙ্গে বিষয়বস্তুটি শেখা হয়েছিল, তা স্মরণ করতে পারলে বিষয়বস্তুও সহজে স্মৃতিতে আসে।

8.) সংগঠন: কোনাে বিষয়বস্তু পাঠ করার পর, পাঠের অংশগুলিকে নির্দিষ্ট রীতিতে সাজিয়ে নিয়ে আয়ত্ত করার চেষ্টা করলে, তা দ্রুত স্মৃতিতে প্রবেশ করে। স্মরণ করার সময় বিষয়গুলি সহজে মনে আসে।

9.) সুর ও ছন্দ: ছন্দ এবং সুর পঠনীয় বিষয়বস্তুকে চিত্তাকর্ষক করে তােলে। ছন্দ এবং সুরের মাধ্যমে পাঠ করলে তা খুব সহজে মুখস্থ হয়, প্রয়ােজনে মনে করাও যায়। এই পদ্ধতি কবিতা, নামতা প্রভৃতি স্মরণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

10.) নিদ্ৰাপূর্ব পাঠ: ঘুমােনাের আগে কোনাে বিষয়বস্তু পাঠ করে মুখস্থ করলে তা সহজে স্মৃতি থেকে বিলীন হয় না। কারণ ঘুমােনাের ফলে স্মৃতির চিহ্নগুলাে বাধাগ্রস্ত হয় না ফলে পরবর্তী দিনে সেই পাঠ সহজে মনে করা যায়।

11.) গভীর মনোযোগ: স্মরণশক্তি বাড়ানাের ক্ষেত্রে গভীর মনোেযােগ একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে কাজ করে। গভীর মনােযােগ সহকারে কোনাে বিষয় পাঠ করে মুখস্থ করলে তা সহজেই স্মরণ করা যায়।

12.) রবিনসনের নিয়ম অনুসরণ: কোনাে বস্তু মুখস্থ করার ক্ষেত্রে রবিনসন একটি নিয়মের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি হল Survey-Q-3R পদ্ধতি। এক্ষেত্রে Survey হল পর্যবেক্ষণ করা, Q-এর অর্থ হল Question বা প্রশ্ন করা এবং 3R হল Read (পড়া), Recite (আবৃত্তি করা) এবং Review (পর্যালােচনা করা)। অর্থাৎ, কোনাে বিষয়বস্তু প্রথমে পর্যবেক্ষণ করে নিয়ে শিক্ষার্থী যেন সেই বিষয়ে নিজে নিজে প্রশ্ন করে এবং সেই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজে। এ ছাড়া আবৃত্তির মাধ্যমে পড়ার পর তা পুনরায় স্মরণ করার চেষ্টা করে, তাহলে সহজেই। বিষয়বস্তুকে আয়ত্ত করতে পারে এবং প্রয়ােজনমতাে স্মরণ করতে পারে।


[su_posts template=”templates/teaser-loop.php” posts_per_page=”5″ tax_term=”559″ order=”desc”]